কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: একে কোভিড, তার উপরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বের দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলির কাছে অভিশাপ ডেকে এনেছে। শুধু তারাই বা কেন, কোভিড ও যুদ্ধের সরাসরি প্রভাবে প্রবল খাদ্যাভাব, অর্ধাহার এবং আকাশ ছোঁওয়া বাজারদরে ধুঁকছে শক্তিধর দেশগুলিও। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে, দেশের মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে বিদেশে রফতানি বন্ধ করে দেওয়া। ভারতসহ প্রায় ১৯টি দেশ যুদ্ধ শুরু হওয়া ইস্তক খাদ্যপণ্য রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। যার প্রত্যক্ষ ফল পড়েছে বিশ্ববাজারে। আচমকা বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। যার ফলে উন্নতিশীল দেশগুলিতে অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ দানা বাঁধছে। আর এসবের মূলে ভারতসহ অন্যান্য দেশের রফতানি বাণিজ্য হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ার কারণেই ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
গত এপ্রিলের ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করলেন, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন যে গম সরবরাহ করতে পারছে না, ভারত তা পূর্ণ করবে। ভারত গম রফতানির পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে। এমনিতে ভারত খুব সামান্য পরিমাণ গম সরবরাহ করে। কারণ এদেশে যা ফসল হয়, তা দেশের চাহিদা পূরণ করার পর বিশেষ কিছু থাকে না। তারপরেও ১২ মে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়ে দিল, ৯টি দেশে প্রতিনিধি পাঠিয়ে ১ কোটি টন গম রফতানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মোদির দফতর বাণিজ্য মন্ত্রককে জানিয়ে দেয়, দেশের অভ্যন্তরীণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নিরিখে গম রফতানিতে রাশ টানা হোক। নাহলে দেশে খাদ্যাভাব দেখা দেবে। যুক্তি হিসেবে বলা হল, প্রবল গরমে ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। রফতানি বন্ধ না-করলে অবস্থা সামাল দেওয়া মুশকিল হতে পারে। ভারতের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে পরদিন সকালেই শিকাগোর বাজারে গমের দাম প্রায় ৬ শতাংশ বেড়ে যায়।
অথচ মোদিই তার কয়েক মাস আগে জনসভায় জোর গলায় ঘোষণা করেছিলেন, ভারত এখন এত খাদ্যশস্য উৎপাদন করে, যারা বিশ্বের অন্যান্য দেশেও তা সরবরাহ করতে পারে। তাঁর কথায় ছিল, গরিব দেশগুলির মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে দেশ। কিন্তু কোভিডের কারণে গোটা বিশ্বে যখন অর্থনীতিতে গভীর ক্ষত হল, তখন প্রায় একসঙ্গে দিল্লি থেকে কুয়ালালামপুর, বুয়েনস আইরেস থেকে বেলগ্রেড সকলেই খাদ্য রফতানি বন্ধ করে দিল। এরসঙ্গে দোসর হিসেবে দেখা দিল চরম আবহাওয়া। কোথাও অতিবৃষ্টি, তো কোথাও খরা। কোথাও দাবানল তো কোথাও বন্যা। যার ফলে গোটা পৃথিবীতেই এখন খাদ্য সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। যা আগে কখনও হয়নি।
আরও পড়ুন: Boris Johnson: শিল্প বিপ্লবের জনক ব্রিটেনে সংকটে ইস্পাত কারখানাগুলি
রাষ্ট্রসঙ্ঘের একটি রিপোর্ট বলছে, খাদ্য সঙ্কটে ভুগছেন বিশ্বের এক বিশাল সংখ্যক মানুষ। ২০১৯ সালের পর থেকে এই সংখ্যাটি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ২৭ কোটি ৬০ লক্ষে পৌঁছেছে বলে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম এপ্রিলে জানিয়েছে। এর মূল কারণ তাদের পক্ষে এত দাম দিয়ে খাবার কেনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তাদের জীবনধারণের মানও অনেক নেমে গিয়েছে।
বিশ্বে যখন নিদারুণ খাদ্য সঙ্কট চলছে, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী সকলের মুখে অন্ন জোগানের মতো চমক দিয়েও পিছিয়ে এসেছেন। দেশের বাণিজ্য মন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে, তিনি এ বিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের সঙ্গে কথা বলবেন। খাদ্য রফতানির আগে ভারতের নিজের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরবেন তাদের কাছে। কারণ, ভারতের কাছে দেশের আগে দেশের মানুষের সুরক্ষা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোখা এবং মজুতদারি বন্ধ করাটাই জরুরি।