ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটিতে কি সিপিএম থাকবে না? বুধবার কমিটির প্রথম বৈঠকের পর জাতীয় রাজনীতিতে এই প্রশ্ন নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। জোটের মুম্বই বৈঠকের পর প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চলল, এখনও সমন্বয় কমিটিতে সিপিএম তাদের প্রতিনিধির নাম পাঠায়নি। ফলে বুধবারের বৈঠকে সিপিএমের কোনও প্রতিনিধিত্ব ছিল না। তার মধ্যেই এদিন আবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইডি দীর্ঘ প্রায় নয় ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়। এই মামলায় জড়িয়ে গিয়েছে অভিষেকের নিজস্ব সংস্থা লিপ্স এন্ড বাউন্ডসের নাম।
অভিষেককে ইডির তলব নিয়ে বুধবার দিল্লিতে সমন্বয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ইডির বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাবও নেওয়া হয়েছে। কারণ তিনি এই কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বৈঠক শুরুর আগেই জানিয়েছিলেন, অভিষেক থাকতে পারবেন না। তাই তাঁর চেয়ারটি ফাঁকা রাখা হবে। দেখা গেল, বিকেলে বৈঠকে পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির পাশের আসনটি ফাঁকাই রয়েছে। বোঝা গেল, অভিষেককে ইন্ডিয়া জোট বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক এবং গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কে সি বেণুগোপাল কমিটির নেওয়া প্রস্তাবটি পাঠ করলেন। সেখানে অভিষেকের নাম উল্লেখ করে বলা হল, কেন্দ্রীয় এজেন্সির অপব্যবহারের কারণে তিনি আজ বৈঠকে থাকতে পারলেন না।
আরও পড়ুন: ইডি দিয়ে ডেকে পাঠিয়ে ধূপগুড়ি পুনরুদ্ধার হবে না, ম্যারাথন জেরা থেকে বেরিয়েই হুঙ্কার অভিষেকের
এদিকে সিপিএমের অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইচ্ছে করে সমন্বয় কমিটিতে অভিষেকের নাম ঢুকিয়েছেন, যাতে আগামী দিনে এই পদকে ব্যবহার করা যায়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আজ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, বুঝতে পারছেন তো, কেন আমরা ওই বৈঠকে যাইনি। আমরা চাই, সব দুর্নীতিগ্রস্তের সাজা হোক। সে অভিষেক হোন বা শুভেন্দু অধিকারীই হোন। তাঁর অভিযোগ, মোদি-মমতা সেটিং হয়ে গিয়েছে। আমরা এই সেটিংয়ের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন,তাই বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি থাকবে। সিবিআই, ইডির গয়ংগচ্ছ মনোভাবের বিরুদ্ধে ৫ অক্টোবর সিপিএম সিজিও কমপ্লেক্স ঘেরাওয়েরও ডাক দিয়েছে। তাদের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে মাথাদেরও গ্রেফতার করতে হবে। সারদা তদন্তের মতো নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে গড়িমসি বরদাস্ত করা হবে না।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বেণুগোপাল যখন দিল্লিতে অভিষেকের পাশে থাকার কথা বলছেন, তখন বহরমপুরে বসে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন। তিনি বলেন, দিল্লিতে কে কী বললেন, তাতে কিছু যায় আসে না। বাংলার কংগ্রেস কর্মীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে মনোভাবে অনড়। আমরা চাই, বড় ছোট সব চোর ধরা পড়ুক। কেন্দ্রীয় এজেন্সি আরও তৎপর হোক। একই কথা শোনা গেল প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচের গলাতেও।
সব মিলিয়ে দিনের শেষে কী দাঁড়াল? জোটের সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠকের দিনেই বোঝা গেল, বাংলার কংগ্রেস এবং সিপিএম তৃণমূলকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে রাজি নয়। সিপিএম হয়তো জাতীয় স্তরেও তৃণমূলের ছোঁয়া এড়িয়ে যেতে চাইছে। সেই কারণেই তারা জোটের সমন্বয় কমিটিতে থাকতে চায় না।