ইসলামাবাদ: পাকিস্তানে সরকার বিরোধী আন্দোলন দমনে পুলিশি দমনপীড়ন নিয়ে মুখ খুললেন ইমরান খান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে পূর্ব পাকিস্তানে পাক সেনাবাহিনীর নৃশংসতা নিয়ে হাটে হাঁড়ি ভাঙেন তিনি। প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) কী ধরনের অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছিল পাক সেনা তা দেশের মানুষের জানা উচিত, বোঝা উচিত।
শনিবার জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে তিনি বলেন, আজ আমাদের জানা উচিত কী ঘটেছিল পূর্ব পাকিস্তানে। কী ধরনের নৃশংসতা সেখানে হয়েছিল। সেদেশের দল নির্বাচনে জিতেছিল, তাদের প্রধানমন্ত্রী হওয়া উচিত ছিল, তাদের তা হতে দেওয়া হয়নি। এখানেও মানুষের মনের মধ্যে একইভাবে আতঙ্ক ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ওরা ভাবছে, ডান্ডা মেরে দেশের মানুষকে ভয়ের পরিবেশে আটকে রাখতে পারবে।
আরও পড়ুন: Turkey Election 2023 | তুরস্কে আজ ভোট, এর্দোগানের ‘মৃত্যুঘণ্টা’ কি বাজবে?
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধান আরও বলেন, সেবার দেশের আধখানা টুকরো আমরা হারিয়েছিলাম। আমরা কল্পনাও করতে পারি না, দেশের কী ক্ষতি করা হয়েছিল। কারণ, বন্ধ দরজার ভিতরে যারা সিদ্ধান্ত নেয়, সেই হাতে গোনা কয়েকটা মানুষ জানে না বিশ্বের আর পাঁচটা দেশ কীভাবে চালানো হয়, কীভাবে তারা নীতি রূপায়ণ করে। ইমরানের কথায়, তাদের ভুলের জন্য দেশের কী ক্ষতি হচ্ছে তা বোঝাতে চাইলেও ওরা বোঝে না। মানুষকে সেই অধিকার দেওয়া হয় না। বাংলাদেশ যুদ্ধ নিয়ে যখন হামুদুর কমিশনের রিপোর্ট তৈরি হল, তা প্রকাশ করা হল না। শুধু তাই নয়, ২৫ বছর পর তা ভারতে প্রকাশিত হয়ে গেল। তাই তিনি পাকিস্তানের মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেন ১৯৭১ সালে মার্চ মাসে কী ঘটেছিল।
পাক ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, অনূর্ধ্ব ১৯ দলের একটি খেলার জন্য আমি পূর্ব পাকিস্তান গিয়েছিলাম। আমাদের বিমানটাই সেখান থেকে ছাড়া শেষ বিমান ছিল। আমার এখনও মনে আছে, সেখানকার মানুষের কী ঘৃণা ছিল আমাদের প্রতি। কিন্তু, আমরা সেখানে কী ঘটছে, তা নিয়ে চোখ বুজে ছিলাম। কারণ, আজকের মতো সেদিনও সংবাদপত্র ছিল সরকারের দাস। তফাত এইটুকুই যে, আজ সামাজিক মাধ্যম আছে। কিন্তু ওরা সেটারও মুখ বন্ধ করে রেখেছে।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ওরা ওদের কথাই মানুষকে জানতে দিতে চায়। যারা সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাইছে, তাদের দাঙ্গাকারী নামে দাগিয়ে দিচ্ছে। ফেসবুক, টুইটার, ইন্টারনেট সব বন্ধ করে রেখেছে। দেশের অর্থনীতির কী হয়েছে আমরা চিন্তাও করতে পারব না। পূর্ব পাকিস্তানেও ঠিক এরকমটাই ঘটেছিল।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে একটি অভিযানে নামে। যেখানে পাক সেনা পরিকল্পনামাফিক হাজার হাজার মুক্তিকামী বাংলাদেশিকে কোতল করে। পাকিস্তানি সেনার গণহত্যার সেই নারকীয় উল্লাস বিশ্বের দরবারে দেশের মুখ পোড়ায়। যদিও পাক সেনাকর্তারা আজও সেদিনের নরমেধের কথা স্বীকার করেন না। জেনারেল টিক্কা খান এবং জেনারেল খান নিয়াজির বাহিনী ৩০ লক্ষের বেশি বাঙালিকে নির্বিচারে খুন করেছিল। এবং ৪ লক্ষের বেশি বাংলাদেশি মহিলাকে ধর্ষণ করেছিল। যা পাকিস্তানের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত এক কলঙ্কজনক অধ্যায় বলে লেখা রয়েছে।