নয়াদিল্লি: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোট-কৌশল অনুসরণের প্রস্তাব দিল আম আদমি পার্টি। লোকসভা ভোটে যে যেখানে শক্তিশালী, তাদের আসন ছাড়ার কৌশলকে সামনে রেখে কংগ্রেসকে একই ধাঁচে আসন সমঝোতার প্রস্তাব দিল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল। কংগ্রেস যদি পঞ্জাব ও দিল্লিতে লোকসভা ভোটে প্রার্থী না দেয়, তাহলে আপ আসন্ন মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান বিধানসভায় হাত চিহ্নের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেবে না বলে জানিয়েছেন আপ স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ।
রাজনীতি সচেতন প্রায় প্রতিটি মানুষ জানেন মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে আপের প্রভাব কতটা আছে। ফলে এই দুটি বিধানসভা ভোটে তাদের প্রার্থী দেওয়া, না দেওয়া দুইই সমান। অন্যদিকে, শুধু আপ নয়, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে যে স্তরের হিংসাত্মক রাজনীতি শুরু হয়েছে তা নিয়েও কংগ্রেস নেতৃত্বর খুশি হওয়ার কথা নয়। জোট নেতৃত্বের অন্যতম মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের সঙ্গে প্রায় রোজই হানাহানি, রক্তারক্তি চলছে রাজ্যে। পাটনা বৈঠকের আগে এই ইস্যু নিয়েও মনোমালিন্য হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: Panchayat Election | পঞ্চায়েত ভোটের কারণে ছুটি বাতিল, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাল লালবাজার
বিজেপির পরে ধারে ও ভারে এগিয়ে থাকা কংগ্রেসকে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়াই শুধু নয়, দেশের প্রাচীনতম দলকে নেতাহীন এবং নতুন ধ্যানধারণাহীন দল বলে কটাক্ষ করেন ভরদ্বাজ। ফলে আগামী ২৩ জুন পাটনা মন্ত্রণাসভার আগেই নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি বিরোধী দলগুলির মধ্যেই চিড় দেখা দিচ্ছে বলে অনুমান অনেকের। দিল্লি অর্ডিন্যান্স নিয়ে রাজ্যসভায় বিল পাশের সময় বিরোধীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন আপ নেতা কেজরিওয়াল। সেজন্য তিনি দেশ ঘুরে বিভিন্ন দলের সঙ্গে দৌত্য বাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছেন। কিছুদিন আগেই এ নিয়ে রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন কেজরিওয়াল। কিন্তু আকবর রোডের তরফে এখনও তেমন কোনও সবুজ সংকেত আসেনি। সেই সব দিক মিলিয়ে পাটনা বৈঠকের আগেই মহাজোটের ফর্মুলা ফল্গু নদীর রূপ নেয় কি না তা দেখার।
আপ নেতা ভরদ্বাজ বলেছেন, কংগ্রেসের সামনে কোনও পরিকল্পনাও নেই। ওরা আমাদের প্রকল্পগুলিই ধার করে নির্বাচনে লড়ছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং আপের জনকল্যাণমূলক প্রকল্প যেমন জল, বিদ্যুৎ, মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে বাসযাত্রার মতো প্রকল্প নকল করে কাজ চালাচ্ছে। কেজরি যেমন ইস্তাহারের নাম বদলে গ্যারান্টি বা সংকল্প শব্দ ব্যবহার করেন, ওরা সেই শব্দটাও চুরি করেছে।
আপ নেতার এহেন আক্রমণে কংগ্রেসের দিক থেকে কী সাড়া মিলবে তা এই মুহূর্তে না বলা গেলেও জোট নিয়ে আলোচনার পূর্বেই তাঁর মন্তব্যে যে রাহুল-খাড়্গের দল আহ্লাদিত হবে না তা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে আইন কমিশনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপেও বিরোধী জোটে ঘোঁট পাকতে শুরু করেছে। শেষপর্যন্ত ভোটের মুখে ফের অভিন্ন দেওয়ানি বিধির ইস্যু উসকে দিয়ে বিরোধীদের ছত্রভঙ্গ করার যে রণকৌশল বিজেপি নিয়েছে, তাতে পাটলিপুত্রের রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে এখনই প্রশ্নচিহ্ন উঠতে শুরু করেছে।