বাংলায় ধনখড়ের বদলে এসেছেন বোস। এসেই জানিয়েছেন, এই বোস হল সুভাষচন্দ্র অনুপ্রাণিত। তিনি বাংলা শিখতে চান, সুভাষ বসুর মাতৃভাষা, স্লেট পেনসিল এল, উনি হাতেখড়ি দিলেন। শুরুর আদিখ্যেতা শেষে তিনি নিজমূর্তি ধারণ করেছেন। করতে বাধ্য, কারণ তাঁর নিয়োগের শর্তই তো এটা। এক নির্বাচিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, প্রশাসনকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকাই তো রাজ্যপালের কাজ, অবশ্যই যদি তিনি বিজেপি বিরোধী হন তাহলেই। না হলে তাকিয়ে দেখুন না মণিপুরের দিকে। রাজ্যপাল অনুসূয়া উইকে, তো তিনি কি কোনও পিস রুম খুলেছেন, সারাদিন, ২৪ ইন্টু সেভেন তাঁর অফিসারেরা বসে মানুষের অভিযোগের কথা শুনছেন? রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে সেই অভিযোগ পাঠিয়ে দিচ্ছেন? অনূসুয়া উইকে গিয়েছেন নাকি মণিপুর সীমান্তে, যেখানে জ্বলছে শয়ে শয়ে আদিবাসী কুকি মানুষজনের ঘর? যাননি তো। কেন? কারণ তাঁর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি, কাজেই ৩০০ হত্যা তাঁকে বিচলিত করছে না, একে ফর্টি সেভেন হাতে দাঙ্গা করতে আসা যুবকদের চেহারা তাঁর চোখে পড়ছে না। শয়ে শয়ে বাড়ি জ্বলছে, চার্চ ভাঙা হয়েছে, দেবালয় পোড়ানো হয়েছে, অনূসুয়া উইকে কি বিচলিত? তিনি কি তা সংবাদমাধ্যমকে ডেকে জানিয়েছেন? না। কিন্তু বাংলায় ছ’ জনের মৃত্যু, তার মধ্যে দু’জন শাসকদলের, চারজন বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীর মৃত্যুর পরে বিচলিত রাজ্যপাল শান্তিকক্ষ খুলেছেন, বোমা পড়েছে, তিনি বিচলিত হয়ে ছুটে গিয়েছেন। গিয়েছেন কারণ এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি বিরোধী। এছাড়া আর কোনও কারণ আছে কি? আজ সেটাই বিষয় আজকে, পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যপাল বনাম তৃণমূল?
তার মানে সামনে পঞ্চায়েত ভোট, তৃণমূলের বিরুদ্ধে আছে বাম, কংগ্রেস, বিজেপি এবং অবশ্যই রাজ্যপাল। যিনি নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই দায়িত্ব নিয়ে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে এক ন্যারেটিভ তৈরি করা শুরু করে দিয়েছেন। তিনি পিস রুম খুললেন, ক’টা ফোন আছে? চারটে। ক’জন মানুষ সেই ফোনে অভিযোগ নিচ্ছেন? দু’জন। কত অভিযোগ এসেছে তিন দিনে— ৪০০, মানে দিনে ১৩৩টা অভিযোগ, তো রাজ্যপাল সেই অভিযোগ নিয়ে কী করছেন? মুখ্যসচিবকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, মুখ্যসচিব কী করবেন? পুলিশের কাছে সেই অভিযোগ পাঠিয়ে দেবেন। মানে রাজ্যপাল যে ন্যারেটিভটা সেট করতে চাইছেন তা হল, রাজ্যের পুলিশ মানুষের অভিযোগ নিচ্ছে না, তাই সেই অভিযোগ এবার তিনিই পাঠাচ্ছেন। এবং আজ তাঁর অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি, ওএসডি জানিয়েছেন, কেবল যে বিরোধী দলের লোকজনই অভিযোগ পাঠাচ্ছেন, তাই নয়, তৃণমূল দলের মানুষজনও অভিযোগ জানাচ্ছেন। মানে? মানে হল, তৃণমূল দলের সমর্থকদের অভিযোগ পুলিশ নিচ্ছে না তাই তাঁরা রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানাচ্ছেন। মণিপুর হলেও বুঝতাম, কারণ মণিপুরে গাঁজা চাষ হয়, মণিপুরের গাঁজা, ড্রাগস মাফিয়ারা ও রাজ্যে জাতি দাঙ্গার পিছনে আছে। আর এক টানেতে যেমন তেমন হয় বইকী, মিঠুন চক্কোত্তি বলে গেছেন।
আরও পড়ুন: Aajke | পঞ্চায়েতে মনোনয়ন শেষ, এই পর্বে কারা এগিয়ে? কারা পিছিয়ে?
প্রসঙ্গে ফেরা যাক। এই শান্তিকক্ষ আদতে এক প্রচারের অঙ্গ সেটা পরিষ্কার, কারণ বিরোধীদের নমিনেশন পড়েছে দেড় লক্ষের কিছু বেশি, তৃণমূলের আশি হাজার। দিনে ১৩০টা করে অভিযোগ আসলে আর যাই হোক কাজের কাজ তো কিছু হবে না। আচ্ছা সত্যিই যদি উনি কিছু করতে চাইতেন, সত্যিই যদি ওঁর মনে হত যে এই রাজনৈতিক হিংসার ঘরানার বিরুদ্ধে কিছু করা উচিত, তাহলে রাজ্যপাল হিসেবে তিনি কী করতে পারতেন? তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ডেকে, সচিবদের ডেকে সত্যি এই হিংসা কীভাবে থামানো যায়, তা নিয়ে সিরিয়াস আলোচনা করতে পারতেন। তিনি রাজ্যের সমস্ত শিল্পী বুদ্ধিজীবীদের কাছে আবেদন রাখতে পারতেন, তিনি রাজ্যের মানুষের কাছেও আবেদন রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি যা করলেন তা হল এক নির্বাচিত সরকারের প্যারালাল এক প্রশাসনিক ব্যবস্থা। তিনি শিখণ্ডির ভূমিকায় নেমে পড়েছেন, এক নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে ব্যতিবস্ত করা ছাড়া তাঁর কোনও উদ্দেশ্য নেই। ধনখড়ের প্রকৃত উত্তরাধিকারী হয়ে উঠতে চাইছেন মিঃ আনন্দ। ডঃ সি ভি আনন্দ বোস। আমরা মানুষের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম, এক নির্বাচিত রাজ্য সরকারের পাল্টা এক প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরি করে রাজ্যপাল কী প্রমাণ করতে চাইছেন? রাজ্যের প্রশাসন কার কথা মেনে চলবে? রাজ্যপাল না মুখ্যমন্ত্রী? মানুষ কী জানিয়েছেন শুনুন।
আসলে রাজ্যপাল দেশের একমাত্র সাংবিধানিক পদ যার নিয়োগের একমাত্র যোগ্যতা হল নিয়োগকর্তার ইচ্ছে, আর এরকম কোনও পদ নেই। ধরুন রাষ্ট্রপতি, তাঁকে নির্বাচিত হতে হয়, পরোক্ষ হলেও নির্বাচন হয়। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে সর্বপ্রথম একজন আইনজ্ঞ হতে হয়, ক্রম্পট্রোলার অ্যান্ড জেনারেল-এর চাকরির যোগ্যতা লাগে, কিন্তু রাজ্যপালের কিচ্ছু লাগে না। ইচ্ছে করলে মোদিজির মতো কোনও নেতা তাঁর গৃহ পরিচারককেও রাজ্যপাল করে পাঠাতে পারেন, কোনওরকম যোগ্যতা প্রয়োজন নেই, একমাত্র যোগ্যতা নিয়োগকর্তা মানে দিল্লির সরকারের ইচ্ছে আর সেই মানুষটির আনুগত্য। কাজেই তিনি রাজ্যে আসেন, দিল্লি সরকার বিরোধী যে কোনও সরকারকে অপদস্থ করাই আপাতত রাজ্যপালের একমাত্র কাজ। ঠিক তাই রাজ্যপাল জানিয়ে দেন আমাকে ফোন করুন, ৩ দিনে ৪০০ ফোন আসে আর নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে আমাকে ফোন করুন, ১২ হাজার ফোন আসে দু’ দিনে। এইজন্যই দক্ষিণের নেতা আন্নাদুরাই বলেছিলেন রামছাগলের দাড়ি আর রাজ্যের রাজ্যপাল পদ, দুটোই সমান অপ্রয়োজনীয়। আপনারা আপনাদের মতামত দিন।