কলকাতা: ‘পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র নেই’ দাবি করে, রাজ্য সরকারকে ফের নজিরবিহীন আক্রমণ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar controversy)। বিধানসভায় বিআর আম্বেদকরের (BR Ambedkar) মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে যে কথাগুলি রাজ্যপাল (Bngal governor) বললেন, তা তাঁর আগের বক্তব্যেরই চর্বিতচর্বণ। রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের সমালোচনা করতেই পারেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে স্থান-কাল নিয়ে। রাজনৈতিক মহলের অভিমত, ‘বিধানসভা চত্বরে, আম্বেদকরের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র হয়ে কথা বলেছেন। যা রাজ্যপালের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত নয়। উনি রাজ্যপালের পদের অমর্যাদা করেছেন (Jagdeep Dhankar vs Biman Banerjee)।’
রাজ্য গণতন্ত্র নেই, সরকারি আধিকারিকরা সংবিধান মেনে কাজ করছেন না, রাজ্যের মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না, পশ্চিমবঙ্গের ভোটে অবাধ হিংসা হয়েছে, ভোট পরবর্তী হিংসা তার প্রমাণ– এমন অনেক অভিযোগ রাজ্যপাল এদি্ন করেছেন। উল্লিখিত তাঁর কোনও অভিযোগই নতুন নয়। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বিজেপি একই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে।
রাজ্যপালের অভিযোগ প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘রাজ্যে গণতন্ত্র নেই। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তিনি ভুল বলেননি। কিন্তু ত্রিপুরায় কি গণতন্ত্র রয়েছে?’ তবে, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রের মতো বলেই মনে করেন সিপিএম নেতা। সুজনের অভিমত, রাজ্যপাল তাঁর পদের অমর্যাদা করেছেন।
আরও পড়ুন: Jagdeep Dhankhar: রাজ্যের অফিসারদের হুমকি রাজ্যপালের
রাজ্যপাল নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রের মতো কথা বলেছেন বলে দাবি করেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বিআর আম্বেদকরকে শ্রদ্ধা জানাতে বিধানসভায় গিয়ে রাজ্যপাল যে ভাবে রাজ্যের নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা করেছেন, তা ‘অসৌজন্যমূলক’ বলেই মনে করেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘রাজ্যপাল এটা ঠিক কাজ করেননি। ওনার কিছু বলার থাকলে, উনি রাজভবনে সাংবাদিকদের ডেকে বৈঠক করতেই পারতেন।’
রাজ্যপাল ও বিধানসভার অধ্যক্ষের মধ্যে বিরোধ নতুন কিছু নয়। জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতি ছাড়াও লোকসভার স্পিকারের কাছে নালিশ করেছেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপাল বিধানসভার কাজে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ করে চলেছেন, বিল পাস না করে আটকে রাখছেন, জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে এমন নালিশও করেছেন অধ্যক্ষ।
এ দিন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে অধ্যক্ষকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যপাল।ধনখড়ের হুঁশিয়ারি, ‘রাজ্যপালকে অন্ধকারে রেখে স্পিকার এর পর কোনও পদক্ষেপ করলে, সংবিধানের মধ্যে থেকে ব্যবস্থা নেব।’ স্পিকার তাঁকে ব্ল্যাকআউট করেছেন বলেও অনুযোগ করেন ধনখড়।
আরও পড়ুন: CAA Bongaon: সিএএ নিয়ে মোদি-শাহকে চিঠি দেবেন ‘বিদ্রোহী’ মতুয়া নেতারা
বক্তব্যের আগাগোড়া রাজ্যপাল হিসেবে তাঁর ক্ষমতার আস্ফালনই দেখা গিয়েছে। শুধু বিধানসভার অধ্যক্ষ নন, সরকারি আধিকারিকদেরও হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, ‘সংবিধানের মধ্যে থেকে কাজ করুন। আগুন নিয়ে খেলবেন না। রাজভবন কী করতে পারে, সরকারি আধিকারিকদের তা জানা নেই।’
এমনকী মুখ্যমন্ত্রীরও সাংবিধানিক কোনও জ্ঞান নেই বলে তিনি দাবি করেন। জগদীপ ধনখড়ের মন্তব্য, ‘মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের কাছে দায়বদ্ধ। তা সত্ত্বেও তিনি উপেক্ষা করেন।’ রাজ্যপালের কোনও প্রশ্নের জবাব রাজ্য সরকার দেয় না। এ প্রসঙ্গে মা ক্যান্টিনের কথাও তোলেন রাজ্যপাল। বলেন, ‘মা ক্যান্টিনে এ পর্যন্ত কত টাকা খরচ হয়েছে, জানতে চেয়েছি। জবাব পাইনি। রাজ্যপাল হিসেবে তা জানার অধিকার কি আমার নেই?’
রাজ্যপালের অনুমোদন ছাড়া ২৫ জন উপাচার্য কী করে নিয়োগ হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জগদীপ ধনখড়। কোনও বিল রাজভবনে পড়ে নেই বলেও তিনি দাবি করেন। অভিযোগ করেন, রাজ্যপাল সম্পর্কে মিথ্যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে। জবাবে, অধ্যক্ষ বলেন, রাজ্যপাল বিল আটকে রেখেছেন বলে যা বলা হয়েছে, তা বর্ণে বর্ণে সত্যি।
রাজ্য-রাজ্যপাল এই সংঘাতের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘রাজ্যপালের আত্মসম্মান জ্ঞান নেই।’ একটা নির্বাচিত সরকার সম্পর্কে রাজ্যপাল কী করে এ ধরনের মন্তব্য করেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সৌগত। রাজ্যপাল দাবি করেন, তিনি যা বলছেন বা করছেন, সংবিধানের মধ্যে থেকেই। এ প্রসঙ্গে সংবিধানের ১৬৩ ধারার উল্লেখ করে সৌগত রায় বলেন, ‘এই রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী, অধ্যক্ষকে অসম্মান করছেন।’
রাজ্যপাল বিতর্কে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া, ‘জগদীপ ধনখড়ের সংবিধান ও আইনি জ্ঞান নিয়ে প্র্শ্ন তোলার জায়গা নেই। উনি দীর্ঘদিন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ছিলেন। উনি যা বলেছেন, সংবিধানের মধ্যে থেকেই।’