ইন্ডিয়া জোট নিয়ে বহু সন্দেহ ছিল সবার মনেই, যাঁরা জোট তৈরি করছিলেন তাঁরাও যে খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগোচ্ছিলেন তাও নয়। মূল ১৬-১৮টা দলের মধ্যের ইকুয়েশন তো খুব সহজ ছিল না কোনওদিনই। তার সবচেয়ে বড় কারণ হল যে দলেরা আজ জোটে তারা অনেকেই কংগ্রেস ভেঙে তৈরি হয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেস বা এনসিপি, কংগ্রেসের সঙ্গে এক তিক্ত লড়াইয়ের ইতিহাস এই দুই দলেরই আছে। শরদ পাওয়ার সোনিয়া গান্ধীকে যাতে প্রধানমন্ত্রী না করা হয় তার জন্য ক্যাম্পেন করেছেন, মমতা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে এমনকী বিজেপির সাহায্য নিয়েছেন। অন্যদিকে সেই স্বাধীনতার সময় থেকেই সমাজবাদী দল কংগ্রেসের বিরোধী, কংগ্রেস বিরোধিতাই এই লোহিয়াইটদের মূল রাজনীতি, লালু, মুলায়ম, নীতীশ, অখিলেশ, চরণ সিং বা আজ তাঁর পথ ধরে আরএলডি নেতা অজিত সিং, জয়ন্ত সিঙ্গেনারা সব্বাই তো মূলত কংগ্রেস বিরোধী রাজনীতি করেই উঠে এসেছেন। ওদিকে দক্ষিণে ডিএমকে-র উত্থান কংগ্রেস বিরোধী রাজনীতি থেকেই। রইল বাকি বামেরা, তাদের বইপত্তর, পার্টি প্রোগ্রামে আজও কংগ্রেস শ্রেণিশত্রু, কেউ জণগণতান্ত্রিক বিপ্লব, কেউ জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব কেউ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব করে একচেটিয়া পুঁজিপতিদের প্রতিনিধি এই কংগ্রেসকে উচ্ছেদ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। হ্যাঁ, যখন ইয়েচুরি বা ডি রাজা পাটনায় বা বেঙ্গালুরুতে ঐক্য বৈঠকও করছেন, তখনও পার্টি প্রোগ্রামে ওই উচ্ছেদ করার কথাই লেখা আছে। কিন্তু তা নাকি অনেক পরে, আপাতত ওনারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজেপিকে হারাতে চান। এবং জানিয়ে রাখি সিপিএম, সিপিআই, আরএসপির এইসব ঘোষণাপত্র লুকিয়ে রাখা নেই, ৫-১০-১৫ টাকায় কিনতে পাওয়া যায়। কিতু এতশত দ্বন্দ্ব থাকার পরেও বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে বিরোধীরা এবং তার মধ্যে ২০২৪-এ, বাংলায় তৃণমূল এবং কংগ্রেসের জোট নিয়ে কথা শুরু হয়েছে, এগোচ্ছে। সেটাই বিষয় আজকে, তৃণমূল–কংগ্রেসের মধ্যে বোঝাপড়ার কথা শুরু?
বাংলায় তৃণমূল, কংগ্রেস, বাম জোট হওয়া সম্ভব? এক কথায় উত্তর না, এরকম জোট হওয়া সম্ভব নয়। দেশে এক মহাজোটে তৃণমূল বা কংগ্রেস থাকতেই পারে কিন্তু বামেদের পক্ষে এ রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে থাকা বা তৃণমূলের পক্ষেও এ রাজ্যে বামেদের সঙ্গে থাকা এক কথায় অসম্ভব। কারণ জোট তো উপরের দু’ তিনজন নেতার মর্জিতে হবে না, তলার সারিতে সায় দরকার। বাম আর তৃণমূল নেতারা জোট করলেও সমর্থকদের জোট অসম্ভব। কিন্তু কংগ্রেস-তৃণমূল জোট সম্ভব। সেই জোট নিয়ে কথাও শুরু হয়ে গেছে সেই বেঙ্গালুরু থেকেই, এটাই খবর। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়েছেন, এ রাজ্যের নেতারা বিজেপির থেকেও তীব্র আক্রমণ রোজ চালিয়ে যাবেন আর আমি জোটের কথা বলব তা হয় না। একথা তিনি বেঙ্গালুরু যাওয়ার আগে প্রকাশ্যেই বলেছেন। বেঙ্গালুরু থেকে বলার পরে অধীর চৌধুরীর দু’ একটা ব্যতিক্রমী উক্তি ছাড়া কামান গর্জন বন্ধ এবং খেয়াল করে দেখুন আপাতত সেই আক্রমণ আর নেই। সংসদে, সংসদের বাইরে প্রতিটা বৈঠকে প্রোগ্রামে কংগ্রেসের পাশেই আছে তৃণমূল, সেদিন তো খাড়্গেজির ঘরে বৈঠকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আর অধীর চৌধুরী পাশাপাশি বসেও নিলেন।
আরও পড়ুন: Aajke | ৫ অগাস্টের ঘেরাও স্থগিত, আদালতের নির্দেশে
হ্যাঁ, কেবল দিল্লির গলি নয়, কালীঘাটের রাজনৈতিক ভরকেন্দ্র থেকেও সাফ ইঙ্গিত, হচ্ছে জোট হচ্ছে। কিন্তু আসন খুব বেশি হলে চার, তার বেশি নয়, এটাও প্রাথমিক হিসেব। কংগ্রেসের উচ্চতর নেতৃত্বের চাহিদাও এর থেকে বেশি কিছু নয়, তৃণমূলের সঙ্গে থাকলে ওই চারটে শিওর সিট। কংগ্রেস তার ট্যালি বাড়াতে চায়, তৃণমূলের সঙ্গে লড়লে হাতে থাকবে পেনসিল। অধীরবাবুরও দিল্লির রাস্তা বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে সেটা অধীরবাবুও জানেন, কাজেই ভাব ভাব ভাব রে, বুড়ো আঙুল ঠেকানো হয়েছে কি না জানি না, কিন্তু আসন রফা নিয়ে কথা চলছে। মমতার প্রাপ্তি কী? মুসলমান ভোটের সামান্য ছিটকে যাওয়া আটকে যাবে, বাকি ৩৮টা আসনের ৩৮টাই জেতার জন্য নামবেন মমতা, তিনিও জানেন এটা নাম্বার গেম। কিন্তু তার আগে কি রাজ্য নেতৃত্বের ফের বদল আসন্ন? সেটাই আপাতত জল্পনার বিষয়। একটা মত হল এভাবে অধীরের অপসারণ হলে কংগ্রেস কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে, ওনাকে রেখেই জোট হোক, দ্বিতীয় মত হল, এই জোট অধীরকে রেখেই করা হলে তা অধীরের পক্ষে বিব্রতকরই হবে, কাজেই ওনাকে দিল্লিতে আরও দায়িত্ব দিয়ে প্রদীপবাবুর মতো কাউকে আনা হোক। এসব নিয়ে জল্পনা হতে থাকবে কিন্তু রাজ্যের জোটে সিলমোহর পড়েছে এটাও সত্যি। আমরা আমাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম, এ বাংলায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোট কি সম্ভব? এ রাজ্যে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট কি হওয়া উচিত? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
বাংলাতে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট বিজেপিকে চাপে রাখবে, তেমন জোট সত্যিই মসৃণভাবে কাজ করলে ৪২টা আসনের একটাতেও বিজেপি নিশ্চিত জিতবেই, এমন কথা বলতে পারবে না। অন্যদিকে বামেরা দৃশ্যত একা হয়ে পড়লেও, বামেদের মধ্যে এক আদর্শবোধ ফিরে আসতে বাধ্য, কেবল বাম ঐক্য নিয়েই মানুষের লড়াই লড়তে হবে গোছের কথাবার্তা উঠে আসবে। দলের মধ্যে যেন তেন প্রকারেণ বাম কং আব্বাস ঐক্যের কথা যাঁরা তোলেন তাঁরা পিছু হঠতে বাধ্য হবেন। সাগরদিঘি এপিসোডের পরেই এ প্রশ্ন উঠেছে, এবার রাজ্যস্তরে কংগ্রেস তৃণমূল জোট হলে সেই প্রশ্ন বাম মহলে উঠবে, বর্ধমানের অরিন্দম কোঙার গণশক্তিতে লেখার রসদ পেয়ে যাবেন।