কলকাতা: ইন্ডিয়া কি বিরোধীদের প্রাক নির্বাচনী জোট, এই প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিভেদ দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে তৃণমূল এবং সিপিএমের মত একেবারে বিপরিত। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ইন্ডিয়াকে জোট বলে দাবি করলেও সিপিএম (CPM) তা মানতে রাজি নয়। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির (Sitaram Yechury) মতে, এটি কোনও নির্বাচনী জোট নয়। তিনি বলেন, দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষায় বিরোধী দলগুলি একটি সমবেত সমঝোতায় পৌঁছেছে। তারই প্রতিফলন ইন্ডিয়া।
শুক্রবার ধর্মতলায় তৃণমূলের শহীদ সমাবেশে মমতা বলেন, আমরা ইন্ডিয়া নামে একটি জোট গড়তে পেরেছি। আমি খুব খুশি। এই জোটই আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপিকে হারাবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হারাবে। আমরা দেশ থেকে বিজেপির বিদায় চাই। বিজেপিকে আর সহ্য করা যাচ্ছে না। দলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির মুখপত্রে এক সাক্ষাৎকারে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি বলেন, ইন্ডিয়া কোনও নির্বাচনী জোট নয়। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এ রকম কোনও জোট হতেও পারে না। রাজ্যে রাজ্যে বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করতে হবে। জাতীয় স্তরে দেশের স্বার্থই প্রাধান্য পাবে। ইন্ডিয়ার প্রধান কর্তব্য হল বিজেপিকে পরাস্ত করা। বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। তাদের হারাতেও হবে বাংলায়। সিপিএম নেতা আরও বলেন, বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই হবে।
আবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, তৃণমূলের সঙ্গে বামেদের জোটের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াই করতে গিয়ে প্রতিদিন বামপন্থীরা আক্রান্ত হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হচ্ছেন আমাদের কর্মীরা। এর বিরুদ্ধে লড়াই চলছে, লড়াই চলবে। তিনি বলেন, এই লড়াইটা হচ্ছে, কারণ দিল্লিতে বিজেপি সরকার রয়েছে বলে বিজেপির সঙ্গে সেটিং করে এ রাজ্যে তৃমমূল টিকে আছে। নাহলে এতদিনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলে থাকার কথা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরএসএসের দুর্গা।
শুক্রবার তৃণমূলের শহীদ সমাবেশে ইন্ডিয়া নিয়ে তৃণমূল নেত্রী ছিলেন দারুণ উচ্ছ্বসিত। তাঁর ভাষণের সিংহভাগ জুড়ে ছিল ইন্ডিয়ার কথা। তিনি বলেন, এখন থেকে দেশে সব আন্দোলনই হবে ইন্ডিয়ার ব্যানারে।
আরও পড়ুন: 21 July | পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা নিয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় বিরোধীরা
দলীয় মুখপত্রে সাক্ষাতকারে ইয়েচুরি বলেন, ইন্ডিয়া একদমই কোনও জোট নয়। এটি হল দেশের গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র রক্ষা করতে একসঙ্গে কাজ করার বোঝাপড়া। দেশের ২৬টি দল এই বোঝাপড়ায় এসেছে যে, দেশের সংবিধান, গণতান্ত্রিক কাঠোমা রক্ষা করতে হবে।
সিপিএম নেতা চেয়েছিলেন, এটির নাম হোক উই ফর ইন্ডিয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি বাতিল হয়ে যায়। তিনি বলেন, ইংরেজিতে ইন্ডিয়ার শেষ অক্ষর রয়েছে এ। তাই অ্যালায়েন্স। কিন্তু তাই বলে এটি জোট নয়। তা হতেও পারে না। ইয়েচুরি জানান, বাংলায় বিজেপি এবং তৃণমূল, উভয়কেই হারাতে বামেরা লড়াই করবে। সেই লড়াইয়ে আমরা কংগ্রেস এবং অন্য সহযোগী শক্তিগুলির সমর্থন চাইব। আবার কেরলে বামপন্থীদের সঙ্গে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফের লড়াই হবে।
বাংলায় সিপিএম-তৃণমূল সম্পর্ক খুবই তিক্ত। আবার এই দুই দলই পাটনা এবং বেঙ্গালুরুর বিরোধী মহাবৈঠকে হাজির। তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে বিজেপি এই প্রশ্নে সিপিএম এবং কংগ্রেসকে বিঁধছে। এই প্রসঙ্গে সীতারাম এবং সেলিম বলেন, সিপিএমের রাজনৈতিক লাইন পাটনা বা বেঙ্গালুরুতে বিরোধীদের বৈঠকে ঠিক হয় না। তা ঠিক হয় পার্টি কংগ্রেসে। কান্নুর কংগ্রেসে গত বছর বলা হয়েছিল, সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন ও পরাস্ত করা। রাজনৈতিক লাইনের শেষে বলা হয়, সেই লক্ষ্যে রাজ্যে রাজ্যে যথাযথ নির্বাচনী কৌশল গ্রহণ করতে হবে। সেইমতোই সিপিএম চলছে।