মহাজাগতিক স্পন্দন অনুভব করল পৃথিবী। সম্ভবত নতুন এক কৃষ্ণগহ্বরের (ব্ল্যাক হোল) জন্মের ফলে তৈরি হয়েছে তেজস্ক্রিয় তরঙ্গ, যা বয়ে গেল আমাদের গ্রহের উপরেও। গত ৯ অক্টোবর অনেকক্ষণ ধরে তেজস্ক্রিয় তরঙ্গের প্রভাব লক্ষ করেছেন বিজ্ঞানীরা। ব্ল্যাক হোলের জন্ম হলে এক মহাজাগতিক বিস্ফোরণ হয় যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে গামা রে বার্স্ট। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই গামা রে বার্স্ট হয়েছে পৃথিবী থেকে ১.৯ (১৯০ কোটি) বিলিয়ন বছর আগে। এতদিন পর তার ধাক্কা এসে লাগল আমাদের সৌরজগতে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মহাজাগতিক বিস্ফোরণটির প্রভাব প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে অনুভূত হয়েছে পৃথিবীতে। বিস্ফোরণের স্পন্দন (পাল্স) আলোর গতিবেগে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আলোর মতো দ্রুতগামী হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবীতে পৌঁছতে তার সময় লেগে গেল ১৯০ কোটি বছর। এ যাবত মহাজাগতিক বিস্ফোরণগুলির মধ্যে এটি অন্যতম শক্তিশালী এবং অবশ্যই উজ্জ্বল ঘটনা দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন: BJP-Shiv Sena: আন্ধেরি পূর্বের প্রার্থী তুলে নিল বিজেপি, সহজ জয়ের পথে উদ্ধব-প্রার্থী
দুনিয়া জুড়ে সব ক’টি ডিটেকটর যন্ত্রে ধরা পড়েছে বিস্ফোরণের সৌরজগতের ওপর দিয়ে অবিশ্বাস্য গতিতে বয়ে যাওয়া এই স্পন্দন। নাসার ফার্মি-গামা রে স্পেস টেলিস্কোপ, নিল গেরেলস সুইফট অবজার্ভেটরি এবং উইন্ড স্পেসক্রাফটে আচমকাই এনার্জি স্তর বেড়ে যায়। বিশেষ টেলিস্কোপে ধরা পড়ে ‘ইউনিক’ তেজস্ক্রিয়তাও। নাসার তরফে জানানো হয়েছে, এই প্রাচীন বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট আলো অনেক তথ্য জানতে সাহায্য করবে। ব্ল্যাক হোলের জন্মরহস্য, তার আচরণ, আলোর বেগে চলার সময় পদার্থের সঙ্গে যোগাযোগে তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে অনেক কিছু জানা যাবে।
এই ঘটনা নিয়ে বিড়লা তারামণ্ডলের অধিকর্তা ড: দেবীপ্রসাদ দুয়ারি বলেন, ৯ অক্টোবর পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা দুটি টেলিস্কোপ পৃথিবী থেকে ২৪০ কোটি কিলোমিটার দূরে একটি অতি তীব্র শক্তিশালী বিস্ফোরণ দেখতে পায়। বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন বিস্ফোরণটি ঘটেছে সূর্যের তুলনায় অনেক বড় কোনও তারার মৃত্যুতে। তারার মৃত্যুতে বিস্ফোরণ হয় যাকে বলে সুপারনোভা এবং এর ফলে সৃষ্টি হয় ব্ল্যাক হোলের। সেই সময় এ ধরনের শক্তিশালী গামা রশ্মি বেরতে থাকে। বিজ্ঞানীরা বিষয়টি নিয়ে উৎসাহিত হয়ে ওঠেন কারণ এ যাবতকালে যত গামা রশ্মির বিস্ফোরণ ঘটেছে মহাশূন্যে, তার থেকেও শক্তিশালী বলে মনে করা হচ্ছে এই বিস্ফোরণকে।
একে ভাল করে দেখার জন্য ১৪ অক্টোবর জেমিনি নামে একটি শক্তিশালী ইনফ্রা রেড টেলিস্কোপ দিয়ে এটি দেখার চেষ্টা করা হয় এবং তার সম্পর্কে নানা তথ্য জানার চেষ্টা করা হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এত বড় বিস্ফোরণ বোধহয় শতাব্দীতে একটি ঘটে। আগামী কয়েক দশকেও ঘটবে বলে মনে করছেন না।