Placeholder canvas
কলকাতা বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫ |
K:T:V Clock
Zakia Jafri | গুলবার্গ সোসাইটির মরচে ধরা সিঁড়িতে বিবর্ণ বোগেনভেলিয়া
দিব্যেন্দু ঘোষ Published By:  প্রীতি সাহা
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১৯ মে, ২০২৩, ০৬:৪২:৪১ পিএম
  • / ৩৭৯ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • প্রীতি সাহা

চমনপুরার গলিটা অচেনা ঠেকছিল। ঠাওর হল রংচটা নীল দরজাটা দেখে। ঠেলে ঢুকতেই একমুঠো গুমোট হাহাকার গ্রীষ্মের বাতাসে দুম করে মিশে গেল। ঝরে পড়া পাতারা সূর্যের ঝিকিমিকির সঙ্গে  খুনসুটিতে মত্ত। আমার মতো অজানা, অচেনা মানুষকে আপ্যায়নে ওদের বয়েই গেছে। পায়ে পায়ে সামনের দিকে এগোতে, শুকনো পাতার দল আন্দোলন শুরু করল। ওদের বুকে পা পড়তেই বিদ্রোহী হয়ে উঠল। উবু হয়ে বসে কান পাতলাম মাটিতে। দমবন্ধ কান্নার দাপটে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। তবুও আমি নাছোড়। আমাকে যে শুনতেই হবে সেদিনের সেই বিভীষিকাময় দিনরাত্রির কথকতা। 
হঠাত্ গুলবার্গ সোসাইটির কথা কেন? সেই মহল্লায় তো পা রেখেছিলাম প্রায় এগারো বছর আগে। তারও প্রায় দশ বছর আগে ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যালীলা আজও প্রাসঙ্গিক কেন? 2002-এর ফেব্রুয়ারিতে গুজরাতে ঘটে যাওয়া ভারতের ইতিহাসে অন্যতম ন্যক্কারজনক দাঙ্গার কথা একুশ বছর পরেও আলোচনায় কেন? সবরমতী এক্সপ্রেসের সেই আগুন, অসংখ্য করসেবকের মৃত্যুর পর গুজরাত জুড়ে চলা পাশবিক হত্যাকাণ্ড, রাজনীতির পঙ্কিল আবর্ত, ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, বিজেপি থেকে ভিএইচপি নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ, অন্তত নটি মামলা, নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পেরিয়ে দেশের শীর্ষ আদালতের দরজায় কড়া নাড়া। একাধিক ঘটনাক্রম, একাধিক মামলা, খুন করেও একাধিক অভিযুক্ত বেকসুর খালাস, সব বিতর্কের শেষে একটা মুখ মনে পড়ে। এগারো বছর আগে আমেদাবাদে বসে যে মানুষটার সঙ্গে কথা বলতে পেরেছিলাম, সম্প্রতি আরও একবার কথা বলতে বলতে পুরনো স্মৃতি ঝলসে উঠল।  চোখের সামনে দেখেছিলেন স্বামী তথা তত্কালীন কংগ্রেস সাংসদ এহসান  জাফরির নৃশংস হত্যাকাণ্ড। জাকিয়া জাফরির চোখে আজও নিরন্তর ভাসে নিদারুণ হত্যালীলার বীভত্স সব ছবি।

আরও পড়ুন: Ghum Station |   হাত তুললেই ছোঁয়া যাবে মেঘ, যাবেন নাকি এই মেঘের দেশে?  

চোখের সামনে দেখেছেন স্বামীকে খুন করে জল্লাদের উল্লাস, আগুনে ঝলসে যাওয়া একাধিক মৃতদেহ, সেই জতুগৃহের আগুন দুদশকের বেশি সময় ধরে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে জাকিয়াকে। সেই আগুন শুধু তাঁর মন পোড়ায়নি, পুড়িয়েছে তাঁর জীবনের সুখকর স্মৃতিও। হাতড়াতে গেলেই বুকের মধ্যে জ্বালা, যন্ত্রণা টের পান। আইনি ঘোরপ্যাঁচের সামনে নিজেকে নিতান্ত অসহায় মনে হয় মাঝে মাঝে, বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে, তবুও এসপার-ওসপার না দেখে ছাড়বেন না চুরাশি বছরের জাকিয়া জাফরি। এখন আর কাঁদতে পারেন না, জেদের আগুন ধিকিধিক জ্বলে চোখে, দীর্ঘ লড়াইয়ে এখন শরীর ততটা সায় দেয় না, দিনের শেষে প্রতিবার দগ্ধ হয়ে ফিরতে হয়, তবুও জাকিয়া অক্লান্ত।  স্বাধীনতা সংগ্রামী, কবি তথা প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরির স্ত্রী তিনি। এত সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন। স্বামীর খুনের পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র ছিল বলে প্রমাণ করতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জাকিয়া। তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তাঁর সরকারের মন্ত্রী, আমলা, পুলিশ আধিকারিক মিলিয়ে 63 জনের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত না করেই সকলকে ক্লিনচিট দেওয়া  হয়েছে বলে অভিযোগ জাকিয়ার। কথায় কথায় ফের 21 বছর আগে ফিরতে চাইলেন জাকিয়া। আমিও ফিরে গেলাম 11 বছর আগের দুপুরে।

আমেদাবাদের উত্তরে চমনপুরা মূলত নিম্ন-মধ্যবিত্ত মুসলিম অধ্যুষিত। উঁচু দেওয়াল বিশিষ্ট গুলবার্গ সোসাইটি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মনে হয়েছিল স্থানীয়দের। প্রায় দুশো মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু গুলবার্গ সোসাইটি জতুগৃহে পরিণত হলে তাতে পুড়িয়ে মারা হয় অন্তত 69 জনকে। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা 39। ছাইয়ের স্তূপে বহু মানুষের দেহের অবশিষ্টাংশও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই গুলবার্গ সোসাইটিতেই থাকতেন এহসান, জাকিয়া। স্বাধীনতা সংগ্রামী, আইনজীবী, সাংসদ এহসানকে এলাকার সবাই সম্ভ্রম করেই চলতেন। 1985 দাঙ্গার সময় তাঁর পরিবারকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। তাই গোধরা কাণ্ডের পর এলাকার মানুষ গুলবার্গ সোসাইটিতে মাথা গুঁজতে ছুটে যান। সকাল সাড়ে 7টা নাগাদ প্রায় দুশো জন মানুষ সেখানে আশ্রয় নেন। তদান্তীতন গুজরাত সরকারের শীর্ষ আমলা থেকে পুলিশের শীর্ষ আধিকারিক, এমনকী দিল্লিতেও ফোন করে সাহায্য প্রার্থনা করেন এহসান। গুলবার্গ সোসাইটির বাইরে তখন উন্মত্ত জনতার ভিড়। ভেসে আসতে থাকে হুমকি। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ আমেদাবাদের তত্কালীন পুলিশ কমিশনার গুলবার্গ সোসাইটিতে পৌঁছন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুলিশ পাঠাচ্ছেন বলে আশ্বস্ত করে বেরিয়ে যান তিনি। না, পুলিশ আর আসেনি। গুলবার্গ সোসাইটির অদূরেই দাঁড়িয়েছিল পুলিশ ভ্যান। তারা নড়েনি। এর পর একে একে জাকির বেকারিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় একটি অটো। তারপর হুড়মুড় করে সোসাইটিতে ঢুকে পড়ে উন্মত্তের দল। রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। জাকিয়া বলেছেন, মহিলাদের দোতলার ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এহসান। ঘরের ভেতর থেকে লাগাতার ফোন করে পুলিশের কাছে সাহায্য চাইতে থাকেন। কিন্তু পুলিশ আসেনি। সোসাইটির তিন তরুণীর সঙ্গে  অভব্য আচরণ করতে থাকে উন্মত্তের দল। বন্ধ দরজার ওপার থেকে হামলাকারীদের টাকার  লোভ দেখান এহসান। যদি তাদের নিরস্ত্র করা যায়। সেই মতো দরজা খুলে উন্মত্ত জনতার হাতে টাকা তুলে দিতে যান এহসান। তাঁকে টেনে বের করে বেধড়ক মারধর করা হয়। তারপর ওপর থেকে নীচে, আড়াআড়িভাবে দেহ টুকরো করা হয় বলে জাকিয়ার দাবি। একটা একটা করে দেহা্ংশ আগুনে ছুড়ে ফেলা হয়। প্রায় 9 ঘণ্টা পর র্যাফ আসে গুলবার্গ সোসাইটিতে। ততক্ষণে 69টা শরীর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। এহসান জাফরি ছাড়াও তাঁর তিন ভাই ও দুই ভাইপোকেও খুন করা হয়।

সেই ঘটনার দশ বছর পর সেই চৌহদ্দিতে পা রেখেছিলাম। পুড়ে যাওয়া দেওয়াল, পুড়ে ঝামা হয়ে যাওয়া এসি, তক্তাপোশ, সাইকেল, দুচারটে ঘটিবাটি তখনও ব্যবহারকীদের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। একটা শিরিষ গাছ তার শুকনো ক্ষয়ে যাওয়া শরীর নিয়ে তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে। যে সিঁড়ি দিয়ে এহসান জাফরিকে টানতে টানতে নামিয়ে এনেছিল নরপশুরা, সেই লোহার সিঁড়িতে বড্ড মরচে পড়েছে। সিঁড়ি বেয়ে ওঠার চেষ্টা করেও নিজেকে নিরস্ত্র করলাম। এক অদ্ভুত মায়াকান্না পিছলে নামল সিঁড়ির হাতল বেয়ে। সিঁড়ির কয়েক ধাপ ওপর থেকেই ঝাড় হয়ে ফুটে রয়েছে বোগেনভিলিয়া। কিন্তু বড় বিবর্ণ।
               প্রিয়জন সরে যায় সঞ্চিত জলের কাছে
              নদীর লাবণ্য খায় গ্রীষ্মের লাল জিভ
               মাটিতে ফাটল ধরে সম্পর্কের আগে
               ইঁদুরের গর্তে জমে কালনাগিনীর বিষ
               পৃথিবী বদলে গেছে চারপাশে, জমা হয় দীর্ঘ প্রতীক্ষা
               নিরুদ্দেশ সংবাদের ভিড়
               রাস্তার ধুলো উড়ে এসে বিছানায় স্থায়ী হয়,
              জানলায় ঘর বাঁধে  মাকড়সার জাল,
               আমিও তাদের মতো ওরপ্রোত ঘুনপোকা
               দিনরাত কটর কটর…
               সেই সব ভোলাতে চায় বোগেনভেলিয়ার ঝাড়
               জ্বেলেছে আগুন সে, আমার জন্য আজ
               তাকে ছেড়ে কোথাও যাব না।

ওই সিঁড়ির আনাচে কানাচে বোগেনভেলিয়ায় রং লাগত। জল দিতেন জাকিয়া, রঙিন ক্যানভাসে দুর্মর লাইন উড়ে এসে চুপটি করে বসত। উর্দু পত্রিকা করতেন এহসান। কবিতা লিখতেন।  চোখের সামনে হঠা্ত্ হাওয়ায় ভেসে এল এক বিবর্ণ ডায়েরির পাতা। আবেগ দিয়ে লেখা কয়েকটা লাইন। পড়ার চেষ্টা বৃথা গেল। কান্নার জলে ধুয়ে গেছে কালি। কী লিখতে চেয়েছিলেন এহসান? জাকিয়াকে লড়াইয়ের শক্তি জোগাতে চেয়েছিলেন? এহসান সাহেবের ছেলে তনভীর হজ করে এসে হাজি হয়েছেন।  ছেলেকে নিয়েই লড়তে চান জাকিয়া, যতদিন দেহে প্রাণ আছে, এহসান শক্তি দিচ্ছেন জীবন-মৃত্যুর অন্তরাল থেকে ।  গুলবার্গ সোসাইটির মরচে ধরা সিঁড়িতে বোগেনভেলিয়ার বিবর্ণ পাতারা যেন চোখের সামনে থেকে সব রং ধুয়ে মুছে নিঃস্ব করে দিচ্ছে চরাচর । জাকিয়ার চোখে  আগুন  জ্বলছে ।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১ ১২
১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯
২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫ ২৬
২৭ ২৮ ২৯ ৩০  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

2020 Delhi Riots : বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে ফের তদন্তের নির্দেশ
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
ঈদে রীনার সঙ্গে সেলফি কিরণের,এন্ট্রি নেই গৌরীর ! আমির কোথায়!
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
ঝুঁকিতে কলকাতা, ভূমিকম্পের তছনছ হতে পারে গোটা শহর!
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
টিকল না বিরোধীদের আপত্তি, বুধবারই সংসদে পেশ হবে ওয়াকফ বিল
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
গুজরাটে বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, মৃত ১৮, বাড়তে পারে সংখ্যা
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
৮৯ বছর বয়সে ধর্মেন্দ্রর চোখে অস্ত্রোপচার সঙ্গে নেই নিজের কেউ !
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
আওরঙ্গজেবপুর হল শিবাজীনগর! ফের ১১ স্থানের নাম বদল বিজেপির
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
প্রয়াগরাজে বুলডোজ মামলা: সুপ্রিম ভর্ৎসনা, ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
দর্শক টানছে না ‘সিকন্দার’, ঈদের দিনে বুলেটপ্রুফ গ্লাসের ওপারে ভাইজান!
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
বিমসটেক বৈঠকে যোগ দিতে এবার ব্যাংকক যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, বৃহস্পতিবার রওনা
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
নদীতে হাঁটু সমান জল, হাত দিলে উঠে আসছে কার্তুজ
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
“কথা না শুনলে শাস্তি পাবে,” রাশিয়াকে কেন একথা বললেন ট্রাম্প?
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
ঘিবলি আর্টে মজলেন অমিতাভ
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
পাথরপ্রতিমা বিস্ফোরণ নিয়ে এবার কী বললেন দিলীপ ঘোষ?
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
মা-মেয়েকে নিয়ে গল্প বলবে ‘পুরাতন’? প্রকাশ্যে ট্রেলার
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team