মেরা বুথ মজবুত অনুষ্ঠান শোনা ইস্তক আমাদের কাঁথির খোকাবাবু যাকে বলে চেগে গেছেন। বলেছেন, ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচনে এই বাংলায় বিজেপি ৩৬টা আসন পাবে। কী ভাবছেন? এইটুকু বলেই তিনি থেমেছেন? না, তারপর জানিয়েছেন, ৩৬টা আসন জেতার তিন মাসের মধ্যে মমতার সরকারকে ফেলে দেওয়া হবে। আশা করাই যায় আমাদের রাজ্যের বিরোধী দলের নেতা কোনও তরল বা শুকনো নেশার প্রভাবে এসব কথা বলেননি। আশা তো করতেই হবে কারণ আশায় বাঁচে চাষা। কিন্তু আচমকা এমন কথা শুনলে ওই তরল বা শুকনো নেশার কথাই প্রথমে মনে আসবে। রাজনীতিতে ভোকাল টনিক আমরা বহু শুনেছি। সব রাজনৈতিক দলের নেতারাই এমন ভোকাল টনিক দিয়ে থাকেন। গত ২০২১-এর আগে মহম্মদ সেলিম সাহেব চণ্ডীপুরে এক নির্বাচনী জনসভায় বলেছিলেন, মানুষের মুখ দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কং-বাম-আইএসএফ জোট এবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসছে। ২০০৬-এর কথা মনেই আছে, হয় এবার নয় নেভার, তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন, ফলাফল তৃণমূল ৩০, বাম ২৩৫। আমাদের ছোটা মোটাভাই অমিত শাহ তো এই ভোকাল টনিকে ডক্টরেট করে ফেলেছেন, বাংলায় অবকি বার ২০০ পার, পেলেন ৭৭টা। কর্নাটকে ১৫০টা তো পাচ্ছিই, পেলেন ৬৬। দিল্লি, হিমাচল, মহারাষ্ট্র, বহু জায়গাতেই যা বলেছেন তার ধারেকাছেও থাকেননি। কিন্তু আমরা জানি এগুলো বিশুদ্ধ ভোকাল টনিক, ক্যাডারদের, কর্মীদের চাগিয়ে দেওয়া।
কিন্তু শুভেন্দু যা বলেছেন তা ওই ভোকাল টনিক গোত্রে পড়ে না। আজ সেটা নিয়েই আলোচনা। ২০২৪-এ এই বাংলায় বিজেপি কি ৩৬টা আসন পেতে পারে?
আসলে শুভেন্দুর এজেন্ডাটা ব্যক্তিগত এজেন্ডা, ওটা রাজনীতিও নয়। চলছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। উনি এখনও আদালতে লড়ে যাচ্ছেন নির্বাচন যাতে বাতিল করা যায় তার জন্য। কারণ? কারণ উনি জানেন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কী ফলাফল আসতে চলেছে। নিজের নন্দীগ্রামেই সব আসনে প্রার্থী দিতে পারেননি। তৃণমূলই ফিকফিক করে হাসছে শুধু তাই নয়, বিজেপির মধ্যেও এ নিয়ে মশকরা চলছে। হ্যাঁ, এখনও আদি বিজেপির লোকজন শুভেন্দু অ্যান্ড কোম্পানিকে মেনে নিতেই পারেনি। উনি পঞ্চায়েত দখল করে গ্রামের মানুষের পরিষেবা দেওয়ার কথা বলছেন? নিরপেক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত গ্রাম পঞ্চায়েত চালানোর কথা বলছেন? একবারের জন্যও না। উনি লোকসভার কথা বলছেন? তার মানে কি উনি ২০২৪-এ আবার নরেন্দ্র মোদিজির সরকার নিয়ে কথা বলছেন? না। ওনার চোখ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পদের দিকে, যেন তেন প্রকারেণ ওই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নামানোটাই ওনার আপাতত জীবনের লক্ষ্য। যে দিকে তাকিয়েই এই ভরা পঞ্চায়েত নির্বাচনী প্রচারের মধ্যে তিনি ২০২৪-এর ৩৬টা আসনের খোয়াবই কেবল দেখছেন না, সেটা পাওয়ার পরে তিন মাসের মধ্যে এক নির্বাচিত সরকারকে কীভাবে ভেঙে দেওয়া হবে তার কথাও বলছেন। আর যাই হোক, জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূল দল যে খুব গণতান্ত্রিক তা তো নয়। তেমন গণতান্ত্রিক হলে গোটা পূর্ব মেদিনীপুর বা কাঁথি এক পরিবারের হাতে তুলে দিতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? তো সেই হেন তৃণমূলের যে একটিই পোস্ট আছে বাকি সবই যে ল্যাম্পপোস্ট এ নিয়েও কারও কোনও দ্বিমত আছে বলে তো জানা নেই, তো সেই দলে প্রথমে বাবা, তারপর তিন ছেলে রাজনৈতিক কেরিয়ারে যা যা হওয়া যায় তাই হয়েছেন, সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়ক, মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান কোঅপারেটিভ-এর চেয়ারম্যান, সব হয়েছেন ওই নেত্রীর দাক্ষিণ্যে।
আরও পড়ুন: Aajke | বিজেপির বুথ মজবুত?
তারপর তেনার মনে হল আরও কিছু চাই, তিনি যোগাযোগ রাখা শুরু করলেন অমিত শাহের সঙ্গে, একথা আমি বলছি না উনিই বলেছেন মানে শুভেন্দুই বলেছেন। এখন তাঁর লক্ষ্য সেই মুনিকেই খাওয়া, যে মুনি তাঁকে ইঁদুর থেকে বাঘে রূপান্তরিত করেছেন। এসবের মাঝে তিনি রাজনীতির আবহেই কাটিয়েছেন বহু বছর, ২০-২৫ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই তাঁকে বলে দিচ্ছে সামনে বিপদ, আর যাই হোক ২০২৪-এর ফলাফল খুব সুখকর কিছু হবে না। তত তিনি ধৈর্য হারাচ্ছেন। এবং ধৈর্য হল মানুষের সেই মানসিক মানদণ্ড যা হারালে মানুষ মানসিক ভারসাম্য হারায়, সেই ভারসাম্যহীনতার ফল হল এই ২০২৪-এ ৩৬টা আসন এবং তারপরে এক নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়ার খোয়াব। আমরা মানুষকে প্রশ্ন করেছিলাম, ২০২৪-এ বিজেপি ৩৬টা আসন পাবে এবং তার তিনমাসের মধ্যে নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে ভেঙে দেওয়া হবে, শুভেন্দু অধিকারীর এই কথার সঙ্গে আপনারা কতটা একমত? শুনুন মানুষ কী বলছেন।
আমাদের রাজ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনীতির মানুষজনকে আমরা দেখেছি, কংগ্রেসের নেতাদের দেখেছি, বামেদের দেখেছি, এমনকী বিজেপির তপন শিকদার বা বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রীদের কথা বাদই দিলাম, রাহুল সিনহা, দিলীপ ঘোষদের দেখেছি, কিন্তু এমন চরম সুবিধেবাদী ক্ষমতালোভী কোনও নেতাকে আমরা, বাংলার মানুষেরা দেখিনি। এর আগের সমস্ত বিরোধী দলের নেতারা বলতেন আসুক নির্বাচন, গদি থেকে নামিয়ে ছাড়ব, কিন্তু লোকসভায় হারিয়ে বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার মতো অর্বাচীন দাবি এ বাংলায় এর আগে ওঠেনি।