কলকাতা: একই মূদ্রার দুই পিঠ হচ্ছে তৃণমূল এবং বিজেপি। এই তত্ত্ব থেকেই জন্ম নিয়েছিল বিজেমূল। যা নিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রচার শুরু করেছিল বামেরা। সেই তত্ত্বকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তৃণমূলকে রাজ্য শাসনের দায়িত্ব দিয়েছে বামেরা। আর বিরোধী আসনে বসিয়েছে বিজেপিকে। বিধানসভায় একটি আসন জোটেনি বামেদের। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় কমিটি। বৃহস্পতিবার কলকাতার প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে রাজ্য কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে নির্বাচনে ভরাডুবি ও বিজেমূল তত্ত্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সীতারাম ইয়েচুরি। এমনকী, পরিস্থিতি সামলাতে না পারলে নতুন প্রজন্মের হাতে সংগঠন ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন বলে খবর।
আরও পড়ুন-বিনয় তামাঙের সঙ্গে তাঁর বৈঠক সম্পূর্ণ ‘অরাজনৈতিক’, দাবি গুরুঙের
এদিন প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে করোনাবিধি মেনেই সশরীরে বৈঠক শুরু হয়েছে। ভোটে বিপর্যয় এবং সিদ্ধান্তগত ত্রুটির বিষয়গুলো সামনে রেখে নেতৃত্বের বদল চেয়ে বর্ধমান, হাওড়া এবং কলকাতা জেলা কমিটির প্রস্তাব পেশ করেছে সিপিএম-এর রাজ্য কমিটির বৈঠকে। আগামী নির্বাচনে দলে তরুণ ‘কমরেড’দের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার ভাবনা শুরু হয়েছে। যা নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক। সূত্রেরখবর, সেই বিতর্কে লাগাম টানতে গিয়ে বৈঠকের মাঝে ক্ষুব্ধ ইয়েচুরিকে বলতে শোনা গিয়েছে, আপনারা সামলাতে পারলে সামলান, না-হলে নতুনদের হাতে ছেড়ে দিন। বিজেমূল ইস্যু কেন উত্থাপন করা হয়েছিল- সেই বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন ইয়েচুরি।
আরও পড়ুন –চতুর্থ স্তম্ভ: যোগীজির রাম রাজ্য(12/08/2021)
এরআগে ভার্চুয়ালি কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেও রাজ্যে সিপিআইএমের ভরাডুবি নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়েছে। সর্বোপরি, বিজেমূল তত্ত্ব নিয়েই বিভাজন তৈরি হয়েছে বামেদের অন্দরে। আগে সিপিআই-এর সাধারণ সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে ‘বিজেমূ’ তত্ত্ব ভুল ছিল। প্রায় সেই একই সুর এবার শোনা গেল সিপিএম নেতাদের গলায়। যদিও সরাসরি ভূল স্বীকার না করে তাঁদের বক্তব্য, “তৃণমূল এবং বিজেপি এক নয়।”
আরও পড়ুন- আইনজীবী রজত খুনে দোষী সাব্যস্ত স্ত্রী অনিন্দিতার জামিন খারিজ
২০১১ সালে বাংলার মাটি থেকে শেষ হয়ে যায় বামেদের শাসন। তারপর থেকে ক্রমশ ক্ষয় হয়েছে সংগঠনের। একাধিক বিধায়ক অন্যদলে নাম লিখিয়েছেন। পরবর্তী দুই নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে কোনও সুরাহা হয়নি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে একজন প্রার্থীও জিততে পারেননি। যা প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে সাংগঠনিক ব্যর্থতা।
আরও পড়ুন –‘মগজের কারফিউ’ ভাঙতে দেশজুড়ে খোলা আকাশে ক্লাস রুম এসএফআইয়ের
দলের শীর্ষ স্থানে বা পদ দখল করে থাকা পাকা চুলওয়ালা নেতাদের চেয়ার ছাড়ার দাবি নতুন নয়। সিপিএম-র অন্দরে অনেকদিন ধরেই এই কথা হচ্ছে। ২০১৫ সালে দলের প্লেনামে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। স্থির হয়েছিল যে দলে ৪০ শতাংশ তরুণ মুখ রাখতে হবে। কিন্তু সেই প্রস্তাবের সঠিক প্রয়োগ হয়নি। সেই প্লেনামে ঠিক হয়েছিল যে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৬০ অভিজ্ঞ কমরেড থাকতে হবে।
আরও পড়ুন –আক্রান্তের নিরিখে ফের শীর্ষে উত্তর ২৪ পরগনা
কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে ভিন্ন ছবি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রবীণেরাই পদ অলঙ্কৃত করে রেখেছেন। ২০১৬ সালে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী তালিকাতেও দেখা গিয়েছে প্রবীণদের আধিক্য। একুশের নির্বাচনে তরুণ মুখ বাড়লেও তা যথেষ্ট ছিল না। যুবসমাজ হয়ে গিয়েছে বাম-বিমুখ। এই অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে তরুণদের হাতে দায়িতে তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। শুধুমাত্র রেড ভল্যান্টিয়ার হিসাবে নয়, পার্টির কাজেও সর্বক্ষণের জন্য কর্মী বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন তিনি।