বেঙ্গালুরু: নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহা গেরোয় পড়েছে কর্নাটকের নবনির্বাচিত কংগ্রেস সরকার। গরিবদের বিনি পয়সার চাল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখন চাল সংগ্রহে বিড়ম্বনায় পড়েছে সিদ্ধারামাইয়ার সরকার। চাল জোগাড় করতে না পেরে নগদ নারায়ণে প্রতিশ্রুতি রক্ষার পথে হাঁটতে চলেছে তারা। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া বৃহস্পতিবার বিধান সৌধের সামনে সাংবাদিকদের একথা জানান।
অন্নভাগ্য যোজনায় রাজ্যের গরিব মানুষকে অতিরিক্ত ৫ কেজি করে চাল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু, সেই পরিমাণ চাল সংগ্রহ করতে না পারায় কেজিপ্রতি ৩৪ টাকা করে নগদে পুষিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। সিদ্দারামাইয়া বলেন, ৫ কেজি চালের পরিবর্তে ১৭০ টাকা করে সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। যতদিন না সরকার চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছবে, ততদিন এই ব্যবস্থা চলবে। তিনি আরও জানান, আমরা ভোটারদের দেওয়া গ্যারান্টি থেকে পিছু হটতে চাই না। তাই চাল সংগ্রহের ঘাটতি পূরণে নগদ টাকায় গ্রাহকদের পুষিয়ে দেওয়ার কথা মন্ত্রিসভায় গৃহীত হয়েছে।
আরও পড়ুন: Panchayat Election 2023 | তৃণমূল প্রার্থীদের দেয়াল লিখন ফুটিয়ে তুলছে বিজেপি প্রার্থী
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের বিজেপি নেতাদের উচিত কেন্দ্রকে চাল সরবরাহ করার কথা বলতে। আমি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং খাদ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি। কেন্দ্রের চাল সরবরাহকারী সংস্থাগুলি হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন আমরা খোলা বাজার থেকে চাল কেনার জন্য টেন্ডার ডাকছি।
পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, হাতে মারতে না পেরে, ভাতে মারার চেষ্টা। কর্নাটকে ভোটে কংগ্রেসকে কাবু করতে না পেরে, সিদ্দারামাইয়া সরকারকে চাল বন্ধ করে জনসমক্ষে অপদস্থ করার ‘চাল’ এটা বিজেপির। যার ফলে ‘অন্নভাগ্য’ যোজনার নির্বাচনী সংকল্প নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের কাছ থেকে অন্ন-বঞ্চিত হয়ে বিজেপি-বিরোধী তেলঙ্গানা সরকারের কাছে হাত পাতেন সিদ্দারামাইয়া। কিন্তু, অন্নভাগ্যের ভাগ্য বিরূপ। তেলঙ্গানা সরকারও জানিয়ে দেয়, তাদের ভাণ্ডারে চাল কম। তারা দিতে পারবে না। আর তাতেই আগামী ১ জুলাই থেকে রাজ্যের দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষকে বিনা পয়সায় চাল দেওয়ার প্রকল্প ‘অন্নভাগ্য’র ভবিষ্যৎ অথই জলে পড়ে।
তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে কথা বলেন সিদ্দারামাইয়া। তারপরেই সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কেসিআর জানিয়েছেন তাঁদের কাছে চাল নেই। কেসিআর ছাড়াও সিদ্দারামাইয়া কংগ্রেস শাসিত ছত্তিশগড়ের কাছেও চাল চেয়েছেন। ছত্তিশগড় সরকার দেড় লক্ষ মেট্রিক টন চাল দিতে রাজি হলেও তার দাম খুব বেশি। এছাড়াও পরিবহণ খরচ আলাদা। ফলে সেটা খুব একটা লাভজনক হবে না কর্নাটকের পক্ষে। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলতে মুখ্যসচিব বন্দিতা শর্মাকে দায়িত্ব দেন।
ভোট প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষকে মাথাপিছু ১০ কেজি চাল দেবে বলেছিল কংগ্রেস। তার জন্য সরকারের প্রয়োজন ৪.৪৫ লক্ষ মেট্রিক টন চাল। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় খাদ্যসুরক্ষা আইনে কর্নাটক পায় ২.১৭ লক্ষ মেট্রিক টন চাল। অতিরিক্ত ৫ কেজি করে চাল দিতে সরকারকে জোগাড় করতে হবে ২.২৮ লক্ষ মেট্রিক টন। সিদ্দারামাইয়ার অভিযোগ, মোদি সরকার অন্নভাগ্য যোজনাকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। তাঁর দাবি, ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া অতিরিক্ত এই চাল দিতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু, পরদিনই কেন্দ্রীয় সরকার এফসিআইকে নির্দেশ দেয় যে, রাজ্যগুলিকে খোলা বাজারে বিক্রির যে প্রকল্প চালু ছিল, তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিদ্দারামাইয়ার অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক আচরণ করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
বিজেপির পক্ষ থেকে অবশ্য সিদ্দারামাইয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলা হয়েছে, প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় মনে ছিল না? কেন্দ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজ্যের মানুষকে কথা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওরা ব্যর্থ হলেই কেন্দ্রের ঘাড়ে দায় চাপায়। এক বছরের মধ্যেই এই রাজ্য দেউলিয়া হয়ে যাবে।