কলকাতা: মঙ্গলবারের শুনানিতে কলকাতা টিভির (Kolkata TV) সম্পাদক কৌস্তুভ রায়ের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী ওয়াই জে দস্তুর, শ্যামল ঘোষ, সঞ্জয় দাশগুপ্ত, শুভঙ্কর নাগ, জয়দীপ বিশ্বাস এবং মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়। শুনানিতে আইনজীবী দস্তুর বলেন, কলকাতা টিভি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল। এই চ্যানেল কেন্দ্রের সমালোচনা করে তাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিতে ইডি (ED) আক্রমণ। প্রথমে কোম্পানিটির নাম ছিল আরপি ইনফোসিসটেম (R P Techvision)। পরে তা আরপি টেকভিশন হয়। বিচারক আইনজীবী দস্তুরকে জিজ্ঞাসা করেন, সে সময় আর পি টেকভিশনের কাজ কী ছিল?
উত্তরে দস্তুর বলেন, প্রোডাকশন এবং ছোট ছোট সিরিয়াল। শুরুতে এই সংস্থা আদালত নিযুক্ত অডিটরের অধীনে ছিল, ২০১৬ তে কোম্পানি কেনে আরপি টেক ভিশন । শুরুতে ট্যাম রিপোর্ট পরবর্তীতে বার্ক রিপোর্ট মেনেই চলে এই সংস্থা। পিনকন থেকে প্রথম যখন বিজ্ঞাপন আসে তখন পিনকন চিটফান্ড হিসেব ঘোষিত ছিল না। পিনকনের ঘোষিত ৩৩ কোটি টাকা বিজ্ঞাপনের মধ্যে কলকাতা টিভি পেয়েছে মাত্র ৩ কোটি।
শুনানিতে ইডির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন কৌস্তুভ রায়ের আইনজীবী। তিনি বলেন, সাংসদ সঞ্জয় রাউথ ১০১ দিন জেল হেফাজতে ছিলেন। তাঁর মুক্তির সময় আদালত জানিয়েছিল সেই গ্রেফতারি অকারণ এবং বেআইনি। সেই প্রসঙ্গ টেনে ইডির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেফতারির অভিযোগ আনলেন আইনজীবী দস্তুর। এরই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন মেহুল চোক্সি, নীরব মোদি, বিজয় মাল্য, যারা কোটি কোটি টাকা তছরুপ করেছ তাদের বিরুদ্ধে ইডি কী পদক্ষেপ করতে পেরছে? কলকাতা টিভির ক্ষেত্রে কোর্টের কাছে মিথ্যে বয়ান দিচ্ছে ইডি।
শুধু তাই নয় আইনজীবী দস্তুর ইডির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, ইডি ও আয়কর দফতর ২০২২ সালে হানা দিয়ে সব নথি বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে গেছে। এরই সঙ্গে আইনজীবী দস্তুর বিচারককে বলেন, আপনার অর্ডারে উল্লেখ রয়েছে যে পিনকনের কর্ণধার মনোরঞ্জন রায়কে আমার সঙ্গে বসানো হবে। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। প্রতিদিন ইডি একটি করে মিথ্যে আবেদন করছে।
এরই সঙ্গে দস্তুর জানান, ২০১৭ থেকে পিনকনের কোনও অডিট হয়নি। পিনকন চিটফান্ড জানার পর থেকে সমস্ত লেনদেন বন্ধ করেছে কলকাতা টিভি। কলকাতা টিভি নিজের যুক্তির পক্ষে সিডি ও ডিভিডি দিয়েছে। ট্যাম ও বার্ক রিপোর্টও জমা দিয়েছে। অ্যাকাউন্টের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছে, বিশ্লেষণ করেছে। জিএসটি বিলও আপলোড করা হয়েছে। শুধু তাই নয় শুনানিতে কৌস্তুভ রায়ের আইনজীবী জানান ইতিমধ্যে কলকাতা টিভি মনোরঞ্জনের ২১ লাখ টাকা সুদ সহ ফেরৎ দিয়েছে। ইডি বলছে ২.০৪ কোটি টাকার কথা। কলকাতা টিভি বলছে তারা নিয়েচে ৭২ লাখ টাকা। বাকি ১.৩২ কোটি টাকার ভাউচার দেখাক ইডি। যদি ক্যাশ টাকাতে লেনদেন হয়ে থাকে তাহলেও তার নির্দিষ্ট তথ্য থাকবে। এই লেনদেন নিয়ে মিথ্যে বলছে ইডি। কালকাজির মামলায় সমস্ত টাকা শোধ করা হয়েছে কলকাতা টিভির তরফে।
এদিন আদালতে বিচারকের উদ্দেশে জানান আইনজীবী দস্তুর। কৌস্তুভ রায়কে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে ৫০ দিন আটকে রাখা হয়েছে। ২ কোটি টাকার ওপর বাকি টাকার কন্সিডার করা হচ্ছে না। ইডি আগেও কৌস্তুভ রায়ের বিরুদ্ধে প্রভাবশালী তকমা দিয়েছে। ইডির দাবি কৌস্তুভ রায় বেল পেলে তথ্য বিকৃত করতে পারেন। এদিন সেই অভিযোগের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন আইনজীবী দস্তুর। তিনি বলেন, সব নথি ইডির কাছে। তাহলে কৌস্তুভ রায় কীভাবে নথি বিকৃত করবেন? বিভিন্ন সময়ে কৌস্তুভ রায় মনরঞ্জন রায়ের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।তার নথি পর্যন্ত রয়েছে।
এর উত্তরে ইডির আইনজীবী ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বেল আবেদনে মনোরঞ্জন রায়ের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে কৌস্তুভ রায়ের তরফে। এটিও আর্থিক দুর্নীতির মধ্যে পড়ে। সেই নথির ইনভয়েস ডেট নিয়ে ইডির দ্বিমত রয়েছে।
এরপর কৌস্তুভ রায়ের আইনজীবী জানান, ২০১৭ সালের আগে পিনকন চিটফান্ড ছিল না। তাহলে কীকরে এটি পিএমএলএ হয়।
এ প্রসঙ্গে দস্তুর আরও জানান, গ্রাফিক্স ইন সে সময় কলকাতা টিভি অডিট করেছিল। বিচারক দস্তুরের বক্তব্যের নিরিখে জিজ্ঞাসা করেন সেই অডিট কি কোনও সরকারি অডিটর করেছিলেন?
উত্তরে দস্তুর জানান, হ্যাঁ। এরই সঙ্গে দস্তুর আদালতকে জানান, কৌস্তুভ রায়কে এখন পর্যন্ত ৫০ দিন ইডি নিজের হেফাজতে রেখেছে। তাহলে ইডি কেন ১.০৩ কোটি টাকার নথি আদালতকে দেখাতে পারছে না? ইডি রিমান্ডের গ্রাউন্ড একটি সম্পত্তির চিহ্নিতকরন। কৌস্তুভ রায়ের লেজার গ্রহণ করছে না পিনকন। তাহলে আগে আটটি ও ২৫ টি বিল গ্রহণযোগ্য বলে মনোরঞ্জন স্বীকার করেছেন কিসের ভিত্তিতে? অর্ডারে মনোরঞ্জন রায় বলছে ৮০০ কোটি টাকা বিভিন্ন কোম্পানিতে স্থানান্তর হয়েছে, সেখানে নেই কৌস্তুভ রায়ের নাম। অথচ আজকে ইডি বলছে কৌস্তুভ রায়ের হেফাজত প্রয়োজন। সমস্ত মামলা দাঁড়িয়ে আছে নথির ওপর। নথি নেই ইডির কাছে।
কৌস্তুভ রায়ের পক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হলে ইডির আইনজীবী জানান, কৌস্তুভ রায় জামিন পেলে নতুন নথি তৈরি করতে পারেন। উনি যদি জানতেন যে পিনকন চিটফান্ড, তাহলে ২০১৭ সালের পর উনি মানিসুট করলেন না কেন? এছাড়াও মনোঞ্জনের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে অনেক তথ্য রয়েছে। কৌস্তুভ রায় প্রভাবশালী তাই তার জামিনের বিরোধিতা করে জেল হেফাজতের আবেদন করছি। উভয়পক্ষের সওয়াল শুনে রায় দেন বিচারক। কৌস্তুভ রায়কে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।