কলকাতা: সোনা হাতানোর মতলবে নিজেকে জখম করে সটান থানায়। তদন্তে নেমে পুলিস জানতে পারল, অভিযোগকারীই গল্প ফেঁদে সোনা হাতাতে চেয়েছিল। ওডিশার একটি গয়নার দোকানের কর্মচারী নীতিশ রায় বংলাদেশ থেকে আসা সোনা মালিকের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন। অনেক সময়ই তার কাছে বেশ কিছু সোনা থাকত। এবার সেই সোনা হাতাতেই মতলব ফাঁদেন নীতিশ। নিজেকে জখম করে থানায় গিয়ে বলেন, তাঁকে মারধর করে সোনা নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। তদন্তে নেমে পুলিসের সন্দেহ তার দিকেই পড়ে। নীতিশ এবং তার ভাইকে গ্রেফতার করে গিরীশ পার্ক থানার পুলিস।
সোমবার রাতে গিরীশ পার্ক থানায় মাথায় আঘাত নিয়ে পৌঁছন নীতীশ রায় নামের ওই অভিযুক্ত। পুলিসকে তিনি জানান, ট্যাক্সি করে দুই দুষ্কৃতী এসে সিংহীবাগানের অফিস থেকে সোনা লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে। লুঠ হওয়া সোনার পরিমাণ প্রচুর। নীতিশ এও জানান, চুরির সময় দুষ্কৃতীদের বাধা দিতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সজোরে তাঁর মাথায় আঘাত করে প্রায় দেড় কেজি সোনা চুরি করে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা।
অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর তদন্তে নামে পুলিস। সিংহীবাগানের অফিসে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন পুলিস আধিকারিকরা। তাঁরা জানান, কোনওরকম চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পাননি। তারপর সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ট্যাক্সি করে দুজন ওই অফিসে ঢোকে। কিছুক্ষণ পর ওই অভিযুক্ত সহ আরও একজন ট্যাক্সিতে উঠে আবার চলে যায়। কিন্তু সেখানে কোনও ধ্বস্তাধ্বস্তি-মারামারির ঘটনা ঘটেনি।
আরও পড়ুন: Bankura Body: কোতুলপুরে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার, ঘোলাজলে মাছ ধরতে পথে বিজেপি
এরপর পুলিসের পুরো সন্দেহ যায় নীতিশের দিকে। পুলিসের দাবি, নীতিশের বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়ে। মিথ্যে ডাকাতির গল্প ফাঁদছেন তিনি, তা জেরাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়। এর পর ম্যারাথন জেরা শুরু হলে ভেঙে পড়েন নীতীশ। স্বীকার করেন, লুঠের গল্প সবটাই ভুয়ো। আসলে সোনা লুঠ করেছেন তিনি নিজেই। সেই লুঠ হওয়া সোনা লুকোতে সাহায্য করেছেন তার ভাই নিতিন। নীতিশ জানান, বাংলাদেশ থেকে আসা সোনা ওডিশায় মালিকের কাছে দিয়ে আসেন নীতিশ। কিন্তু এবার দেড় কেজি সোনা নিজেই সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। তাই কোনওরকম অশান্তি ঠেকাতে আগেভাগেই পুলিসের দ্বারস্থ হন। চুরির গল্প সাজিয়ে নিজের মাথা ফাটিয়েই হাজির হন থানায়।
এর পর রাতেই তল্লাশি চালায় পুলিস। উল্টোডাঙা রেল আবাসনের কাছে একটি ক্লাব লাগোয়া পরিত্যক্ত ঘর থেকে উদ্ধার হয় ওই বিপুল পরিমাণ সোনা। নীতীশ এবং নিতিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিস।