কলকাতা: সুস্মিতার বাড়ির সবাই দীর্ঘদিন ধরেই চিনত পঙ্কজকে। তাই রবিবার যখন সে প্রেমিকা সুস্মিতার বাড়িতে আসে, তখন ঘূণাক্ষরেও কেউ কল্পনা করতে পারেনি পঙ্কজই তার প্রেমিকাকে খুন করে চলে যাবে। পরিবারের সঙ্গে দুপুরের খাওয়াদাওয়া। গল্পগাছার জন্য দুজনের আলাদা ঘরে চলে যাওয়া। সবই যেন স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু তার মধ্যেই পঙ্কজ এত বড় কাণ্ড ঘটিয়ে চলে যাবে তা কেউ ভাবেনি। ২৬ বছরের সুস্মিতা দাসের সঙ্গে পঙ্কজ দাসের দীর্ঘদিন ধরেই প্রেম ছিল। কর্মসূত্রে পঙ্কজ আন্দামানে থাকায় কলকাতায় সুস্মিতা আর একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এটাই সন্দেহ করে সুস্মিতাকে বারবার বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ার পরও সে রাজি না হওয়ায় প্রেমিকাকে খুন করেছে পঙ্কজ।
পুলিসি জেরায় অভিযুক্ত জানায়, ওই তরুণীকে গলা টিপে খুন করেছে সে। মৃতার পরিবার প্রথম থেকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছিল প্রেমিক তথা হবু স্বামীর দিকে। রবিবার প্রেমিক বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরই অচৈতন্য অবস্থায় তরুণীকে উদ্ধার করেন পরিবারের সদস্যরা। ওই প্রেমিকের বিরুদ্ধে গড়ফা থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করে মৃতার পরিবার। পুলিস অভিযুক্তকে প্রথমে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে খুনের কথা স্বীকার করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিস জানায়, মৃত তরুণী গড়ফা এলাকার বাসিন্দা। দীর্ঘ বেশ কয়েকবছর ধরে হাবড়ার বাসিন্দা পঙ্কজ দাসের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি তাঁদের বিয়েও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। রবিবার দুপুরে হবু স্ত্রীর বাড়িতে যান পঙ্কজ। তরুণীর বাড়িতে দীর্ঘক্ষণ ছিলেন তিনি। দুপুরে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়াও করেন। এরপর বিকেলে ৪ টা নাগাদ ফিরে যান পঙ্কজ।
প্রেমিক চলে যাওয়ার পর মেয়ের ঘরে ঢুকে তরুণীর পরিবারের লোকেরা গিয়ে দেখেন, অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় বাঙুর হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, প্রেমিক পঙ্কজই খুন করেছে তরুণীকে।
আরও পড়ুন: Siliguri Police: যুবককে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ, ক্লোজ পুলিস আধিকারিক
জিজ্ঞাসাবাদে পঙ্কজ জানান, দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কে বাদ সেধেছিল আর এক যুবক। সুস্মিতাকে বারবার বিয়ের কথা বললে রাজি হয়নি সে। পঙ্কজ জানতে পারেন, অন্য কোনও ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে মেয়েটি। তাই বিয়ের জন্য কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। তা নিয়ে ফোনে মাঝেমধ্যেই ঝামেলা হত তাদের মধ্যে। কিন্তু নাছোড়বান্দা পঙ্কজ বিয়ে করার জন্য আন্দামান থেকে চলে আসে গড়ফায় মেয়েটির বাড়িতে। মেয়েটিকে বিয়ের জন্য জোরজার করাতে সামনের ডিসেম্বরেই বিয়ের দিন স্থির করে পরিবার। তারপর নিজের বাড়ি হাবড়ায় চলে যান পঙ্কজ।
রবিবার দুপুরে দেখা করার বাহানায় গড়ফায় মেয়েটির বাড়িতে আসেন পঙ্কজ। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন। তারপর শরীর খারাপ লাগছে বলে উপরের ঘরে ঘুমোতে যান। মেয়েটি উপরের ঘরে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। দীর্ঘ ঝগড়ার পর মেয়েটি স্বীকার করে, অন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে তার।
একথা শুনেই মাথার ঠিক রাখতে পারেনি পঙ্কজ। রাগে ক্ষোভে গলা টিপে মেরে ফেলে মেয়েটিকে। তারপরই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় সে।