কলকাতা : ১৫ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট। ধোঁয়া-ভরা ঘোরানো সিঁড়ির সুড়ঙ্গ। ভাসতে ভাসতে উপরে উঠে যাচ্ছে একটা প্রজন্ম… সময় পেরিয়ে যায়। জীবনে বিকেলের রোদ এসে পড়ে। আবার ভাসতে ভাসতে এক প্রজন্ম নীচে নেমে আসে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভিড় করেছে এই ঠিকানায়।
কত স্বপ্ন দেখেছে, দেখেছে কত স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া। ১৫ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট। ব্রিটিশ কলোনির আভিজাত্য নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সাবেকি নাম অ্যালবার্ট হল। আমাদের কাছে কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজ। কিন্তু কফি হাউজের সেই আড্ডাটা কি আর আছে?
সোনালি বিকেলের সেই গান আবার ফিরে এসেছে নতুন স-র-গ-ম নিয়ে। আড্ডা আবার জমবে। চৌকো টেবিলে ধোঁয়া-ওঠা ইনফিউসনে চুমুক দিতে দিতে জমবে তর্ক-বিতর্ক। নিখিলেশ ফিরছে দেশে। আরও সব গানের বন্ধুরাও ফিরছে আড্ডায়। চারমিনার নেই। কিন্তু মেজাজটা তো আছে। গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার আর নেই। নেই মান্না দে। কাগজে লেখা নাম সুপর্ণকান্তি ঘোষ মুছে গিয়েছে। তবে টেবিলটা এখনও আছে। আছে সেই সাদা পেয়ালা আর পিরিচ। আছে চামচের টুংটাং। আছে সেই সুর। সেই কথা। কফি হাউজের সেই আড্ডার দ্বিতীয় পর্ব।
‘জীবনে চলার পথে হারিয়ে গিয়েছে অনেকেই আজ আর নেই।’ এই কথা লেখা হয়েছিল অনেক আগেই। তখনও বেঁচে ছিলেন প্রবাদপ্রতীম গায়ক মান্না দে। শেষ বয়সের দিকে শুধু মাত্র ‘কফি হাউজ’ বলেই গাইতে রাজি হয়ে যান। সুর দেন সেই সুপর্ণকান্তি ঘোষ। প্রথম বার যেমনটা দিয়েছিলেন। তবে এ বার একটু অন্য রকম। নস্টালজিক রোদ মাখা। একটা ফোনেই সেই গানের কথায় আড্ডা মারতে রাজি হয়ে যায় সুজাতা। তবে অমল আসতে পারবে না। আসবে না রমা রায়ও। ওরা কবেই অতীত।
আরও পড়ুন – চক-ডাস্টার-ব্ল্যাক বোর্ড, ক্লাসরুমের দেওয়াল জুড়ে আজ শুধুই বন্ধুদের গল্প
কফি হাউজের আড্ডার দ্বিতীয় অংশ রেকর্ড করার পর অবশ্য খানিক হতাশই ছিলেন মান্না দে। নাকি বলেছিলেন ‘বাঙালি তো জানতেই পারল না এই গানের কথা।’ ২০১৩, ২৪ অক্টোবর সংগীত জগৎ থেকে বিদায় নেন তিনি মহা-সিন্ধুর ও পারে। তার পর থেকে খানিক অবহেলাতেই পড়েছিল যুগান্তরের এই গান। আবার সে ফিরে এসেছে। সোশাল মিডিয়ার দৌলতে। শেয়ার হচ্ছে। ভাবাচ্ছে। নস্টালজিক করে দিচ্ছে। পুরনো রোদ্দুর ফিরে যেন আবার ফিরে আসছে ১৫ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটে। ভাসতে ভাসতে একটা প্রজন্ম উপরে উঠে যাচ্ছে।