নয়াদিল্লি: বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকেই বঙ্গ বিজেপিতে (Bjp) ভাঙন শুরু হয়েছে। মুকুল রায়ের (Mukul Roy) মতো শীর্ষ নেতা দল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। দলে থাকলেও সৌমিত্র খাঁ, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্ত, বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo), চন্দ্র বসু, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা নিয়ম করে বেসুরো গাইছেন। এই পরিস্থিতিতে সোমবার দিল্লিতে জেপি নাড্ডার (J P Nadda) সঙ্গে বৈঠকে বসছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)।
বাংলা দখলের লক্ষ্যে বিধানসভা নির্বাচনের সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছিল বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহ বিজেপির শীর্ষনেতারা দিল্লি থেকে রীতিমতো ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেছেন। তৃণমূল থেকে বহু নেতা ভিড় জমিয়েছিলেন গেরুয়া শিবিরে। রাতারাতি দলবদলে ভোটে লড়ার টিকিটও পেয়ে গিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু ভোটে বিজেপির ভরাডুবির পর উল্টো ছবি ধরা পড়েছে।
বহু নেতা কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। অনেকে দলে থাকলেও তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। সৌমিত্র খাঁ, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্ত, চন্দ্র বসু, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো দলে থেকেও দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। শুক্রবারই বিজেপির যুব মোর্চার পদ থেকে ইস্তফা দেন সৌমিত্র খাঁ। পরে অবশ্য ইস্তফা প্রত্যাহার করেন। মন্ত্রিত্ব হারানোর পর বিজেপির উপর সোশাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়ো। প্রকাশ্যেই তাঁর সমালোচনা করেছিলেন দিলীপ ঘোষ।
দলের এই টানাপোড়েনের মধ্যেই সোমবার দিল্লিতে জেপি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠকে বসছেন দিলীপ ঘোষ। বৈঠকে আর কেউ থাকবেন কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। সূত্রের খবর, রাজ্যের বিজেপি নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক কোন্দল ও দলে ক্রমাগত ভাঙনের বিষয়টি বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। তবে বৈঠকে বেসুরোদের সামলাতে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ প্রসঙ্গে দিলীপবাবু রবিবার জানিয়েছেন, কারা কারা দলবিরোধী কথা বলছেন নাড্ডাজি জানেন।
রাজ্য সভাপতি পদে দিলীপবাবুর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২২-এই। মনে করা হয়েছিল, দিলীপকে মন্ত্রী করে বঙ্গ বিজেপির ব্যাটন অন্য কারোর হাতে তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষকে মন্ত্রী করা হয়নি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি হিসেবে তাঁর পারফম্যান্সে যে বিজেপির হাইকম্যান্ড খুব খুশি তাও বলা যাবে না। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে দিলীপের নেতৃত্বে বিজেপি ১৮ আসন পেলেও, ২১-এর বিধানসভায় ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির।
নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন হাসিমুখে দুজনে ফোটো তুললেও ভোটের ফল বেরোনের পরই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দিলীপের ঠান্ডা লড়াই প্রকাশ্যে এসেছে। ফল ঘোষণার পর দিলীপের ডাকা প্রথম বৈঠক এড়িয়ে দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন শুভেন্দু। পরেও আরেকবার দিল্লি গিয়ে শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন শুভেন্দু। দুটি বৈঠক নিয়েই দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ অন্ধকারে ছিলেন।
এই ঘটনায় কিছুটা ক্ষুব্ধ হন দিলীপবাবু। বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। তবে রাজ্য বিজেপির একংশের মতে, এটি নিতান্তই সৌজন্য সাক্ষাৎ। দিলীপবাবুর মুখেও একই সুর শোনা গিয়েছে। তিনি বলেছেন, বিধানসভা ভোটের পরে একবার সকলে মিলে গিয়েছিলাম। তখন রাজ্যের বিষয়ে কথা হয়েছে। তবুও নাড্ডাজি আমার সঙ্গে একবার আলাদা করে বসতে চেয়েছিলেন। সেই সময়টাই চূড়ান্ত হয়েছে।
রবিবার দিলীপ ঘোষের সঙ্গে নাড্ডার বৈঠক হওয়ায় কথা ছিল। তবে রবিবার সারাদিন দিলীপবাবু দিল্লির বাসভবনে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচের হাইলাইটস দেখে কাটান। সূত্রের খবর, জেপি নাড্ডাই রবিবার দিলীপ ঘোষের সঙ্গে দেখা করতে চাননি। সোমবার বিকেল ৫টায় দিলীপবাবুকে সময় দিয়েছেন নাড্ডা।