আফগানিস্তান থেকে শুধুমাত্র হিন্দু ও শিখদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিসঙ্গত? ভারতের মতো অন্য দেশগুলিও একই সিদ্ধান্ত নিলে কী হবে?
ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অভিবাসী জনসংখ্যা আছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, ভারতীয় অভিবাসী জনসংখ্যা ১৮ মিলিয়ন। যারা জন্মের ভিত্তিতে দেশের বাইরে বসবাস করেন। মেক্সিকোতে ১১ মিলিয়নে এবং চীন তৃতীয় স্থানে, ১০ মিলিয়ন। তারা সবাই ইসলামী/খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে বাস করেন।
সরকারের মতে ২০১৮ সালের হিসেব অনুযায়ী, প্রায় ৩২ মিলিয়ন অনাবাসী ভারতীয় ও বংশোদ্ভূত ভারতীয় দেশের বাইরে থাকেন। যাদের মধ্যে ১৫ মিলিয়ন ইসলামিক দেশে থাকেন। ফলে ইসলামিক দেশ গুলি যদি শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে ওই ১৫ লক্ষ মানুষকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
বর্তমানে, প্রায় ০.৫ মিলিয়ন ছাত্র উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপে পড়াশোনা করছে। তাঁরা ওই দেশগুলিতে বসতি স্থাপনের আশাও করেন। যদি খ্রিস্টধর্মের ভিত্তিতে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হলে তাঁদের ভবিষ্যৎ কী?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪.৫ মিলিয়ন অভিবাসী ভারতীয় থাকেন। খ্রিস্টান ধর্মের ভিত্তিতে বসবাসের অনুমতিদেওয়া হলে কী হবে? আমরা ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি হারাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফডিআই ১৩ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি এবং ভারতীয় পরিবারের অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গত ৩ বছরে, বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স প্রায় ২৪৮ বিলিয়ন বা ১৯ লক্ষ কোটি। বছরের হিসাব করলে গোল কর রাজস্বের চেয়ে বেশি। ২০২১ সালে ভারতে রেমিট্যান্স ৮৩ বিলিয়ন। যা সমস্ত করদাতার প্রদত্ত সমস্ত আয়কর থেকে ৪০ শতাংশ বেশি!
শুধু ইসলামী দেশগুলো থেকে অভ্যন্তরীণ রেমিটেন্সের মধ্যে প্রায় ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩ লাখ কোটি টাকা আসে। ২০২১ সালে উত্তর প্রদেশ এবং বিহারের দ্বারা সংগৃহীত মোট কর রাজস্ব ছিল ১.৫৬ লক্ষ কোটি টাকা। ৪টি ইসলামিক দেশে ভারতের পণ্য রপ্তানি হল ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ইসলামী দেশ গুলি একই সিধান্ত নিলে কী হবে!
ভারতে রপ্তানি, শিল্প এবং চাকরির ক্ষেত্রে কী হবে?
সাম্প্রতিক একটি ঘটনা থেকে প্রমাণ করে, আমরা কতটা আন্ত-সম্পর্কিত। বেঙ্গালুরুতে এক কঙ্গোর ছাত্রের হেফাজতে মৃত্যু কঙ্গোতে বসবাসকারী ভারতীয়দের প্রচুর সম্পদ ধ্বংস করে দিয়েছে।একটি কেলেঙ্কারিতে ভারতীয় সংযোগের কারণে ডারবানে দাঙ্গা, সম্পদ ধ্বংস এবং ৭২ জনের মৃত্যু হয়। যাদের অধিকংশই অভিবাসী ভারতীয়।
২০২০ সালের এপ্রিল- মে মাসে ইসলামোফোবিক সোশ্যাল মিডিয়া বক্তৃতার কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বহু ভারতীয়র চাকরি হারানোর এবং নির্বাসনের ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। দুবাইতে বসবাসকারী ভারতীয়রা আজও ভয়ে আছেন।
লর্ডসে একটি ক্রিকেট ম্যাচে সমস্ত ভারতীয় অভিবাসীদের (বর্তমানে ব্রিটিশ নাগরিক) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয় এবং ভারতকে সমর্থন করার জন্য এবং ইংরেজ খেলোয়াড়দের হিংসার জন্য ফেরত পাঠানো হয়? এটি একটি রক্ষণশীল এমপি নরম্যান টেবিট প্রস্তাব করেছিলেন এবং এটাকে আনুগত্য পরীক্ষা বলেছিলেন! তাই, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি হিসেবে ৩৫ মিলিয়ন ভারতীয়র জন্য আমাদের অনেক কিছু রক্ষা করার আছে। ৮৩ বিলিয়ন অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স, ৩২০ বিলিয়ন রপ্তানি, ৮১.৭২ বিলিয়ন এফডিআই কী হবে? আমাদের বৈষম্যহীনতার চ্যাম্পিয়ন হওয়া উচিত। প্রতিটি ধর্ম ভিত্তিক বৈষম্য আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করে। বুঝলেন?