এক বাংলা চ্যানেলে কথা বলছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক কমরেড সেলিম। আব্বাস, নওশাদকে ধরেও এক মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় গোহারান হেরেছেন মাত্র দু’ বছর আগে, তারপর থেকেই ওনার মেজাজ সপ্তমেই থাকে, তো সেই কমঃ মহম্মদ সেলিম হঠাৎই সেই চ্যানেলের মালিক নিয়ে কাজিয়াতে নেমে পড়লেন, ক’ বছর আগেই যে চ্যানেলের খাতায় কলমে একজন মালিক ছিলেন ওনার দলেরই এক রাজ্য কমিটির সম্পাদক, তখন চ্যানেল নয় তো, গণশক্তির মেলে মে বিছড়ে হুয়ে ভাই ছিল এই চ্যানেল, কিন্তু তখন সে নিয়ে তো কোনও কথাই বলেননি কমরেড মহম্মদ সেলিম। আজ বলছেন, কারণ সেদিনের সুপবন আর বহিতেছে না। যে দলের রাজ্য বিধানসভায় একজন বিধায়ক নেই, যে দল এককভাবে একটা জেলা পরিষদ দখল করার স্বপ্ন ফুলকপির ঝোল খাওয়ার পরেও দেখে না, সেই দলের রাজ্য সম্পাদকের এই ঔদ্ধত্য সত্যিই দেখার মতো। ওনাদের মেহনতি মানুষের মুখপত্রে মাঝে মধ্যেই আমাদের চ্যানেলের কর্ণধারকে নিয়েও এরকম কথা ছাপা হয়, যদিও ওনার দলের অনেকেই সেই কৌস্তুভ রায়ের কাছ থেকে নির্বাচনের আগে বিভিন্ন সহায়তা চেয়েছেন এবং পেয়েওছেন। সেই কমরেড সেলিম ভোটের আগে বাঁশ আর পতাকার ছবি দিয়ে প্রতিরোধের কথা বললেন, বললেন ২০১৮ আর ২০২৩ এক নয়। মানে তাঁতালেন ওনার রিজার্ভ ফোর্সকে। একই ঔদ্ধত্য দেখলাম অধীর চৌধুরীর বিভিন্ন বক্তৃতায়, সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করব, যে কোনও মূল্যে বহরমপুরের আসন বজায় রাখার জন্য গ্যালারি গরম করলেন মিডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে। আরও বেশি ঔদ্ধত্য নিয়েই কথা বলেন শুভেন্দু অধিকারী, জমানা গেছে মনেও নেই, প্রকাশ্যেই ধমকাচ্ছেন প্রশাসনকে, পুলিশকে। এবং তৃণমূল তো ক্ষমতাতেই আছে, অতএব ক্ষমতার ঔদ্ধত্য সর্বাঙ্গে, ঝরে ঝরে পড়ছে। ফলাফল এখনও পর্যন্ত ৩৭টা লাশ, ৩৭ জনের মৃত্যু। সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, ঔদ্ধত্য বনাম ঔদ্ধত্য।
ক্ষমতার এক ঔদ্ধত্য তো থাকেই, লাল গাড়ি, পুলিশের স্যালুট, প্রশাসনের মোসাহেবদের ভিড়, সব মিলিয়ে এটাই তো সাপের পাঁচ পা দেখায়। কাজেই তোরা লড়ে যা, আমি পুলিশকে দেখে নেব, এমনটা বলা নতুন কিছু নয়, ক্ষমতাতে থেকেও এগুলো না বলাই বরং ব্যতিক্রম। সে দোষে দুষ্ট নয় আজ রাজ্যে যাঁরা ক্ষমতায় আছে সেই দল? নিশ্চিত আছে, ভীষণভাবেই আছে, এই ভরসাতেই তো দরকারই নেই, এমনিতেও জিতে যাবে তৃণমূল, সেই বুথেও গা-জোয়ারি করতে চলে গেছে তৃণমূলের কর্মীরা, গেছে সেখানেও, যেখানে সমানে সমানে টক্কর, গেছে সেখানেও যেখানে তৃণমূল অপেক্ষাকৃত দূর্বল, দরকারে পুলিশ বাঁচাবে এই আশ্বাসও তো এসেছে নেতার কাছ থেকে। তার ফল হাতেনাতে, তাদের অনেকেই আপাতত লাশকাটা ঘরে, কেই কবরে, কেউ শ্মশানে। বিজেপির নেতারা তো বুঝিয়েই ছিল দিল্লি আছে, গোলমাল হলেই কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে, লড়ে যা, লড়েছে ক্যাডারেরা, লাশগুলো তো মিথ্যে নয়। অধীর বুঝিয়েছেন জেলা পরিষদ না পেলে সব যাবে, কিছুই থাকবে না, অতএব জান কবুল, শুনেছেন কর্মীরা, জান হাতে করেই লড়েছেন, হয় জান নিয়েছেন, নয় জান দিয়েছেন, বিকেলে অধীর শহিদকে শ্রদ্ধা জানাতে গেছেন।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | ২০২৪-এ বিজেপির ভরসা এখন কংগ্রেস
আর বাম মানে সিপিএম তো গোড়া থেকেই প্রতিরোধের তত্ত্ব নিয়েই মাঠে নেমেছে, রাজ্য সম্পাদক বাঁশ আর ঝান্ডার ছবি দিয়েই জানিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৮ নয় এটা ২০২৩, বক্তৃতায় বলছেন প্রতিরোধ করুন পালটে যাবে ছবি। সেদিনের তপন সুকুর অনুজ পান্ডের দল রাস্তায় আবার, উজ্জীবিত কমরেডদের একবারও সত্যিটা বলেছেন এই কমরেড মহম্মদ সেলিম যে একটা, একটা জেলা পরিষদও নিজেদের জোরে জেতার ক্ষমতা এখনও নেই। বাস্তব ছবিটার আলোচনা না করে এক স্বপ্ন দেখানো হল, এটাই ঔদ্ধত্য, বিজেপির কোনও নেতা বললেন যে খুব বেশি হলে তিনটে, সেটাও খুব বেশি হলে, না তাঁরাও স্বপ্ন দেখিয়েছেন বাংলা দখলের, প্রকাশ্যেই হুমকি পুলিশ তুলে নিন, এক ঘণ্টায় ছবি বদলে দেব। ফিল্মি ডায়ালগ, এবং ফলাফল সামনে, আহত অসংখ্য, ঘর পুড়েছে, দোকান জ্বলেছে, ব্যালট লুঠ, ব্যালট বাক্স পুকুরে ফেলা, এবং লাশ, নিথর লাশের পরিচিত ছবি দেখল বাংলা, জনজোয়ারে বলা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা তাঁর দলের কর্মীরাই শুনলেন না, অন্য দলের তো শোনার প্রশ্নই নেই। এ যেন এক ধারাবাহিক খুনখারাপির ছবি, নির্বাচন মানে গণতন্ত্র নয়, নির্বাচন মানে উন্নয়ন নয়, নির্বাচন মানে মানুষের উৎসব নয়, নির্বাচন মানেই বোমা, গুলি, কান্না, রক্ত আর লাশ। আমরা মানুষকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কোনও একটা দলও কি আছে যারা এই লাশের সংস্কৃতি, এই বোমাগুলির সংস্কৃতির বাইরে? এমন কোনও রাজনৈতিক দল আছে যারা সত্যি করেই বাংলায় এই হিংসা বন্ধ করতে পারবে? কী উত্তর এল আপনারা শুনুন।
অন্য কোথাও নির্বাচনে এই হিংসার ছবি এখন আর দেখা যায় না, আমাদের এখানে দেখা যায়। আমাদের বাংলার মতো সারা দেশে মানুষকে দলের পরিচয়ে বাঁচতে হয় না, আমাদের মতো সারা দেশের মানুষকে রাজনৈতিক পরিচয়ের বিনিময়েই পেট চালাতে হয় না, এবং সবথেকে বড় কথা কনিষ্ঠতম বিরোধী দল থেকে ক্ষমতাসীন শাসকদলের এই লাগামছাড়া ঔদ্ধত্য আর কোথায় বা দেখা যায়? ঔদ্ধত্য বনাম ঔদ্ধত্যের এই লড়াইয়ের বাই-প্রডাক্ট কিছু নিথর দেহ, কিছু স্বজনহারা মানূষ, চিতার কাঠ আর কবরের মাটি।