কলকাতা: কবি জয় গোস্বামী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে ফেসবুক পোস্ট৷ এবং সেই ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে বিতর্ক গড়াল বিধাননগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম অবধি৷ ওই ফেসবুক পোস্টে একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা বাবদ জয় গোস্বামী কেন সরকারি সাহায্য নিয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়৷ প্রশ্ন তোলা হয়, কেন নবান্ন থেকে ‘পাবলিক মানি’ এভাবে বিল মেটাতে খরচ করা হল৷
আরও পড়ুন: পোশাক নিয়ে ‘নীতিপুলিশি’,’ফুলপ্যান্ট’ পরেই অভিযোগ নিল কসবা থানা
কিছুদিন আগেই কোভিডে আক্রান্ত হন কবি জয় গোস্বামী৷ বেশ কিছুদিন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন৷ তাঁর চিকিৎসার দেখভাল করেছেন অতিমারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডক্টর যোগীরাজ রায়৷ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরেও ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন জয়৷ তাঁকে ফের সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ সেই সময় ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার যাবতীয় দায় নিয়েছিল রাজ্য সরকার৷ চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই ফেসবুকে ট্রোল হতে শুরু করে৷ জয় গোস্বামী তো বটেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দিকে ওই ফেসবুক পোস্ট থেকে আঙুল তোলা হয়৷ কলকাতা টিভি ডিজিটাল ডেস্ক এই নিয়ে জয় গোস্বামীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে৷ জানা যায়, বুধবার জয় গোস্বামীর মেয়ে দেবত্রী গোস্বামীর কাছে একটি মেসেজ ফরোয়ার্ড হয়ে আসে৷ মেসেজটি ছিল ওই ফেসবুক পেজের স্ক্রিনশটের৷ প্রথম দিকে কবির পরিবার এই বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চায়নি৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২২ জুলাই সকাল থেকেই বিষয়টি নিয়ে ঘনঘন ফোন আসতে থাকে৷ হোয়াটসঅ্যাপ আসতে থাকে৷ যাতে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন কবি ও তাঁর পরিবার৷
জয় গোস্বামীর বয়স এখন ৬৭৷ কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর বেশ কিছু শারীরিক অসুবিধা তৈরি হয়েছে তাঁর৷ ফেসবুক এই পোস্ট সংক্রান্ত টানাপড়েনে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন৷ জয়ের মেয়ে দেবত্রী সিদ্ধান্ত নেন বিষয়টি নিয়ে তিনি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন৷
দেবত্রী গোস্বামী জানিয়েছেন, ‘আমার বাবা-মা দু’জনেরই অনেক বয়স হয়েছে৷ এই ঘটনায় দু’জনেই অত্যন্ত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত৷ যেভাবে তাঁদের বিরক্ত করা হচ্ছিল তাতে আমি মেয়ে হিসাবে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি৷ বিধাননগর সাইবার ক্রাইম পুলিশ স্টেশনে আমি মেল পাঠাই৷ পরে সরাসরি গিয়ে অভিযোগ জমা দিয়েছি৷ বলে রাখা ভালো, ফেসবুক পোস্টে যে দাবি করা হয়েছে যে নজরুল অ্যাকাডেমির সভাপতির পদ থেকে জয় গোস্বামী কয়েক লক্ষ টাকা রোজগার করেন তা সম্পূর্ণ ভুল৷ এই পদ একটি অবৈতনিক পদ৷ কোনও সাম্মানিক অর্থ এই পদে থেকে আমার বাবা রোজগার করেন না৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জয় গোস্বামীর আনুগত্য কিনে নিচ্ছেন, এমন কুরুচিকর মন্তব্য এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং কবি জয় গোস্বামী দু’জনের ক্ষেত্রেই অত্যন্ত আপত্তিকর এবং অপমানজনক বলে আমি মনে করি৷’
আরও পড়ুন: ঘুষ নেওয়ার সময়ে হাতেনাতে পাকড়াও সরকারি আধিকারিক
বিধাননগর সাইবার ক্রাইম দেবত্রী গোস্বামীর এই অভিযোগ জমা নিয়েছে৷ ফেসবুক এবং হোয়াটস অ্যাপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বিধাননগর সাইবার ক্রাইম পুলিশের পক্ষ থেকে৷ জয় গোস্বামীর পরিবারের পক্ষ থেকে ওই ফেসবুক পোস্টটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য সাইবার ক্রাইম পুলিশের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে৷ পুলিশের কাছে যে অভিযোগ করা হয়েছে তাতে ফেসবুক ব্যবহারকারী সৌরভ দত্ত এবং সন্দীপ চক্রবর্তী নামে দু’জনের প্রোফাইলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷
কলকাতা টিভির ডিজিটাল টিম জয় গোস্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল৷ তিনি জানিয়েছেন, ‘এ ব্যাপারে আমি দুটো কথা বলতে চাই৷ প্রথম কথা, ওই পোস্টে বলা হয়েছে নজরুল অ্যাকাডেমির সভাপতির পদে থেকে আমি কয়েক লক্ষ টাকা রোজগার করে থাকি৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের যে কোনও আধিকারিকের কাছে জানতে চাইলে এটা স্পষ্ট হবে যে নজরুল অ্যাকাডেমির সভাপতির পদটি সম্পূর্ণ অবৈতনিক৷ দ্বিতীয় কথা, বলা হয়েছে আমার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করে আমার আনুগত্য কিনতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ যাঁরা এটা লিখছেন তাঁরা এর অতীতটা জানেন না৷ মুখ্যমন্ত্রী যখন ক্ষমতায় ছিলেন না যখন কেন্দ্রীয়মন্ত্রীও নন, শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী সেই ২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় থেকে তাঁর প্রতি আমার প্রতক্ষ্য সমর্থন আছে৷ তখন একটি বই লিখেছিলাম আমি ‘শাসকের প্রতি’৷ সেই তখন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্থন জাগ্রত আছে৷ আমি একজন সাধারণ মানুষ৷ আমাকে যখন-তখন অপমান করা যায়৷ কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার আনুগত্য কিনতে চেয়েছেন বলে যেভাবে লেখা হয়েছে তা এরাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে অপমানজনক৷ এর আগেও ২০১২ সালে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে আমি ১২ দিন ভর্তি ছিলাম৷ তখনও রাজ্য সরকার আমার চিকিৎসার দায়ভার নিয়েছিল৷ আমাদের তিনজনের পরিবার৷ এই ঘটনার পর যেভাবে আমার মেয়ে এবং স্ত্রীয়ের কাছে একের পর এক ফোন ও মেসেজ আসছে তাতে আমরা অত্যন্ত বিপন্ন বোধ করছি৷ আমার মেয়েই আমাদের পরিবারের অভিভাবক৷ সেই বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে নিজেই অভিযোগ লিখে থানায় গিয়ে জমা দিয়ে এসেছে৷’