Placeholder canvas
কলকাতা রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫ |
K:T:V Clock
চতুর্থ স্তম্ভ: নীতীশ কুমার, ভারতবর্ষের নতুন রাজনীতি
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By: 
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৯:২২:৪৬ এম
  • / ১৪৯ বার খবরটি পড়া হয়েছে

নীতীশ কুমার দিল্লি যাচ্ছেন, নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন, বাম-ডান সব পক্ষের সঙ্গে, মুখে হাসি এবং কেবল বিজেপি নয়, আরএসএস নিয়েও তীক্ষ্ণ বিরোধিতা প্রত্যেক বিবৃতিতে। নীতীশ কুমারকে পালটু কুমার বলেছিলেন লালু যাদব, এমনি এমনি নয়, একবার লালুর আরজেডির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার, পরক্ষণেই ১৮০ ডিগ্রি পালটি খেয়ে বিজেপির সঙ্গে সরকার, সরকার যার সমর্থনেই হোক না কেন, মুখ্যমন্ত্রী সেই নীতীশ কুমার জী, সুশাসনবাবু। অবশ্য পালটি খাওয়া তো নতুন কিছু নয়, দেশের রাজনীতি অন্তত ১৯৭৭ থেকে এইরকমই, মধ্যে থেকে আয়ারাম গয়ারাম, নীতীশ কুমার, অর্জুন সিংদের নাম আসে বটে, কিন্তু তাকিয়ে দেখলে দেশের গোটা রাজনীতিও ওই ৭৭/৭৮ থেকে পালটি খেয়েছে বারবার। প্রত্যেকবার পালটি খেয়েছে নির্ভেজাল কুরসির জন্য, কিন্তু সামনে রাখা হয়েছে আদর্শ, ধর্মনিরপেক্ষাতা, দূর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, মানুষের রায় মেনে কাজ করার ইচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কেউ কেউ বলে থাকেন দেশের সংসদীয় রাজনীতিতে একমাত্র বামপন্থীরা নাকি এই পালটিবাজির মধ্যে নেই, তাঁরা নাকি আদর্শনিষ্ঠ দল। 

তাহলে কেবল মাথায় আনুন এই বাংলায় দুটো যুক্তফ্রন্ট সরকারের কথা। ঠিক তার আগেই কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙেছে, সিপিআই, সিপিএম তৈরি হয়েছে, একে অন্যকে গালাগালি প্রকাশ্যেই দিচ্ছেন, কেমন গালাগালি? দিল্লি থেকে এল গাই, সঙ্গে বাছুর সিপিআই। তারপর সেই শ্লোগান দিয়ে চরম দক্ষিণপন্থী সিপিআইএর বিরুদ্ধে নির্বাচনের লড়ার কদিনের মধ্যে হাত ধরাধরি করে প্রথম যুক্তফ্রন্ট, পরের বার দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট, সরকার তৈরি করলেন, মন্ত্রী হলেন। সরকার ভাঙল, আবার একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়লেন, আবার হাত মেলালেন। যুক্তফ্রন্টের কথা মনে নেই? বেশ, আসুন মাত্র কদিন আগের কথাই বলা যাক। এই নীতীশ কুমারের সরকারের বিরুদ্ধে মহাগঠবন্ধন তৈরি হল, জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিলেন সিপিএম, সিপিআই তো বটেই, সিপিআইএমএললিবারেশনের নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রশ্নে লিবারেশন তখন করন্দার খুনি সিপিএমএর হাত ধরেছিল। 

ওদিকে মুচকি হাসছিল ভবিষ্যৎ, বছর না ঘুরতেই সিপিএম, সিপিআই, সিপিআইএমএল লিবারেশনের দফতরে নীতীশ কুমার, সহাস্যে বৈঠক, বললেন বামপন্থীদের সঙ্গে তো আমার বরাবরের ভালো সম্পর্ক, নীতীশ কুমার পালটি খেলেন, বামপন্থীরা খেলেন না? বামেদের কংগ্রেসের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কের কথা বাদই দিলাম, কেবল নীতীশ কুমার পালটি খেলেন? এক হাতে তালি বাজে নাকি। তো যাই হোক আপাতত নীতীশ কুমার বিজেপি জোট, এনডিএ ছেড়েছেন, কাজেই কুছ তো পক রহা হ্যায়। আসুন দু’ধার থেকে এই ঘটনার আলোচনা করা যাক। এক, নীতীশ কুমার এনডিএ, বিজেপি জোট ছাড়লেন, এটা বিজেপির রাজনৈতিক ভবিষ্যতের উপর কী প্রভাব ফেলবে? দুই, নীতীশ কুমারের বেরিয়ে আসায় বিজেপি বিরোধী রাজনীতির সমীকরণ কতটা, কীভাবে বদলাবে? প্রথমে আসুন বিজেপির দিক থেকে দেখা যাক। হিন্দুত্ব আর জঙ্গি দেশপ্রেম বাদ দিলে বিজেপির লড়াইয়ের দুটো ইস্যু যা দেশের মানুষের সমর্থন পেয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই আর বংশানুক্রমিক রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই। বামপন্থীদের বাদ দিলে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রায় প্রত্যেকটার ওপরে এই কলঙ্কের ছিটে লেগে আছে, হয় দুর্নীতি, নয় বংশানুক্রমিক রাজনীতির কলঙ্ক। 

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ: ইদের ইফতার থেকে মহরম, বদলে গেল বিহারের সরকার

ওদিকে বামপন্থীরা বাদ পড়লেও তাদের আড়ে-বহরে প্রভাব, প্রতিপত্তি নেই। এবং এইখানে নীতীশ কুমার বিজেপির কাছে সমস্যা, তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই, তাঁর বিরুদ্ধে বংশানুক্রমিক রাজনীতির অভিযোগ নেই। কেবল হিন্দুত্ব আর কেবল জঙ্গি দেশপ্রেম কতদিন আর কাজ করবে? কাজেই নীতীশ কুমারের এনডিএ ছাড়া বিজেপির এক প্রবল প্রতিপক্ষ কে সামনে হাজির করে দিল। দু’নম্বর বিষয় যেটা, সেটা হল এনডিএর গঠন। কেন এনডিএ তৈরি হয়েছিল? তৈরি হয়েছিল কংগ্রেস বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ভোটকে এক জায়গায় নিয়ে আসার জন্য। বহু দল, বহু নেতার সমর্থন নিয়েই অটলবিহারী মন্ত্রীসভা তৈরি হয়েছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ক্রমাগত দল বেরিয়ে গেছে, শিবসেনা, অকালি দলের মতো স্বাভাবিক বন্ধুরা বেরিয়ে গেছে। রামবিলাস পাশোয়ান, জর্জ ফার্নান্ডেজ মারা গেছেন। আদবানি, যোশীরা থেকেও নেই, কাজেই জরুরি অবস্থার সময়ে যে কংগ্রেস বিরোধী নেতারা উঠে এসেছিলেন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কেউ নেই। শিবরাত্রির শেষ সলতের মত ছিলেন নীতীশ কুমার, তিনিও বেরিয়ে গেলেন, এটা বিজেপির কাছে একটা ধাক্কা। আসলে বিজেপি ভেবেছিল, আরজেডির তেজস্বী যাদবের উচ্চাকাঙ্খাই নীতিশকে এনডিএতে আটকে রাখবে। কিন্তু ঘটনা ঘটলো এক্কেবারে উলটো। 

দু’জনেই অসুস্থ, সোনিয়া গান্ধী, লালু যাদব দু’জনেই যে এই রাজনৈতিক খেলাটা খেলে দেবেন, তা বিজেপি বুঝে উঠতে পারেনি। কাজেই নীতীশ হাতছাড়া হল, এটা বিজেপির কাছে বিরাট ধাক্কা, কতখানি? তা বোঝা যাবে ২০২৪-এর ফলাফলে। কিন্তু নীতীশের বেরিয়ে যাবার ফলে নতুন করে সহযোগী দল পাওয়াটা বিজেপির কাছে বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, তা বলাই বাহুল্য। এবার আসুন বিষয়টাকে বিরোধীদের দিক থেকে দেখা যাক। ওই হাত তুলে ঐক্য বাক্য মাণিক্য ইত্যাদি যতই বলা হোক না কেন, বিজেপি বিরোধী প্রায় প্রত্যেক দলের নেতার প্রধানমন্ত্রী হবার ইচ্ছে আছে, সে সব নেতাদের সমর্থকরা শ্লোগান দেন, দেশ কা নেতা ক্যায়সা হো, তারপর নিজেদের নেতার নামটা বসিয়ে দেন, এ তো আর এমনি এমনি নয়। নেতার বা নেত্রীর মনেও সেই ফুল তো ফুটেছে। কাজেই সেখানে আরেকজন কনটেসট্যান্ট হাজির হলে কে আর খুশি হবে? কিন্তু মুখে চোখে তা দেখানো বা বোঝানোটা রাজনীতি নয়, কাজেই নীতীশ কুমার বিহার তেজস্বীর হাতে ছেড়ে দেশ ভ্রমণে বেরিয়েছেন। নীতীশ ভালো করেই জানেন যে ওনার দলের সাংসদ সংখ্যা ১০/১২/১৪ পার করবে না, অতগুলোও হলে হয়। কিন্তু নিজের সাংসদ বাড়াতে হবে।

প্রথম চাল হল জনতা দলের সবকটা টুকরোকে যদি জোড়া যায়, যদি ৭৭-এর মত এক পিস জনতা দল তৈরি করা যায়, তাহলে কিন্তু একটা বড় সাংসদ সংখ্যা তাঁর দিকে থাকবে, সে সংখ্যা ৭০/৮০/১০০-ও হতেই পারে। তিনি আপাতত সেই বড় জনতা দলের দিকে নজর দিয়েছেন। এর জন্য মুলায়ম সিং যাদব, লালু যাদব, দেবেগৌড়া, এরপর হরিয়ানায় ওমপ্রকাশ চৌতালাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন, আসুন সবাই এক হই, বিজেপি বিদায় নিক তারপর তো তেজস্বী, অখিলেশ, কুমারস্বামী, দুষ্যন্ত চৌটালারা ভারতের রাজনীতির হাল ধরুক। তো সেই দিকে নজর রেখেই তিনি পুরনো জনতা দলের নেতাদের এক জায়গায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। দ্বিতীয় দিক হল বামপন্থীদের সঙ্গে নেওয়া, এটা হল জাতে ওঠার একটা সহজ পদ্ধতি, দেখুন ক্ষমতার অলিন্দের বাইরে থাকা বামেরা, দুর্নীতির অভিযোগের বাইরে থাকা বামেরা আমাকে সমর্থন করছে। কাজেই তিনি সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের সঙ্গে মিটিং সেরে ফেলেছেন। এবং এসবের বহু আগে তাঁর দৌত্য শুরু হয়েছিল সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে, তিনি বিলক্ষণ জানেন, বিরোধী রাজনৈতিক পরিসরে কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া কিছুই হবে না। কাজেই দিল্লি গিয়ে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কথা বলে নিয়েছেন। 

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ : বাংলা কে, বাঙালিকে ভাতে মারার চেষ্টা চলছে

তাহলে বাকি? আপ আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপ-এর কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করেছেন, নীতিশ কেজরিওয়ালের উচ্চাকাঙ্খার কথা জানেন না তাতো নয়, কিন্তু তিনি কেজরিওয়ালের রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতার কথাও জানেন। উনি জানেন কেজরিওয়ালকে দেশের নেতা হতে গেলে যে সমর্থন পেতে হবে তার সিকি শতাংশও তাঁর নেই। কেজরিওয়ালও সামনের টার্ম এই চেয়ারে বসতে হবে তেমন রাজনীতি তিনি করছেন না। আচ্ছা, বলতে ভুলেছি, শরদ পাওয়ারের সঙ্গে নীতিশের যোগাযোগও কিন্তু আজকের নয়, বিহারে সরকার পড়ে যাবে, এ খবর শরদ পাওয়ারই সব থেকে আগে বলেছিলেন। তাহলে বাকি রইল কে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে মুখে যাই বলুন না কেন, দেশের প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতা জানেন, তৃণমূলের রাজনৈতিক অস্তিত্বের জন্যই তাকে বিজেপির বিরুদ্ধেই থাকতে হবে, বিজেপির পক্ষে যাওয়া তৃণমূলের পক্ষে সম্ভব নয়। কাজেই আজ হোক কাল হোক নীতীশ কুমার তৃণমূল দলের সঙ্গেও কথা বলবেন। কিছুদিন আগে পর্যন্ত প্রত্যেকেই প্রশ্ন করছিল, কে হবেন সেই হাইফেন? বিরোধী দলগুলোকে একজায়গায় নিয়ে আসবেন কে? সম্ভবত সেই কাজটা নীতীশ কুমারের ঘাড়েই পড়েছে, বিভীষণ রাবণের মৃত্যুবাণের খবর দিয়েছিলেন, নীতীশ কুমার অন্তত বছর দশেক বিজেপির সঙ্গে ঘর করেছেন, তিনি জানেন বিজেপির প্রত্যেকটা দুর্বলতা আর শক্তির ভান্ডার। বিজেপি হেরেই যাবে এমন কথা বলার সময় এখনও আসেনি, কিন্তু বিজেপি বিরোধী রাজনীতি যে দ্রুত গতিতে নতুন চেহারা নিচ্ছে, তা বিজেপির কাছে দুশ্চিন্তার বিষয় বৈকি। তবে একটা জায়গাতেই নীতীশের দুশ্চিন্তা, পালটুকুমারের তকমাটা তাঁর গায়ে বড্ড কঠিনভাবে লেগে আছে।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪
১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯ ২০ ২১
২২ ২৩ ২৪ ২৫ ২৬ ২৭ ২৮
২৯ ৩০  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

সাদা শার্টে গ্ল্যাম গার্ল ইমন
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
‘বাবু নয়, স্যার!’ নতুন উপাধি পেলেন ‘গ্ল্যামার বয়’ বেকহ্যাম
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
ইরান-ইজরায়েলের সংঘাতে সংকটে পড়তে পারে ভারত ! বাড়তে পারে জিনিসপত্রের দাম
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
উড়ানের টিকিট কাটতে গেলে এখন একটাই প্রশ্ন, ‘১১A সিট ফাঁকা আছে?’
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
আহমেদাবাদ বিমান বিপর্যয়, নিহতদের পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে টাটা গোষ্ঠী
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
৫ হাজার টাকায় 5G ফোন লঞ্চ করছে মুকেশ আম্বানির জিও!
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
সিভিক ভলান্টিয়ারকে কোমরে দড়ি বেঁধে কানধরে ওঠবোস, ভাইরাল ভিডিও
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
ঘরোয়া উপায়ে বানিয়ে ফেলুন টোনার, কীভাবে বানাবেন জানুন
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৭ হাজার ছুঁই ছুঁই
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
আহমেদাবাদ বিপর্যয়, প্রথম সাংবাদিক বৈঠক করলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
বিমান দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ কী? বিরাট মন্তব্য অরূপ রাহার
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
বন্ধ জগদ্দলের অকল্যান্ড জুটমিল, মাথায় হাত শ্রমিকদের
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
‘AI-171’, এই নাম্বার আর কোনওদিন ব্যবহার হবে না AIR INDIA-র বিমানে
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
বাড়িতে বানিয়ে নিন রথযাত্রার স্পেশাল জিলিপি
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
লাস ভেগাসের ক্যাসিনোয় ভয়াবহ বিস্ফোরণ
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team