শান্তিপুর: ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়! আরও একবার এই শব্দটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন এক গৃহবধূ (House Wife)। সংসারের শত বাধা পেরিয়ে ছেলের সঙ্গেই উচ্চমাধ্যমিক (Higher Secondary Examination 2023) পরীক্ষা দিতে চলেছেন লতিকা মণ্ডল। তাঁর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। নদীয়ার (Nadia) শান্তিপুর থানার (Shantipur PS) নৃসিংহপুর সরদারপাড়ার বাসিন্দা লতিকা। প্রায় ১৯ বছর আগে বিয়ে হয়। লতিকার বাবার বাড়ি নদিয়া জেলার ধুবুলিয়া থানা এলাকায়।
বিয়ের আগে থেকেই পড়াশোনার প্রতি তীব্র আগ্রহ ছিল ওই গৃহবধূর। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় উপায় হয়ে ওঠে না। ঠিক সেই রকমই একদিকে আর্থিক অনটন। অন্যদিকে মার শারীরিক অসুস্থতার কারণে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও তারপরে আর পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। এরপর আর্থিক অনটনের কথা মাথায় রেখেই লতিকার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তার পরিবার। সেই মতো শান্তিপুরের সর্দারপাড়ার এক যুবকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন লতিকা। তাঁর স্বামী কাজের সুবাদে ভিন রাজ্যে থাকেন। লতিকার দুই সন্তান। একটি পুত্র এবং একটি কন্যা রয়েছে। তাঁর বড় মেয়ে রানি মণ্ডল শান্তিপুর কলেজের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আর ছোট ছেলে সৌরভ পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা অম্বিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। এবার সে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে।
আরও পড়ুন: Budget Session 2023 | রাহুল, আদানি, কেন্দ্রীয় তদন্ত নিয়ে অগ্নিগর্ভ হতে চলেছে বাজেট অধিবেশন
বড় মেয়ে যখন তৃতীয় শ্রেণিতে, তখন থেকেই স্বামী বাড়িতে না থাকার কারণে গৃহশিক্ষকের বাড়িতে দিয়ে আসা থেকে শুরু করে সবকিছুই নিজেই সামলাতেন লতিকা। তখন মেয়ের পড়া সামলাতে সামলাতে পড়াশোনার দিকে নতুন করে আগ্রহ জাগে তাঁর। নিজের পুরনো ইচ্ছা পুনরায় জেগে উঠতে শুরু করে গৃহবধূর। এক আত্মীয়র উদ্যোগে নতুন করে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন গৃহবধূ। এরপরেই শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল স্কুলে ভর্তি হন লতিকা। ২০১৯-২০ বর্ষে মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। মাধ্যমিক পাশ করে নৃসিংহপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভর্তি হন লতিকা। এবছর ছেলে সৌরভের সঙ্গে পরীক্ষায় বসতে চলেছেন মা।
শুধু পড়াশোনা ও পরীক্ষায় বসাই শেষ নয়, প্রতিদিন সংসারের কাজ সামলে নিয়ম করে ছেলের সঙ্গে পড়তে বসেন ওই গৃহবধূ। নিজের পরিবারের তরফ থেকেও অনেকটা সাহায্য পেয়েছেন বলে জানান তিনি। পাশাপাশি বাপেরবাড়ির তরফেও অনেকেই আগ্রহ জাগিয়েছেন তাঁকে।
এ বিষয়ে গৃহবধূ লতিকা মণ্ডল বলেন, ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল আমার। পরিবারের পরিস্থিতি এবং আর্থিক অনটনের জন্য ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও তার পরে আর পড়াশোনা করার সুযোগ হয়নি। মনের ভিতর ইচ্ছা জেগেছিল যেভাবেই হোক পড়াশোনা চালিয়ে যাব। তাই বিয়ের পরে সেই ইচ্ছা সফল করতে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিই পড়াশোনা করার। তিনি বলেন, শুধুমাত্র চাকরি পাওয়ার জন্য পড়াশোনা করা নয়, শিক্ষা লাভের জন্য পড়াশোনা করা অনেক জরুরি।
তাঁর ছেলে সৌরভও অনেক খুশি। সে জানায়, নিয়ম করে মায়ের সঙ্গে একসঙ্গে পড়তে বসে। রেজাল্টে দুজনেই ভালো ফল করবে বলে আশাবাদী। আর গ্রামবাসীও মুখিয়ে আছেন পাড়া থেকে মা-ছেলের জোড়া সাফল্যে মিষ্টিমুখ করবেন বলে।