নয়াদিল্লি: গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে বিবিসি যে দুই এপিসোডের তথ্যচিত্র (Documentary) দেখিয়েছে এবং যে সময়ে দেখানো হয়েছে, তা কোনওভাবেই ‘আকস্মিক ঘটনা নয় (Not Accidental)’। একে ‘অন্য উপায়ে রাজনীতি করা (Politics By Another Means)’ হিসেবে অভিহীত করেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (Foreign Minister S Jaishankar)। জনপ্রিয় ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ব্রিটিশ ব্রডাকাস্টিং কর্পোরেশন (British Broadcasting Corporation – BBC) আন্তর্জাতিক মহলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার (Prime Minister Narendra Modi’s Government) প্রসঙ্গে যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তারও নিন্দা (Criticism) করেছেন বিদেশমন্ত্রী।
ড: জয়শঙ্করের বক্তব্য, “একটা কথা আছে – অন্য উপায়ে যুদ্ধ (War By Other Means)। সেটাকেই এখানে ভাবুন – অন্য উপায়ে রাজনীতি। হঠাৎ করে কেন রিপোর্ট (Report), মনোযোগ (Attention) এবং মতামতের (Views) ঢেউ উঠল? এগুলির মধ্যে কোনওটা কি ফের ঘটবে না?” ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ২০০২-এর গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে বিবিসি’র বিতর্কিত তথ্যচিত্র এবং ধনকুবের জর্জ সোরোস (Billionaire George Soros)-এর সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে এই কথা বলেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: Share Market Updates: ফের পতন শেয়ার বাজারে, চিন্তিত বিনিয়োগকারীরা
২০২৪ সালে দেশে লোকসভা নির্বাচন (General Election) রয়েছে। হাতে ১৪-১৫ মাসের মতো সময়। এই অবস্থায় এবছরের শুরুতেই জানুয়ারি মাসে বিবিসি তথ্যচিত্র দেখিয়েছে গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ডকুসিরিজের ভিডিয়ো ক্লিপিংস (Video Clippings) ছড়িয়ে পড়ে। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়মের অধীনে জরুরি শক্তি (Emergency Powers Under IT Rules) প্রয়োগ করে সেসব ভিডিয়ো ক্লিপিংস বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম (Social Media Platforms) থেকে সরিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার (Central Government), যা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, যে সময় এই দাঙ্গা হয়েছিল, গুজরাতে তখন নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় ছিলেন।
বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য, ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করা হল, অথচ ১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গা নিয়ে কেন তথ্যচিত্র বানানো হল না। জয়শঙ্কর বলেছেন, “তোমাকে তথ্যচিত্র বানাতে হবে? ১৯৮৪ সালে দিল্লিতে অনেক কিছু হয়েছিল। সেসব নিয়ে আমরা কেন একটা তথ্যচিত্র দেখতে পেলাম না? আপনি মনে করেন, এটা আকস্মিক? তাহলে একটা কথা বলি – আমি জানি না, ভারতে কিংবা দিল্লিতে নির্বাচনী মরশুম শুরু হয়েছে, তবে এটা নিশ্চিত যে লন্ডন বা নিউইয়র্কে (London or New York) শুরু হয়ে গিয়েছে।” এখানে উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালে ভারতে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে (Indira Gandhi, Former Prime Minister of India) তাঁর শিখ দেহরক্ষী হত্যা করেছিল, তারপর শিক্ষ বিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল দেশে। সেইসঙ্গে বিদেশমন্ত্রী এটাও মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, ভারতে কখনও-সখনও রাজনীতি দেশের সীমার মধ্যে জন্ম না নিয়ে বাইরে থেকে আসে।
প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারিতে বিবিসি’র দুই পর্বের ডকুসিরিজ ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন (India: The Modi Question)’ দেখানো হয়। ওই তথ্যচিত্রের সিরিজে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে আঙুল তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি ২০০২ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দাঙ্গা বন্ধ করার স্বার্থে যথেষ্ট চেষ্টা চালাননি। যদিও এটাও উল্লেখ করতে হবে, মোদির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছিল, তা সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) খারিজ করে দিয়েছে গত বছর জুনে।
বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর আরও বলেছেন, “আমরা শুধুমাত্র কোনও একটা ডকুমেন্টারি কিংবা ইউরোপের কোনও দেশে দেওয়া কোনও বক্তব্য অথবা সংবাদপত্রে লেখা নিয়ে তর্কালোচনা (Debate) করছি না। আমরা রাজনীতি নিয়ে কথা বলছি, যা বাহ্যিকভাবে মিডিয়াতে দেখানো হচ্ছে।” তিনি এই প্রশ্নও তুলেছেন, ২০ বছর পর একটা বিষয়ে সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যাঁরা এইসমস্ত তথ্য বা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, বিদেশমন্ত্রী তাঁদেরকে রাজনীতির আঙিনায় আসার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তাঁর সাফ বক্তব্য, যাঁরা রাজনীতি করছেন, তাঁদের রাজনীতির ময়দানে আসার সাহস নেই। এনজিও (NGO), মিডিয়া সংগঠন (Media Organisation), ইত্যাদি নামের আড়ালে রাজনীতি করছেন তাঁরা।