মুম্বই: আজ, বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসতে চলেছে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া (INDIA)-র শরিকরা। জোটের নাম তো আগেই ঠিক হয়েছিল এবার প্রতীক প্রকাশ করতে পারে জোটের সদস্যরা। গত বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেওয়ার ইন্ডিয়া নামেতেই সিলমোহর দেওয়া হয়েছিল। এদিন সন্ধ্যায় ইন্ডিয়া (INDIA) জোটের লোগো চূড়ান্ত করা হতে পারে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে মোদি সরকারকে উৎখাত করতে একটি অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচিও তৈরি করা হবে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে। গত ২৩ জুন, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের আহ্বানে ১৭টি বিরোধী দলের প্রথম বৈঠক হয়। জুলাইয়ে বেঙ্গালুরুতে ২৬টি দলের শীর্ষনেতৃত্বের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ কেরছিল ইন্ডিয়া। আজ ও শুক্রবার মুম্বইয়ে ইন্ডিয়ার সহযোগী দলের নেতারা বৈঠকে বসছেন।
আর কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। ঠিক যেন বিক্রমের অবতরণ পালা। তারপরেই পর্দা উন্মোচন হবে মোদি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের। ইতিমধ্যেই মুম্বইয়ে পৌঁছতে শুরু করেছেন বিরোধী দলের নেতারা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুধবার বিকেলে পা রাখেছেন বাণিজ্য নগরীতে। অমিতাভ বচ্চন পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কয়েক ঘণ্টা কাটান জলশায়। বিগ বি-কে রাখী পরানোর পর তিনি উদ্ধব ঠাকরের বাসভবনে যান। তাঁকেও রাখি পরান মুখ্যমন্ত্রী। এবারের বৈঠকের তাৎপর্য হল, বিরোধীরা একটি অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি অথবা যৌথ প্রচার কৌশল নিতে পারে। তাছাড়া সর্বভারতীয় প্রচারের ক্ষেত্রে একটি প্রতীক ও পতাকারও আত্মপ্রকাশ হতে পারে।
কিন্তু, ইন্ডিয়া জোটের ঐক্যের সুরে তাল কাটতে পারে প্রধানমন্ত্রীর মুখ নিয়ে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, যিনি প্রথম এই জোট গঠনের কারিগর ছিলেন, তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে আহ্বায়ক হবেন না। বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় জনপ্রিয়তার ধারে ও ভারে বিরোধীদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন রাহুল গান্ধী। কিন্তু, ঘনিষ্ঠ মহলে রাহুল জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কিংবা তাঁর মা সোনিয়া গান্ধী কেউই এই পদে আসতে রাজি নন। পাশাপাশি ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির নেতা শরদ পাওয়ারের নিজেরই ঘর তছনছ করে দিয়েছে বিজেপি। ফলে পাওয়ারও এখন কিছুটা ব্যাকফুটে।
আরও পড়ুন: Aajke | ইন্ডিয়া জোট, এ বাংলায় মুখ থুবড়ে পড়বে
জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞতার বিচারে অখিলেশ যাদব অনেক পিছিয়ে থাকলেও আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রধান মুখ হওয়ার ব্যাপারে এগিয়ে রয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আপের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক নিয়ে। কারণ, দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে এই দুই দল পরস্পরবিরোধী রাজনীতির জোরেই টিকে রয়েছে। এই অবস্থায় সংখ্যাতত্ত্বের নিরিখে কংগ্রেস জোটের প্রধান শক্তি হলেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেও ব্যাটন তুলে দেওয়া হতে পারে। অন্তত তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতারা সর্বান্তঃকরণে চাইছেন মোদির বিকল্প মুখ হিসেবে বাংলার জননেত্রীকে সামনে তুলে ধরতে।
প্রথমত, মুখ্যমন্ত্রিত্বের অভিজ্ঞতার নিরিখে তিনি অনেকের থেকে এগিয়ে। দ্বিতীয়ত, ৩৪ বছরের সিপিএমের অপশাসন থেকে বাংলা থেকে মুক্ত করতে পেরেছেন একমাত্র তিনি। লড়াকু নেত্রী, বিজেপি তথা মোদি বিরোধিতায় তাঁর ধারালো আক্রমণের ধারা মমতাকে জোটের মুখ হিসেবে তুলে ধরায় অনেকেই সম্মত হতে পারেন।
বৈঠকের জন্য এসে গিয়েছেন, আরজেডি সভাপতি লালুপ্রসাদ যাদব এবং তাঁর পুত্র তেজস্বী যাদব। লালুপ্রসাদ যাদব বলেছেন, এই বৈঠকে জোটের আহ্বায়ক নির্বাচন হবে। কাশ্মীরে ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লাও জানিয়েছেন, আহ্বায়ক নির্বাচনই এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য। প্রকৃতপক্ষে বিরোধী নেতারা বুঝতে পারছেন, বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদিকে টক্কর দিতে হলে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রধান মুখ নির্বাচন করতে হবে। তাই আগামী দুদিন দেশের রাজনীতি তাকিয়ে থাকবে এই বৈঠকের দিকেই।