কলকাতা: কোনও মানুষ যদি দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত হন, তবে তাতে আর যাই হোক অন্য কারোর খুশি হওয়ার কোনও কারণ তো হতে পারে না। অন্তত মনুষ্য ধর্ম তাই বলে। তা সে রাজনৈতিক নেতাই হোন অথবা সাধারণ মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় (Chief Minister Mamata Banerjee) চপার থেকে নামতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, আহত হয়েছেন, পায়ে চোট লেগেছে। হাসপাতালে যাওয়ার পর তাঁর চিকিৎসা হয়েছে। তাঁকে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং বিশ্রাম নিতে বলা হয়েছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Election) সময় এই চোট দেখে বিরোধী নেতারা (Opposition Leaders) মন্তব্য করতে শুরু করেছেন। বিজেপি নেতারা বলেছেন যে, ভোট দেখে চোট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে গেছেন তাই এই সমস্ত হচ্ছে দুর্ঘটনার নাটক। আমার মনে হয় এই ধরনের মন্তব্য আর যাই হোক সুস্থ রুচির পরিচয় দেয় না। নির্বাচন আসবে নির্বাচন যাবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর লোকসভা নির্বাচন আসবে। লোকসভা নির্বাচনের পর বিধানসভা নির্বাচন আসবে। নির্বাচনী প্রচারের অনেক অস্ত্র আছে। বিজেপি বিরোধী দল হিসেবে ধাপে ধাপে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে অনেকটা বড় রাজনৈতিক পরিসর দখল করেছে। কিন্তু এরপর চোট নিয়ে কেন এত ব্যঙ্গ বিদ্রুপ? তাহলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোট পেয়েছেন বলে বিরোধীরা সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পাচ্ছেন?
আরও পড়ুন: অভিষেকের নবজোয়ারে লাভ হবে পঞ্চায়েতে?
এর আগে বিধানসভা নির্বাচনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চোট পেয়েছিলেন। হুইল চেয়ারে তিনি বিধানসভার নির্বাচনী প্রচার করেছিলেন। তারপর তিনি ২০২১-র ভোটের ফলাফল কি হয়েছিল আমরা দেখেছি। সেখানে তিনি বিজেপিকে সাংঘাতিকভাবে পর্যদুস্থ করেছিলেন। এই চোট দেখে বিজেপি তথা বিরোধী শিবির তারা আসলে ভয় পাচ্ছেন। তারা ভাবছেন যে এবারও মমতা বন্দোপাধ্যায় আহত হয়েছেন বলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার ‘ভিকটিম স্ট্যাটাস’ পাবেন। মমতার জন্য মানুষের সমবেদনা আছে। সেই সমবেদনাটা আরও বেশি উজ্জীবিত হবে। কারণ যাই হোক এটা খুব পরিস্কার যে এই চোট লাগার ঘটনাটায় বিরোধীরা যথেষ্ট চিন্তিত। তার ফলে তারা এই চোটের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক প্রচারে নেমেছে। এই চোট মিথ্যে প্রমাণ করার জন্য বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম কার্যত এক হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: দেশ ভাগের সঙ্গে কখনও উৎসব পালিত হয় না
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন একজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব যিনি কিন্তু মাটিতে পা দিয়ে চলেন। বাস্তব রাজনীতির বোধ বুদ্ধি তাঁর সাংঘাতিক। ভোটের ফল কি হবে সেটা আগাম ঘোষণা করা যায় না। তবে এটুকু বলা যায়, এখনও গ্রামীন বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ সাংঘাতিক। বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও বিজেপি ভেবেছিল যে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে সম্পূর্ণ হারিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। বাস্তবে কিন্তু সেটা হয়নি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রামের ভোট, গ্রামের জন্য নানান রকমের রাজ্য সরকারের প্রকল্প কাজ করেছে। বিজেপি এরই মধ্যে রাজনৈতিক, ধর্মীয় মেরুকরণের অস্ত্র ব্যবহার করতে চাইছে। ভোট ব্যাংকের মধ্যেও মেরুকরণের প্রভাব পড়ছে। এই প্রভাবের ভিত্তিতেও বিজেপি অনেকটা এগিয়েছে। এই প্রভাবের ভিত্তিতে বেশ কিছু আসন বিজেপি করায়ত্ব করেছে। কিন্তু এবারের পঞ্চায়েত ভোটে তার পুনরাবৃত্তি হবে নাকি পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলই সবথেকে বড় দল হিসেবে পরিগণিত তো হবেই উল্টে গোটা রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত অর্থাৎ পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতি সর্বত্রই হয়ে যাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগ্রহে সেটা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এই ৮ তারিখের নির্বাচন সেটা নিছক পঞ্চায়েত নির্বাচন নয়। সেটা ২০২৪-র আগে একটা সাংঘাতিক প্রকৃতি লড়াই। আর এই প্রকৃতি লড়াই লড়ার জন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে লড়াই সফল করেছেন তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বেশ ক’টি জায়গায় যাওয়া শুরু করেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনো নির্বাচনকেই ছোট করে দেখেন না। এই নির্বাচনেও তিনি উত্তরবঙ্গ দিয়ে প্রচারের কাজ শুরু করেছিলেন। বেশ কয়েকটা জেলায় তার যাওয়ার কথা । এই চপারের যে দুর্ঘটনা সেটা কীভাবে ঘটল, কেন ঘটল সেটা তো আজ আমাদের সকলের জানা। বেশ অনেকক্ষণ চক্কর কাটার ফলে একটা রাফ ল্যান্ডিং হয় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। এই দুর্ঘটনার ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে আঘাত পাওয়া সেটা কিন্তু আর যাই হোক তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের দুঃখের অনুভূতি সৃষ্টি করেছে। সেই কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি সহানুভূতি মানুষের অটুট। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি এই চোটের রাজনীতির মোকাবিলা কীভাবে করবে সেটাই এখন দেখার।