লিলুয়া: খাটের এক কোণে পড়ে রয়েছে একটি বই ও কলম৷ পাশে হাতুড়ি ও ভাঙা মোবাইলের অংশ৷ একটু দূরে একটা বালিশ৷ মেঝেতে চাদরে ঢাকা দেহে জমাট বাঁধা রক্ত৷
পাশের ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ৷ সিলিংয়ের একটু নীচে দেওয়ালে বাঁধানো তিনটি ছবি৷ একটিতে মা-মেয়ে ও বাবা৷ অন্যটিতে পাহাড়ী শীত পোশাকে ছোট্ট মেয়ে৷ তৃতীয়টিতে মুখে হাত দেওয়া মা৷ নীচে খাটের উপরে জমাট বাঁধা কালো রক্তের চাদরে মোড়া আরও একটি দেহ৷ তার উপরে দড়িতে ঝুলছে খালি গায়ে হাফ প্যান্ট পরা বাবা৷ তাঁর দেহের চারপাশে পোকা ভন ভন করে ঘুর পাক খাচ্ছে৷ কয়েকটি পোকা এক কোণা বাঁধা মশারির ভিতরে আটকে পড়ে বেরনোর চেষ্টা করছে৷ পচা গন্ধে ঘরে টিকে থাকায় দায়৷
এক ফ্রেমে মা-মেয়ে ও বাবা৷ নিজস্ব চিত্র৷
বাবার পেট, পিঠ ও দু’হাতে রক্ত জমাট বেঁধে ফুলে ফোস্কা পড়েছে৷ সাদা হাফ প্যান্টের অধিকাংশটাও রক্ত জমাট বেঁধে কালো হয়ে গিয়েছে৷ ঝুলন্ত দেহের নীচে মেঝেতেও রক্ত৷ এই বীভৎস দৃশ্য দেখে শিউরে ওঠেন পুলিশ কর্মীরা৷
খাটের উপরে পড়ে রয়েছে হাতুড়ি,বই,কলম ও ভাঙা মোবাইল৷ নিজস্ব চিত্র৷
শনিবার হাওড়ার লিলুয়ার ঘটনা৷ মৃতেরা ব্যবসায়ী অভিজিৎ দাস, তাঁর স্ত্রী দেবযানী দাস এবং মেয়ে সম্রাজ্ঞী দাস৷ স্থানীয়রা জানান, তিনদিন ধরে তাঁরা নিখোঁজ ছিলেন৷ পাওনাদাররা খোঁজে এসে ফিরে যান৷ কিন্তু, শনিবার দুপুরের পর থেকে বিকট পচা গন্ধ বের হতে থাকে৷ খবর পৌঁছয় লিলুয়া থানায়৷ এলাকার লোকজন জড়ো হয়৷
আরও পড়ুন-কলকাতা টিভির পাশে মমতা, ধন্যবাদ জানিয়ে সম্পাদক কৌস্তুব রায়ের টুইট
বাড়ির বাইরে প্রতিবেশীরা৷ নিজস্ব চিত্র৷
পুলিশ আসে৷ বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকি চলে৷ সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি৷ ঘরের বাইরে লোহার গেটে তালা দেওয়া৷ হাতুড়ি-ছেনি দিয়ে পুলিশ তালা ভাঙে৷ তারপর ঘরের তালা ভাঙা হয়৷ এরপর ঘরে ঢুকতেই বীভৎস দৃশ্য৷ পরে দেহ নামিয়ে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, হাতুড়ি ছাড়া কিছুই বাজেয়াপ্ত করা হয়নি৷ পুলিশের অনুমান, মা-মেয়ের মাথায় হাতুড়ির আঘাত মেরে খুন করা হয়৷ তারপর নিজে আত্মহত্যা করেন ব্যবসায়ী অভিজিৎ দাস৷ কিন্তু, গোটা বিষয়টা তদন্তের পর্যায়ে আছে৷ তাই, খুন না আত্মহত্যা তা স্পষ্ট জানা যায়নি৷
তালা ভাঙছে লিলুয়া থানার পুলিশ৷ নিজস্ব চিত্র৷