বিয়ের মরশুম মানেই হনিমুনের (Honeymoon) জন্য ডেস্টিনেশন (Destination) বাছাই শুরু। একটা সময় ছিল যখন বাঙালির কাছে মধুচন্দ্রিমা মানেই ছিল ‘দী-পু-দা’। মানে দিঘা, পুরি, দার্জিলিং। আর খুব বেশি হলে সিমলা, সিকিম, কাশ্মীর, নৈনিতাল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে হনিমুন ডেস্টিনেশনগুলো। মুন্নার, গোয়া, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জও যুক্ত হয়েছে হানিমুন হটস্পট হিসেবে। কিন্তু এখন সীমানা ছাড়িয়ে হানিমুনের জন্য বিদেশে পারি দিচ্ছেন বাঙালি দম্পতিরা। আর এই আন্তর্জাতিক হনিমুন ডেস্টিনেশনের তালিকায় রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, মলদ্বীপ, থাইল্যান্ড, ব্যাংককের মতো জায়গাগুলো। মধুচন্দ্রিমার মাধ্যমে একে-অপরের সঙ্গে কিছুটা সময় একান্তে কাটানো যায়। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে সম্পর্কের সৌন্দর্যতাও বৃদ্ধি পায়। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপটিকে বলা হয় ‘পৃথিবীর অন্তিম স্বর্গোদ্যান’ বা ‘দ্য লাস্ট প্যারাডাইস অন আর্থ’।
ইন্দোনেশিয়া হল এমনই একটি পর্যটক কেন্দ্র যা কম খরচের মধ্যে ঘুরে নেওয়া যায়। ইন্দোনেশিয়ার টাকা মূল্য ভারতের টাকায় কম। ভারতের ১ টাকা ইন্দোনেশিয়ার ১৯০ রুপির সমান। সুতরাং, ভারতীয় মূল্যে বাজেট যদি আপনার ১ লক্ষ টাকার কাছাকাছি হয়, তাহলে অনায়াসে আপনি বালি ঘুরে আসতেই পারেন। বালির এই হানিমুন ডেস্টিনেশনটি তুলনামূলক সস্তা।
আরও পড়ুন: Kriti Sanon | কৃতি এবার প্রযোজক
আপনি চাইলে বেড়ানো শুরু করতেই পারেন উবুদ থেকে। তারপর সোজা চলে যান উলুওয়াতু, নুসা পেনিদাতে। মধুচন্দ্রিমার জন্য এই জায়গাগুলো সেরা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনও তুলনা হয় না। যা কিনা চখে না দেখলে, ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। শুধু হানিমুনই নয়, ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের স্থান হিসেবেও এই উলুওয়াতু বেশ জনপ্রিয়। এখানে গেলে অবশ্যই এখানকার বিখ্যাত মন্দির দর্শন করতে ভুলবেন না। এখানকার বিখ্যাত পাডাং পাডাং বিচে শনিবার করে নাইট পার্টির আয়োজন করা হয়। এই পার্টি কিন্তু ভুলেও একদম মিস করবেন না। এছাড়াও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা একাধিক মন্দির, বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, চকোলেট কারখানা এবং শাড়ির বাজার রয়েছে। হাতে বেশি সময় থাকলে ঢুঁ মেরে আসতেই পারেন।
উবুদ
বালি দ্বীপের কাছেই অবস্থিত উবুদ। ডেনপাসার বিমানবন্দর থেকে প্রায় মাত্র ৪৫ মিনিট। পাহাড়ের নিচে বাগান ঘেরা উপত্যকা। এমনি দৃশ্য চোখে পড়বে বালির সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম ‘উবুদে’ গেলে। এটা মধুচন্দ্রীমার জন্য বেশ জনপ্রিয় একটি জায়গা। এখানকার সব রিসর্টগুলো সবুজ গাছপালার মধ্যে তৈরি। অর্থাৎ এখানে আপনি প্রকৃতিকে হাতে ছুঁয়ে, প্রিয় মানুষের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। ‘সিমিয়ান’ দেখার জন্য চাইলে আপনি যেতে পারেন মাঙ্কি ফরেস্টে। অথবা স্থানীয় শিল্পের সঙ্গে পরিচিত হতে চাইলে যেতে পারে আগুং রাই মিউজিয়ামেও। পাশাপাশি, সন্ধ্যে নামলে স্থানীয় মন্দিরগুলোতে দর্শনার্থীদের জন্য শুরু হয়ে যায় লেগং ব্যালে বা বন্য কেকাক ফায়ার নাচ।
সুলুবান সৈকত
প্রকৃতির অপার বিস্ময় এই সুলুবান সৈকতে আছে রোমাঞ্চকর গুহা। যা যে কোন স্কুবা ডাইভারকে নিমেষেই চমকে দিতে পারে। সুলুবান সৈকত উলুওয়াতু বালির একটি দর্শনীয় সৈকত। ব্লু পয়েন্ট বিচ এবং পান্তাই সুলুবান বালি নামে পরিচিত। এই সৈকত কাপলদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এই সৈকতে ছবিও ওঠে দারুণ দারুণ। বলা যায় ‘পিকচার পারফেক্ট’। ঢেউগুলোকে দেখে মনে হবে যেন তালে তালে এসে আপনাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।
উলুওয়াতু সৈকত
উলুওয়াতু সমুদ্র সৈকত এটি বালির সেরা সৈকত। উলুওয়াতুর মন্দিরটিও বেশ জনপ্রিয় স্থানীয় এবং পর্যটকদের মধ্যে। উলুবাটুর মন্দির দেখার জন্য বেশিরভাগ মানুষ সারা বিশ্বে আসে। এটি বালিতে দক্ষিণে অবস্থিত। আপনি যদি বালিতে ঘুরতে যান এবং এই বিচে যদি না যান, তাহলে আপনার বালি যাওয়াই বৃথা বলা যায়। এটি একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত একটি ছোট শহর। এছাড়াও যেখানে রয়েছে সমুদ্রমুখী বার, রেস্তোরাঁ সবই।
নুসা পেনিদা
এশিয়া মহাদেশের একেবারে দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত বালির এই ছোট্ট উপদ্বীপ নুসা পেনিদা। এখনো এটি বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের খুব বেশি নজরে আসেনি বলেই এই দ্বীপটিতে গেলে দেখা পাবেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের সবচেয়ে অকৃত্তিম রূপটির। এ ছাড়া কেলিংটন বিচ, এঞ্জেলা বিলাবং, ডায়মন্ড বিচ, ব্রোকেন বিচ-এর মতো জায়গাগুলো ইন্সটাগ্রাম উপযোগী। সুন্দর সব ছবি তোলার জন্য হতে পারে আদর্শ জায়গা। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা ক্রিসটাল বে-সহ পুরো নুসা পেনিদায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ডাইভিং স্পটগুলোতেও চাইলে ঘুরে আসতে পারেন।
মুন্ডুক
অতুলনীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য আর শ্বাসরুদ্ধকর সুন্দর সব জলপ্রপাত মুন্ডুককে অতুলনীয় করে তুলেছে। বালির অন্যতম বিখ্যাত মন্দির পুরা উলুন দানু ব্রাটান। দুর্দান্ত সব জলপ্রপাত যেমন, বানিওমালা জোড়া জলপ্রপাত এবং মুন্ডুক জলপ্রপাত জায়গাটিকে দর্শণার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রে রেখেছে। এ ছাড়া বালির সেরা কফিগুলোর কিছু এখানেই উৎপাদিত হয়। ঘুরতে ফিরতে তাই অসংখ্য কফি খামার চোখে পড়ে এখানে।