আবার বেশ কিছুদিন পরে বাজারে শোরগোল, দাদা, মহারাজ, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। যতবার এমন খবর ভেসে ওঠে ততবারই একটা কথাই বলার চেষ্টা করেছি যে সৌরভকে অমন আনাড়ি না ভাবলেও চলবে। সৌরভ তাঁর জীবনের একটা কাজও চিন্তাভাবনা না করে করেননি। হুট বলতে ঝুট সিদ্ধান্ত নেওয়া মানুষের দলে সৌরভ কোনওদিনও ছিলেন না, থাকবেনও না। আবেগ নেই সৌরভের, আবেগের বশে সিদ্ধান্ত কি নিতে পারেন না? যদি মহারাজের জীবনীর পাতাগুলো উল্টিয়ে দেখেন, তাহলে বাড়িতে না বলে ডোনা রায়ের সঙ্গে বিয়েটা আর ওই লর্ডসের মাঠে টি-শার্ট খুলে খালি গায়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার দুটো ঘটনাকে বাদ দিলে পুরোটাই অত্যন্ত ক্যালকুলেটিভ জীবন। না, ছকবাজ বলছি না কিন্তু বেশ আঁক কষে ছক কেটে তারপরেই তিনি কিছু করেছেন। তাই তিনি মহারাজ। ভাবুন না দাদার কামব্যাক। মাথা কতটা ঠান্ডা থাকলে ওইভাবে ফিরে আসা যায়। মাথা প্রায় আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, মুখে উত্তেজনা নেই, টেনশন নেই, মাঠের বাইরে থেকে অনায়াসে ফিরলেন না শুধু, মহারাজ বনে গেলেন। ধরুন গ্রেগ চ্যাপেল চ্যাপ্টার, সে সময়ে সৌরভকে দেখুন, যেন কিচ্ছুটি হয়নি, ছক করা ছিল, উনি কেবল ঘুঁটি নাড়িয়ে গেছেন, গ্রেগ চ্যাপেল? বাপি বাড়ি যা। এটাই সৌরভ। কাজেই দুম করে সৌরভের নাম ভেসে উঠল আর আলোচনা শুরু করে দিলেন, তাহলে ভুল করবেন। কিন্তু আমাদের তো উপায় নেই, বাংলার মহারাজ বলে কথা, তাই বিষয় আজকে বিজেপিতে মহারাজ?
অমিতাভ বচ্চন গুজরাত ট্যুরিজমের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়েছেন, তার আগে উনি মধ্যপ্রদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ছিলেন। কেন ছিলেন? টাকা টাকা টাকা রৌপ্যবরণ চক্রগড়ন তুই বিনে সব ফাঁকা। টাকার জন্য। ওনার মধ্যপ্রদেশ ঘুরে দারুণ ভালো লেগেছে আর গুজরাত ঘুরে আরও ভালো লেগেছে এমন নয়। সে রাজীব গান্ধীর সঙ্গে দোস্তি আর এলাহাবাদ থেকে কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়িয়ে পড়া ওসব তো ইতিহাস, আবেগের কথা। এখন অমিতাভ বচ্চন অনেক সচেতন, ফেলো কড়ি মাখো তেল, আমি কি তোমার পর? শুনেছি পয়সা পেলে উনি তেলেভাজা দোকানের অ্যাম্বাসাডর হতেও রাজি হয়ে যাবেন। একইভাবে শাহরুখ খান কি পয়সা নিয়েই বাংলার অ্যাম্বাসাডর? তথ্য বলছে, না। এটা ওনার বিনি পয়সার আশ্বাস। ফলাফল? তাকিয়ে দেখুন, কোন বাংলার কোন প্রডাক্টের জন্য, কোন প্রকল্পের জন্য উনি বিনি পয়সায় ফোটোশুট করেছেন? শুটিং করেছেন? একটাও নেই, একটাতেও দেখাতে পারবেন না। একইভাবে ক’দিন আগে শোনা গেল দেব নাকি বাংলার পর্যটনের অ্যাম্বাসাডর। তো তিনি তো তৃণমূলের এমপি, রাজ্যে সরকারে তৃণমূল, তার ওপরে দিদির ভাই, কাজেই অ্যাম্বাসাডর হয়েছেন, নিশ্চয়ই পয়সা নিয়ে নয়।
আরও পড়ুন: Aajke | হবে কি বিরোধী ঐক্য?
কিন্তু, হ্যাঁ, কিন্তু আছে, তারপরেও বছর পার হলে হিসেব করে দেখে নেব দিদির ভাই বাংলার পর্যটনের মুখ হিসেবে কতটা সময় দিলেন? ক’টা ভিডিয়োতে মুখ দেখা গেল? আদৌ দেখা গেল কি না। সৌরভের ব্যাপারে এসব ধিনা ধিন ধা নেই, কারণ উনি মদন দা নন। উনি ফেলো কড়ি মাখো তেলে বিশ্বাসী, নিজের আখের বুঝে নিয়েই মাঠে নামায় বিশ্বাসী। কাজেই উনি যখন ত্রিপুরা পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়েছেন, তখন ধরেই নিন সেটা সিরফ আউর সিরফ পয়সাকে লিয়ে। অন্য কোনও ইচ্ছে বা উদ্দেশ্য থাকলে আমাদের দাদা ত্রিপুরাতে গিয়ে হেঁদিয়ে মরতেন না, এ রাজ্যেই তাঁর বাড়িতে ভাজা মুগডাল, ধোঁকার ডালনা আর পনির শাহি মশালা খেতে খেতে অমিত শাহ ওনাকে যা প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা নিয়েই মাঠে নেমে পড়তেন। তার বদলে ওনার অসুখ করেছিল, কত সময় দেখে মানুষের হৃদয়ে ব্যথা হয় বলুন তো। সেই মানুষ সামান্য কিছুর বিনিময়ে রাজ্য ট্যুরিজমের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হলেন তাই নিয়ে এই হইচইয়ের কোনও মানে হয়। যিনি সোজা মন্দিরে ঢুকে শিবের মাথায় জল ঢালতে পারেন তিনি খামোখা উড়ে পুরুত ডেকে পুজো করবেন কেন? হ্যাঁ, এই প্রশ্নই আমরা করেছিলাম মানুষজনকে, আচ্ছা আমাদের মহারাজ যে ত্রিপুরা ট্যুরিজমের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হলেন, এর সঙ্গে রাজনীতির কি কোনও সম্পর্ক আছে? শুনুন মানুষ কী বলছেন।
তাহলে আসল ব্যাপারটা কী? আসল ব্যাপারটা রাজ্য বিজেপির কঙ্কালসার চেহারার মধ্যেই লুকিয়ে আছে। দলের তিন নেতা তিনমুখো। দিলু ঘোষের কথা শুভেন্দু মানতে রাজি নন, সুকান্ত মজুমদার শুনবেনই না। শুভেন্দুর কথা সুকান্ত দিলু ঘোষ মানেন না আর দিলু ঘোষ বা শুভেন্দু সুকান্তকে দুধুভাতুর চেয়ে বেশি পাত্তা দিতে নারাজ। কাজেই বাংলা বিজেপির একটা মুখ চাই, সামনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ওনারা বেশ খাটো, আর যাঁরা পাশে আছেন সেই স্বপন দাশগুপ্ত বা রুদ্রনীল বা লকেট ইত্যাদি ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না। কাজেই মই দরকার। সেই মই হলেও হতে পারেন আমাদের মহারাজ, কাজেই অবরে সবরে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম ভেসে ওঠে বাংলা রাজনীতির বাজারে। যদি কোনও দিন এমন এক সম্ভাবনা দেখা দেয়, মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিটা হাতের নাগালে হয়, নিশ্চিত হয়, তাহলে আপনাদের গুজব ওঠার আগেই দেখবেন মাঠে নেমে গেছেন আমাদের মহারাজ। তিনি সময় আর সুযোগের অপব্যবহার করেছেন? ওনার শত্রুরাও সেকথা বলবেন না।