দিনহাটা: এই বাংলার চিত্তে ভয় এবং শির নত বলে ফের বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (CV Ananda Bose)। শনিবার দিনভর হিংসা দীর্ণ কোচবিহার ঘুরে পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে রাজনৈতিক সংঘর্ষে আক্রান্তদের পরিবার ও মৃতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বললেন রাজ্যপাল। পরে তিনি বলেন, এই বাংলার চিত্তে এখন ভয় এবং শির নত। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই পরিস্থিতি বদলাতে হবে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে আমি হিংসাকবলিত সমস্ত এলাকা ঘুরে দেখব। মানুষ ভয় কাটিয়ে সুষ্ঠু ভাবে ভোট দিক এটাই আমি চাই।
শনিবার সব সূচি বাতিল করে কোচবিহারের সফরে যান রাজ্যপাল। এদিন সেখানে সাধারণ মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। গত ২৭ জুন কোচবিহারের গীতালদহ গ্রামে গুলি চলে। তৃণমূল কর্মী বাবু হক সেই গুলিতে নিহত হন। এদিন কোচবিহারের নিহত বাবু হকের পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন রাজ্যপাল। সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দেন। চকচকির বেসরকারি হাসপাতালে যান। পুঁটিমারিতে নিহত বিজেপি কর্মীর বাড়িতেও যান। এরপর দিনহাটাতেও নিহত বিজেপি কর্মীর বাড়িতে যান। বলেন, কলকাতার রাজভবনে পিস রুম তৈরি হয়েছে। রাজভবন রুম এবার থেকে ভ্রাম্যমাণ ভবন হিসাবেও কাজ করবে।
এর পর সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, সারা দিন যা যা দেখলাম, বিভিন্ন দলের বিধায়ক, সাংসদ থেকে পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থীদের কাছে যা যা শুনলাম, তা যথেষ্ট উদ্বেগের। রাজ্যপাল বলেন, এই বাংলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। তিনি লিখেছেন, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির’। কিন্তু বিভিন্ন অশান্ত এলাকা পরিদর্শনের পর আমি বিস্মিত হয়েছি। আমি মর্মাহত। সন্তানহারা মা, স্বামীহারা স্ত্রী, পিতৃহারা শিশুকে দেখলাম। কোচবিহারের সাধারণ মানুষকে আতঙ্ক গ্রাস করেছে। এই দৃশ্যে আমি ব্যথিত। এই বাংলার চিত্তে ভয়ে এবং শির নত। কিন্তু গণতান্ত্রিক পরিবেশে এমনটা অভিপ্রেত নয়। এমনটা আমি প্রত্যাশাও করিনি। রাজ্যপাল বোস জানান, হিংসায় যুক্ত প্রত্যেক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হবে। এ নিয়ে প্রশাসনকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
আরও পড়ুন: Teesta Setalvad | তিস্তার আগাম জামিন খারিজ গুজরাত হাইকোর্টে, সুপ্রিম কোর্টে সমাজকর্মী
পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Vote) মনোনয়ন পর্ব শুরু হতেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক হিংসা শুরু হয়। প্রথম দিনই মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে এক কংগ্রেস কর্মী হিংসার বলি হন। হিংসার ঘটনা ঘটেছে মুর্শিদাবাদের ডোমকল, রানিনগর, উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর, চোপড়া সহ বিভিন্ন জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। রাজ্যপাল ক্যানিং এবং ভাঙড়ে ছুটে গিয়েছেন। তিনি বলেন, যেখানে হিংসা হবে আমি সেখানেই যাব। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে বসে রাজ্যপাল হিংসা বন্ধের জন্য কড়া বার্তা দেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের পাহারাদারদের হাতে যেন মৃত্যুঘণ্টা না বাজে। হিংসা পরিবেশ কোনওভাবেই বরদাস্ত নয় সেটা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি সব কিছুর উপর নজর রাখছেন। কোনওরকম অব্যবস্থা ও হিংসার বরদাস্ত করা হবে না। শনিবার তিনি বলেন, রাজভবনকে (Raj Bhavan) ভ্রাম্যমান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে প্রায়ই রবীন্দ্রনাথের কবিতার পংক্তির উল্লেখ করে বলেন, চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির। রাজনৈতিক মহলের মতে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর সেই বক্তব্যকে কটাক্ষ করেই এদিন বলেন, এই বাংলার চিত্তে এখন ভয়। বাংলার শির এখন নত। যেভাবে হিংসার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, রাজ্যপাল তারই উল্লেখ করেছেন।