এক যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজাপ্রাপ্ত আসামির চিটফান্ডের ব্যবসা ছিল, সে সব পয়সা নাকি বিজ্ঞাপন দেওয়ার নাম করে কলকাতা টিভিতে পাঠানো হয়েছিল, মানুষের ঘাম রক্তের পয়সা নাকি এইভাবেই এই পথেই ঘোরাফেরা করেছে। মানে পিনকন মালিক মনোরঞ্জন রায় কলকাতা টিভিকে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন, সেই পয়সার কিছু অংশ রেখে আবার তা ফেরত চলে গেছে মনোরঞ্জন রায়ের কাছে। হ্যাঁ, এভাবেই তো বেআইনি টাকা ঘোরে। তো আসুন সেই টাকার হিসেব নেওয়া যাক। ওই মনোরঞ্জন রায়ের হিসেবের খাতা বলছে, উনি তাঁর কোম্পানির বিজ্ঞাপন বাবদ ৩৩ কোটি টাকা খরচ করেছিলেন ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত। ওই হিসেবের খাতা বলছে, মাত্র ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা কলকাতা টিভির কাছে এসেছিল, বাকি টাকা বিভিন্ন চ্যানেল, বিভিন্ন খবরের কাছে গেছে, কত টাকা? ২৯ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা। মানে মোট টাকার ১১ শতাংশ এসেছিল কলকাতা টিভির কাছে, বাকি ৮৯ শতাংশ গেছে বিভিন্ন চ্যানেল আর কাগজের কাছে, তাদেরকে ডাকা হয়েছে? না ডাকা হয়নি, জেলে পোরা হয়েছে সে সব সংবাদমাধ্যমের মাথাদের? এই বিজ্ঞাপনই চলেছে সান্ধ্য কলতলার আসরে। না, তাঁরা এখন অন্য বিজ্ঞাপনে দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু ওই ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকার মামলায় জেলে পোরা হয়েছে আমাদের চ্যানেল সম্পাদক কৌস্তুভ রায়কে।
আম বাঙালির পক্ষে প্রায় ৪ কোটি টাকার তছরুপও হজম করা বড্ড কঠিন, কাজেই স্বাভাবিকভাবেই বাঙালি ক্রুদ্ধ, ক্ষুব্ধ, বিচলিত। কিন্তু সারা ভারতের দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন, মোদি জমানার শুরুতেই বিজয় মালিয়া দেশ ছেড়ে পালালো, কত টাকার ঘাপলা? ৭৫০৫ কোটি টাকা, লন্ডনে আছেন, ক্রিকেট খেলা দেখতে যান। লোকজন জানিয়েছে সকালে রেস্তরাঁয় ফিশ অ্যান্ড চিপস খেতে দেখা যায় ওনাকে, রাতে অভিজাত বার অ্যান্ড রেস্তরাঁয়। এরপর মোদিজির মেহুল ভাই, মেহুল চোকসি, ৭০৮০ কোটি টাকার ঘাপলা, আপাতত আন্টিগুয়ায়, পাইন অ্যাপেল জুস দিয়ে মালেব্যু খাচ্ছেন, পাশে বান্ধবীরা। এরপর যতীন মেহতা, ঘাপলা ৬৫৮০ কোটি টাকার, আপাতত ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিজ দ্বীপপুঞ্জে বিশাল বাংলোবাড়িতে অবসর জীবনযাপন করছেন, খবরে প্রকাশ, কিছুদিন আগে এক বলিউড অভিনেত্রী সেখানে দিন ১৫ হলিডে কাটিয়ে এসেছেন। পরের জন নীরব মোদি, মোদিজির সুপরিচিত, ঘাপলা ৬৪৯৮ কোটি টাকার, আপাতত লন্ডনে, গায়ে ২৩ লক্ষ টাকার জ্যাকেট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নিতিন সন্দসেরা, চেতন সন্দসেরা, দুজনের ঘাপলার পরিমাণ ৫৩৮৩ টাকা, নাইজিরিয়তে আছেন, দিব্য আছেন, তাঁদের টাকা এদেশেও খাটছে বলে খবর। উমেশ পারেখ, কমলেশ পারেখ, নীলেশ পারেখ শ্রী গণেশ জুয়েলারি হাউসের মালিক, ঘাপলা ২৬৭২ কোটি টাকা, তিনজনের দু’জন দুবাই, একজন কেনিয়াতে আছেন, বুঝতেই পারছেন, বহাল তবিয়তে আছেন। ললিত মোদি, আইপিএল খ্যাত এই মোদিজির ঘাপলা ১৭০০ কোটি টাকার, বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ বিদেশমন্ত্রী থাকাকালীন ইনি পাসপোর্ট বার করে বিদেশে চলে যান, তারপর থেকে ইউনাইটেড কিংডমেই থাকেন, বেড়াতে যান মালদ্বীপ, সুইজারল্যান্ড, কে আটকাচ্ছে?
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব ৪৬)
রীতেশ জৈন, ঘাপলা ১৪২১ কোটি টাকার, কোথায় আছে, উইকিপিডিয়াও জানে না, ইডিও জানে না। রাজীভ গয়াল, অলকা গয়াল, সূর্য ফার্মাসিউটিক্যাল-এর ঘাপলার পরিমাণ ৭৭৮ কোটি, এনারাও কোথায় আছেন কেউ জানে না। আশিস জোবানপুত্র, ৭৭০ কোটি টাকার তছরুপ, লুকিয়ে আছেন কোথায়, কেউ জানে না, কিন্তু দেশে নেই এটা সবাই জানে। ইয়েস ব্যাঙ্ক ডিএইচএফএল মামলা, ২২০৩ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ, অভিযুক্ত ইয়েস ব্যাঙ্কের সিইও রানা কাপুরের বিরুদ্ধে, এই মামলায় তিনি জামিন পেয়ে গেছেন, অন্য একটা মামলা ঝুলে আছে, সেটাতে জামিন পেলেই ফ্ল্যামবয়েন্ট রানা কাপুরকে আবার মুম্বইয়ের নৈশ পার্টিতে দেখা যাবে।
আমেরিকার ফিনানশিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্ক, সংক্ষেপে ফিন সেন জানিয়েছে, ঠিক এই মুহূর্তে ভারতের ৪৪টা ব্যাঙ্কের প্রায় ২০০০ লেনদেন সন্দেহজনক, যার পরিমাণ এক বিলিয়ন আমেরিকান ডলার, ৭৯৪৩ কোটি টাকার লেনদেন সন্দেহজনক, আগামী দিনে এরাও ধরা পড়বে, জেল হবে জামিন পাবে বা পালিয়ে যাবে ইউকে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা কেনিয়ায়। এদিকে ৩.৭৮ কোটি টাকার হিসেব মিলছে না বলে আমাদের সম্পাদক আজ ২৭৮ দিন জেলে। আমরা মনে করি কম হলেও এই ৩.৭৮ কোটি টাকা হিসেবের আসল সত্যিটা বের হয়ে আসুক। আমরা মনে করি এক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অঙ্গ হিসেবেই উনি জেলে, এই অন্যায়ের সুবিচার চাইছি, জাস্টিস চাইছি, জাস্টিস ফর কৌস্তুভ রায়, জাস্টিস ফর কলকাতা টিভি।
দেখুন ভিডিও: