হিমাচল প্রদেশ এবং কর্নাটক বিজেপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর কংগ্রেসের (Congress) উন্নাসিক মনোভাবের নাক কাটা গিয়েছে হিন্দি বলয়ে। হিমাচল, কর্নাটক দখল এবং ভারত জোড়ো যাত্রার পর রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) মধ্যে নেপোলিয়ন বা আলেকজান্ডারের মতো ঔদ্ধত্য চলে এসেছিল। ছোট দল কিংবা আঞ্চলিক দলগুলিকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনছিলেন না তিনি। গোটা প্রচারে কংগ্রেসের ক্ষমতায় ফেরার কথাই বলে এসেছিলেন। ভোট ঘোষণার পর থেকে ইন্ডিয়া জোট (India Bloc) নিয়ে কোনও মাথাব্যথাই ছিল না কংগ্রেসের। যার ফলভোগ করতে হল হাড়েহাড়ে। ইন্ডিয়া জোট ঐক্যবদ্ধ লড়াই না করতে পারাতেই গোহারা হয়েছে হাত চিহ্ন।
মধ্যপ্রদেশে (Madhya Pradesh) প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া এবারে কংগ্রেসের পালে লাগেনি। উল্টে ছত্তিশগড় (Chhattisgarh) এবং রাজস্থান (Rajasthan) কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে সরকার বিরোধিতাকে কাজে লাগিয়েছে বিজেপি। রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার (Bharat Jodo Yatra) অবিশ্বাস্য সাফল্যে ‘ভয় পেয়ে যাওয়া’ মোদির সামনে হ্যাটট্রিকের দরজা খুলে দিয়েছে একমাত্র কংগ্রেসই। আর তা নিয়েই ইন্ডিয়া জোটে বেসামাল কংগ্রেস বিরোধিতার সুর চওড়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: মহুয়াকে বহিষ্কারের সুপারিশ আজ পেশ হচ্ছে না
কংগ্রেসের ব্যর্থতা ও লজ্জার হার নিয়ে বিজেপি তো তুলোধনা করেছেই, ছেড়ে কথা বলেনি ইন্ডিয়ার শরিকরাও। এই অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেসসহ প্রায় সব শরিকদলই নিজ রাজ্যে অধিক সংখ্যক আসনে লড়াইয়ের দাবি তুলেছে। অর্থাৎ যে রাজ্যে যারা শক্তিশালী, তারাই আগামী লোকসভা নির্বাচনে বেশি প্রার্থী দেবে। অতএব এই ফর্মুলায় কংগ্রেস আদৌ রাজি হবে কিনা, কিংবা রাজি হলেও আসন সমঝোতায় কতটা রাজি হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় তৈরি হয়েছে।
ভোটের ফলাফল নিয়ে ময়নাতদন্ত এবং শীত অধিবেশনে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে সোমবারই বিকেল সাড়ে ৫টায় নিজের বাসভবন ১০ জনপথে কংগ্রেস নেতাদের বৈঠকে ডেকেছেন সোনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi)। বৈঠকে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীর নামও জানিয়ে দিতে পারেন দলের প্রাক্তন সভানেত্রী। সব থেকে বড় কথা এই বৈঠকেই আগামী ৬ তারিখ ডাকা ইন্ডিয়া জোটের বিষয়েও পর্যালোচনা করতে পারেন নেত্রী। যেহেতু জোট শরিকদের অধিকাংশই কংগ্রেসের একলা চলো নীতিকেই দুষছে, তখন আগামিদিনে দলের রণকৌশলের দিকনির্দেশ নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
কারণ, হারের পর থেকে কংগ্রেস বোঝানোর চেষ্টা করে চলেছে যে, আশা একেবারে হারিয়ে যায়নি। এখনও পুনরুজ্জীবনের পথ খোলা রয়েছে। এদিন দলের প্রবীণ নেতা জয়রাম রমেশ একটি পরিসংখ্যান দিয়ে লিখেছেন, ভোট ভাগের শতাংশের অঙ্ক বলছে কংগ্রেস বিজেপির থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। বাস্তবিক একেবারে বিজেপির ঘাড়ের উপরে নিঃশ্বাস ফেলছে কংগ্রেস। ভোটের পরিসংখ্যান দিয়ে লিখেছেন, ছত্তিশগড়ে বিজেপি পেয়েছে ৪৬.৩ শতাংশ আর কংগ্রেস ৪২.২। মধ্যপ্রদেশে বিজেপির ঝুলিতে ৪৮.৬ এবং কংগ্রেস পেয়েছে ৪০.৪ শতাংশ ভোট। রাজস্থানে যেখানে বিজেপি পেয়েছে ৪১.৭, কংগ্রেসের দিকে এসেছে ৩৯.৫ শতাংশ ভোট।
রমেশের দেওয়া পরিসংখ্যান অন্ধকার খনিতে ব্যাটারির আলো বলে মনে হলেও ইন্ডিয়া জোটের চার্জ আর কতক্ষণ থাকবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই যাচ্ছে। কারণ আগামী বুধবারের জোট বৈঠকে কোন কোন তাবড় নেতা-নেত্রী হাজির থাকছেন বা থাকছেন না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আদৌ শেষমেশ বৈঠক পিছোতে হবে কিনা তাও বলা যাচ্ছে না। যেমন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পারিবারিক অনুষ্ঠানের কারণে মল্লিকার্জুন খাড়্গের বাড়িতে ডাকা বৈঠকে যাবেন না। এমনকী এদিন রাজ্য় বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোই হয়নি তাঁদের। তেমনই আসন সমঝোতা নিয়ে সম্প্রতি অখিলেশের সঙ্গে রাহুল গান্ধীর মনোমালিন্য প্রকাশ্যে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে।
তবে বিধানসভার এই ভোট ফলাফলে একটা বিষয় দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে উঠেছে যে, এই মুহূর্তে মাত্র ৩টি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। যেখানে বিজেপি রয়েছে ১২টি রাজ্যে। বাকিগুলি রয়েছে আঞ্চলিক দলগুলির কাছে। তার মধ্যে ২টি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির হাতে। একটি করে রাজ্য তৃণমূল, সিপিএম এবং ডিএমকে-র হাতে। বাকি রাজ্যগুলির মধ্যে ওড়িশার নবীন পট্টনায়ক বিজেপির নৌকায় রয়েছেন। উত্তর-পূর্বের কয়েকটি রাজ্যেও আঞ্চলিক দলগুলিকে হাত করে রেখেছে পদ্ম শিবির। ফলে, এখন এই ফলাফলের পর ইন্ডিয়া জোটের নৌকা ছেড়ে কে বা কারা কারা সাঁতরে বিজেপির দিকে ভিড়বে, তা হলফ করে বলা যায় না। কারণ, দল ভাঙানোর খেলায় মোদি-শাহ জুটির জুড়ি মেলা ভার।
অন্য খবর দেখুন