Placeholder canvas
কলকাতা সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫ |
K:T:V Clock
Fourth Pillar: অমিত শাহ, চাণক্য দ্য গ্রেট
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  কৃশানু ঘোষ
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২২, ০১:৩০:০৮ পিএম
  • / ১৪৮ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • কৃশানু ঘোষ

বাঙালি একজনেরই নামের পরে গ্রেট লাগিয়েছে। না, রবিঠাকুর বা নেতাজির নামের পরেও দ্য গ্রেট শব্দ বাঙালি লাগায়নি, বিবেকানন্দ, রামমোহনের নামের শেষেও নয়। সেই মর্যাদা বাঙালির কাছ থেকে পেয়েছে একমাত্র বাঁটুল, বাঁটুল দ্য গ্রেট। আসলে বাঙালি মানুষজন শ্রেষ্ঠত্বের বিচারকে ব্যঙ্গ করেছে চিরটা কাল, তার ঠাকুর তাকে জানিয়েছে ‘আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না।’ স্বয়ং ঠাকুরের মুখেই এই কথা শুনে বাঙালি নিশ্চিত, শ্রেষ্ঠত্ব বলে কিছুই হয় না। আপাতত এই দার্শনিক আলোচনা এখানেই থাক, পরে কোনওদিন করা যাবে। কিন্তু আলোচনার সূত্রপাত ওই দ্য গ্রেট থেকেই, গোদি মিডিয়ায় হ্যাঁ হ্যাঁ বলা সংরা বলেই চলেছেন, অমিত শাহ হলেন চাণক্য দ্য গ্রেট। এক ঐতিহাসিক চরিত্র কিন্তু সময় এবং তাঁর ইতিহাসে মিথ বেশি, সত্যি বড্ড কম। তিনি কে ছিলেন? কোন সময়ে ছিলেন, তাঁর নীতিমালা বলে যা চালানো হয়, তা ঠিক কতখানি তাঁর? এসব নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা আছে। তা থাক, কিন্তু জনপ্রিয় এই চাণক্যের বহু কথার মধ্যে একটা কথা খুব পরিষ্কার। এক, জয় যে কোনও ভাবে পেতেই হবে, তার জন্য তিনি চার পথের কথা বলেছেন বলে অনেকে বলে, সাম, দাম, দণ্ড, ভেদ। কিন্তু চাণক্য নীতিশাস্ত্র পড়লে জানা যায় তিনি কূটনীতি প্রয়োগের পাঁচটা অস্ত্রের কথা বলেছেন, ১) সাম– সন্তুষ্টি বিধান, মানে বোঝাও, মানাও, সন্তুষ্ট করো, যাতে যাকে বোঝানো হচ্ছে সে সেই পথে চলে। আপনার এতে ভালই হবে, আপনার ভালোর জন্যই বলছি ইত্যাদি। ২) দান– জিতলে তুমিই মুখ্যমন্ত্রী হবে, কথা শুনলে তোমাকে রাজার মন্ত্রী করা হবে, এই নাও পুরো জঙ্গল, তোমার নামে লিখে দিলাম, ওই শহরের খাজনা এখন থেকে তোমার, ইত্যাদি। ৩) দণ্ড– জেলে পোরো, রাজসভায় এনে অপমান করো, তদন্তের নির্দেশ দাও, ক্ষমতা কেড়ে নাও, ইত্যাদি। ৪) মায়া– এই কথাটা অনেকে ভুলে যান, জ্যোতিষী, গণক দিয়ে মায়াজাল বিস্তার করা, মায়া বা ইন্দ্রজালে বশ করা, এমন প্রচার, যা তাকে বাধ্য করবে রাজার কাছে নতজানু হতে। ৫) ভেদ– যদি এসবেও কিছু না হয়, তাহলে তাকে লড়িয়ে দাও, তার ১০টা শত্রু হোক, সে সেই শত্রুদের নিয়েই ব্যস্ত থাকুক, এক্ষেত্রে রাজা সরাসরি কিছুই করবেন না, কিন্তু বিভিন্ন মানুষ বা গোষ্ঠী সেই মানুষটির, সেই গোষ্ঠীর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে। এটা হচ্ছে চাণক্য নীতির অন্যতম মূল মন্ত্র, জিততেই হবে আর জেতার জন্য সাম, দান, দণ্ড, মায়া, ভেদ-এর অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। তিনি যা বলেছিলেন তা এখনকার ভাষায় এন্ড জাস্টিফাইস দ্য মিন্স, জো জিতা ওহি সিকন্দর। সম্ভবত এই কথাগুলো মাথায় রেখেই অমিত শাহকে চাণক্য দ্য গ্রেট বলা হচ্ছে। গোদি মিডিয়া জানাচ্ছে এই মডার্ন চাণক্যের নেতৃত্বেই নাকি একের পর এক বিজয় পাচ্ছে বিজেপি, বিজেপির জয়ের ঘোড়া অপ্রতিরোধ্যভাবেই ছুটে চলেছে সারা দেশ জুড়ে, সেই ২০১৪ থেকে, তিনি যখন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি হলেন, তখন থেকে, এখনও। আসলে এটাও বলা হচ্ছে জগৎপ্রকাশ নাড্ডা তো আসলে দুধুভাতু, মাথায় আছেন সেই চাণক্য দ্য গ্রেট, অমিত শাহ। আসুন দেখা যাক, ঐতিহাসিক চরিত্র চাণক্যের মতো এই দাবিও মিথ্যেতে চোবানো কি না, অমিত শাহ কি সতিই চাণক্য দ্য গ্রেট, নাকি এক হাওয়াভরা ফানুস। 
২০১৪-র আগে বিজেপির রাজনৈতিক শক্তি কীভাবে বেড়েছিল? মানে লালকৃষ্ণ আদবানীর সময়ে? দেশজুড়ে বিজেপির বন্ধু ছিল, ওই সাম, মানে সন্তুষ্টি বোধ থেকেই বিজেপির সঙ্গে ছিল শিবসেনা, অকালি দল, জনতা দল ইউনাইটেড, লোকজনশক্তি পার্টি, তেলুগু দেশম, এআইডিএমকে, কাশ্মীরে পিডিপি, ওড়িশায় বিজেডি। এছাড়াও ছোট ছোট অনেক দল। সব্বাই যে সন্তুষ্টি বোধ থেকে এসেছিল তেমনও নয়। সম্ভবত ‘দান’ এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু বামেরা আলাদা, কংগ্রেস এক ঘরে আর অন্যদিকে বিরাট ঐক্য বিজেপিকে সরকারে আসতে সাহায্য করেছিল। ২০১৪তে নির্বাচনের আগেই জাতীয় সভাপতি হলেন অমিত শাহ। একে একে প্রত্যেক দল সরে গেছে, আপাতত একটা জাতীয় দল বা বড় রাজনৈতিক দল বিজেপির সঙ্গে নেই। চাণক্য বেঁচে থাকলে এই আধুনিক চাণক্যকে এর দায়ে শূলে চাপাতেন। এবার আপনারা বলবেন, চাণক্য তো বলেই গেছেন, যো জিতা ওহি সিকন্দর, বিজেপি জিতছে আর কী চাই, দিকে দিকে বিজেপি জিতছে। তাই নাকি? আসুন ৫৮ বছর বয়সী এই চাণক্যের জয়ের ট্র্যাক রেকর্ডটাও দেখা যাক। আচ্ছা শুরু করা যাক ওঁর হোম স্টেট থেকেই। গুজরাতে অমিত শাহ জাতীয় সভাপতি হওয়ার পরে বিধানসভার নির্বাচনে গত ২৪ বছরের সব থেকে কম আসন পেয়েছে বিজেপি, ৯৯টা। তার আগের ২০১২ থেকে ১৬টা আসন কম। গোটা দেশে? এবার তিনিই ১৫০ আসনের দাবি করছেন, কিন্তু মাথায় তো আছে দিল্লির নির্বাচন, আর বাংলার নির্বাচন। অবকি বার দোশো পার, কার স্লোগান ছিল? অমিত শাহের। পেয়েছিলেন ৭৭। দিল্লির পরাজয়ের কথা না বলাই ভাল, ৭০টা আসনে ৮টা। রাজ্য রাজধানীতে এই হারের পরেও তাঁকে চাণক্য বলা হবে? এবার গোটা দেশের তথ্যটাও দেখা যাক। বিজেপি রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন সবকটা রাজ্যের ভোট শেষ হওয়ার পরে বিজেপির এমএলএ সংখ্যা কতজন ছিল? ১৩১৮ জন, মানে ৩২.৭ শতাংশ, মোট এমএলএ-র সংখ্যা ৪০৩৬, বিজেপির ১৩১৮। আর ঠিক এই মুহূর্তে কত? মানে চাণক্য কতটা জয় এনে দিলেন? ১৩৩৮, মানে মোট এর ৩৪.৩ শতাংশ, ২০ জন বেশি, কী বিরাট বিজয় বলুন দেখি? এর জন্য একজনকে চাণক্য বলা হচ্ছে, আসলে এক ফানুস, স্রেফ হাওয়া দিয়ে ফোলানো হচ্ছে। ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, গুজরাত, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, রাজস্থান, তেলঙ্গানা, উত্তরাখণ্ড আর উত্তরপ্রদেশে ভোট হয়েছে। এই সবকটা রাজ্যের মোট এমএলএ-র সংখ্যা ২১৮৫, বিজেপির কাছে ছিল ১০৭৫, মানে ৪৯ শতাংশ। বাই ইলেকশন বা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পরে এই সব রাজ্য মিলিয়ে বিজেপির এমএলএ কজন? ৮০২ জন, মানে ১৭৩ জন কমেছে, কিন্তু অমিত শাহ নাকি চাণক্য। আসুন রাজ্য ধরে ধরে এই হিসেবটা দেখে নেওয়া যাক। ডিসেম্বর ২০১৭, গুজরাতের নির্বাচনের আগে বিজেপির এমএলএ ছিল ১১৫ জন, এখন ৯৯ জন, দল ভাঙিয়ে, পদত্যাগ করিয়ে বাই ইলেকশনের পরেও ১০৯ জন। ২০১৮ ডিসেম্বর, রাজস্থানে বিজেপির এমএলএ ১৬৩ জন, এখন ৭১ জন। ২০১৮-র পরে তেলঙ্গানায় ২টো আসনে বাই ইলেকশনে জেতার পরে তেলঙ্গানাতে বিজেপির এমএলএ ২ জন, আগে ছিল শূন্য। ২০১৮ নভেম্বরে মধ্যপ্রদেশে ভোট হয়, তার আগে মধ্যপ্রদেশের বিজেপির ১৬৫ জন বিধায়ক ছিল, নির্বাচনের পরে তা কমে হয় ১০৯, তারপর দল ভাঙিয়ে, বাই ইলেকশনে জিতে আপাতত বিধায়ক সংখ্যা ১৩০ জন। ২০১৮র নভেম্বরে ছত্তিশগড়েও নির্বাচন হয়, নির্বাচনের আগে ছত্তিশগড়ে বিজেপির বিধায়ক ছিল ৪৯ জন, এখন ১৪ জন। ২০১৯-এ এপ্রিলে অন্ধ্রপ্রদেশে ৪টে আসন ছিল, এখন শূন্য। ২০১৯-এর অক্টোবরে হরিয়ানা আর মহারাষ্ট্রে বিধানসভার ভোট হয়, ভোটের আগে হরিয়ানায় ৪৭ জন আর মহারাষ্ট্রে ১২২ জন বিধায়ক ছিল, এখন হরিয়ানায় ৪১ জন, মহারাষ্ট্রে ১০৬ জন বিধায়ক আছে। ২০২২ ফেব্রুয়ারিতে পঞ্জাব আর উত্তরাখণ্ডে ভোট হয়েছিল, তার আগে উত্তরাখণ্ডে ৫৭ জন আর পঞ্জাবে ৩ জন বিজেপির বিধায়ক ছিল। আজ উত্তরাখণ্ডে ৪৭ জন, পঞ্জাবে ২ জন বিধায়ক আছে। ২০২২-এর মার্চে উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন হয়, সেই সময়ে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ৩১২ জন এমএলএ ছিল, আজ ২৫৪ জন। মানে ১৩টা রাজ্যে বিধানসভায় ১৭৩ জন বিধায়ক কমেছে। একটা রাজ্য অসমে গত নির্বাচনেও ৬০ ছিল, এখনও ৬০ জন বিধায়ক। অরুণাচল প্রদেশ, বিহার, গোয়া, পশ্চিমবঙ্গ, হিমাচল প্রদেশ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, মিজোরাম, মেঘালয়, মণিপুর, কর্নাটক, ত্রিপুরা, দিল্লি, পন্ডিচেরি এই ১৫টা রাজ্যে মোট ৩২৫ জন বিধায়ক বেড়েছে, ছিল ১৮১, হয়েছে ৫০৬। তার মানে ৬৬ শতাংশ মানুষের এলাকায় বিজেপি কমেছে, মাত্র ৩৪ শতাংশ মানুষ থাকে এমন এলাকায় তারা বেড়েছে, এবং সব মিলিয়ে মোট বেড়েছে ২০ জন। এবং ২০ জনের বৃদ্ধিকে বিরাট জয়, অশ্বমেধের ঘোড়া, বিজেপির জয়যাত্রা, মোদি-শাহের জয়যাত্রা ইত্যাদি বলে ঢাকঢোল পেটানো শুরু হয়েছে। চলুক ভুক্তভোজী, এঁটোকাঁটা খাওয়া মিডিয়ার প্রচার। আমি কেবল জানিয়ে রাখলাম, এই প্রচার স্রেফ হাওয়ায় ভরা ফানুস, আর সামান্য হাওয়া বেরিয়ে গেলে ওই গোদি মিডিয়ার মুখেই সারসত্য শুনতে পাবেন, চাকা ঘুরবে।        

 

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১ ১২
১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯
২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫ ২৬
২৭ ২৮ ২৯ ৩০  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

সিউড়িতে অস্ত্র হাতে রামনবমীর শোভাযাত্রা
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
ক্ষমতায় আসার আড়াই মাসেই মধ্যেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রাস্তায় জনতা
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমীর দিন অশান্ত দিনহাটা! ফের তৃণমূল-বিজেপি তরজা
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমী উপলক্ষে শুভেচ্ছাবার্তা মমতার
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমীতে পাম্বান সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রবিবাসরীয় সকালে কলকাতায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমী উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা বার্তা প্রধানমন্ত্রীর
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকা উপেক্ষা করে রামনবমী উপলক্ষে সাজো সাজো রব যাদবপুরে
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমী উপলক্ষে কড়া নজরদারি পুলিশের, আইন ভাঙলেই কড়া পদক্ষেপ!
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমীকে ঘিরে উৎসাহ তুঙ্গে, অযোধ্যায় ভক্তদের ভিড়
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
ওয়াটার পার্কে দুর্ঘটনা! রোলার কোস্টার থেকে পড়ে মৃত্যু তরুণীর
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
পিচভেজা বৃষ্টিতে ভিজতে চলেছে রাজ্য, কোন কোন জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিল হাওয়া অফিস?
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
ডোমজুড়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড!
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমীতেও খোলা নবান্ন, থাকবেন পুলিশের শীর্ষ কর্তারা
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
2020 Delhi Riots : বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে ফের তদন্তের নির্দেশ
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team