২৫-শে জুন। বলা বাহুল্য, ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে ‘রেড লেটার ডে’। কেউ কেউ বলেন ভারতীয় ক্রিকেটের স্বাধীনতা দিবস, কেউ আবার বলেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘নবজাগরণ’। ১৯৮৩ সালের এই বিশেষ দিনেই বিশ্বজয়ী হয়েছিল ভারত। ক্লাইভ লয়েডের শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে অসাধ্য সাধন করেছিল ‘কপিলস ডেভিলস’। ফাইনালে ৩ উইকেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন মদনলাল। যার মধ্যে ছিল ভিভ রিচার্ডস এবং ডেসমন্ড হেইনসের উইকেটও। বিশ্বকাপে সর্বমোট ১৭টি উইকেট নিয়েছিলেন। বিশ্বজয়ের চার দশক পূর্তিতে কলকাতা টিভি-র প্রতিনিধি জয়জ্যোতি ঘোষের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ৮৩-র বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক মদন লাল।
জয়জ্যোতি: ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের চার দশক পূর্ণ। কীভাবে মনে করতে চাইবেন এই দিনটিকে?
মদন লাল: স্মৃতিতে এখনও ভীষণ টাটকা। ভারতীয় ক্রিকেটারেরা সেদিন নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন। আজ ভারতীয় ক্রিকেট কোথায় চলে গিয়েছে! শুরুটা কিন্তু আমরাই করেছিলাম। কত নতুন নতুন ভারতীয় ক্রিকেটার এসেছে। আমার মনে হয়না ভারতীয় ক্রিকেটে কখনও প্রতিভাবান ক্রিকেটারের অভাব হবে বলে।
জয়জ্যোতি: সত্যি করে বলুন, আপনার প্রথম কখন মনে হয়েছিল যে এবারে আমরা সেই অসাধ্য সাধন করতে চলেছি যেটার কল্পনা বিশ্বকাপের আগে ভারতের অতি বড় ক্রিকেট ভক্তও করেননি…
মদন লাল: যখন শেষ উইকেটটি (মাইকেল হোল্ডিং) মোহিন্দর অমরনাথ নিলেন, ঠিক সেই সময়েই মনে হয়েছিল(হাসি)। ক্রিকেটে শেষ বল না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যায় না। তাই যতক্ষণ না শেষ উইকেটের পতন হচ্ছে, আমরা যথেষ্ট সতর্ক ছিলাম। কারণ একটা ছোট পার্টনারশিপও বিশ্বকাপ আমাদের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারতো।
জয়জ্যোতি: বিশ্বকাপ ফাইনালে ভিভ রিচার্ডসের উইকেটটাই ভারতের জয়ের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। যেই মহামূল্যবান উইকেটটি নিয়েছিলেন আপনি। প্যাভিলিয়নে তাঁকে সেইমুহূর্তে ফিরিয়েছিলেন যখন তিনি ১১৭ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করছিলেন!
মদন লাল: ভিভ রিচার্ডস সেদিন একেবারে অন্য মেজাজে ছিলেন। কোনও ব্যাটার বিধ্বংসী মেজাজে থাকলে, সেই ব্যাটার ভুলও করে। সেরকমই ভুল সেদিন করেছিলেন ভিভ। যার খেসারত দিতে হয়েছিল গোটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে। পিছনদিকে ছুটে কপিলের নেওয়া ক্যাচটা ততদিন থাকবে, যতদিন ভারতীয় ক্রিকেট থাকবে। ক্যাচটা না নিলে হয়ত বিশ্বকাপটাও হাতের বাইরে চলে যেত।
জয়জ্যোতি: অধিনায়ক হিসেবে কেমন ছিলেন কপিল দেব?
মদন লাল: দুর্দান্ত ক্যাপটেন ছিলেন কপিল দেব। তাঁর সবথেকে বড় গুন ছিল এটাই যে তিনি সবার থেকে সেরাটা বের করে আনতে জানতেন। কাকে দিয়ে কখন কি করাতে হবে খুব ভালোভাবে জানতেন তিনি। আর জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে তাঁর করা ১৭৫ রানের ইনিংস তো কখনওই ভোলার নয়।
জয়জ্যোতি: যশপল শর্মা আজ আমাদের মধ্যে নেই। এই বিশেষ দিনে কীভাবে স্মরণ করবেন তাঁকে…
মদন লাল: মনে করি না যশপল শর্মা আমাদের মধ্যে আর নেই। ওঁ এখনও আমাদের মধ্যেই আছে। বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন যশ।
জয়জ্যোতি: ৮৩-র বিশ্বকাপ স্কোয়াডের প্রতিটি সদস্যের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রয়েছে…
মদন লাল: আমাদের একটা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখেছি। বিশেষ বিশেষ দিনে একত্রিত হই। একসঙ্গে সময় কাটাই।
জয়জ্যোতি: বিশ্বকাপ জয়ের পর মুহূর্তের সেলিব্রেশন…
মদন লাল: সেইদিন ভোলার নয়। সারারাত ধরে সেলিব্রেশন হয়। ভারতে এসেও সেলিব্রেশনের ধারা অব্যাহত ছিল। মনে পড়ছে ওয়াংখেড়ে-তে প্রচুর ক্রিকেট অনুরাগীরা জমায়েত হয়েছিলেন। তাঁরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন। তবে এত বছর পর এখনও যে মানুষ মনে রেখেছে এটাই প্রাপ্তি।
জয়জ্যোতি: ১৯৮৩ বিশ্বকাপ স্কোয়াডের সঙ্গে বর্তমান ভারতীয় দলের কী পার্থক্য? ভুলে গেলে চলবে না এবছরই ভারতের মাটিতে আরও একটি বিশ্বকাপ…
মদন লাল: দুটি দলই ভীষণ ভালো। দুটি দলের মধ্যে তুলনায় যাবো না। শুধু এইটুকুই বলবো রোহিত-বিরাটদের যেন বেশি চাপ দেওয়া না হয়। তাঁদেরকে চাপমুক্তভাবে খেলতে দেওয়া হোক। আর তাহলেই নিজেদের সেরাটা দিতে পারবেন রোহিত-বিরাট-শামিরা। আমাদের দল বেশ ভালো। ক্রিকেটাররা নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে আরেকটা বিশ্বকাপ না জেতার কোনও কারণ দেখছি না টিম ইন্ডিয়ার…