কোচবিহার: শুক্রবার পাটনার মহাবৈঠক থেকে এক পরিবারের মতো একজোট হয়ে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক। সোমবার কোচবিহার থেকে বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেসকে ‘দোসর’ বলে সম্বোধন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারকে দিল্লি থেকে উৎখাত করার ডাক দিয়ে বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। পাটনার সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতাও। সেখানে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টিকে নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল মিটিয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু, সোমবার পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে কোচবিহারে তিনি বলেন, সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপিকে বিদায় দিন। তিনটে একজোট হয়েছে।
মমতা আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দিল্লিতে বিজেপির বিরুদ্ধে মহাজোট করার জন্য। আর এখানে কালকেও আমাকে গালাগালি দিয়েছে। এখানে মহাঘোঁট হবে। মহাঘোঁট আমি ভেঙে দেব। মহাজোটই হবে দিল্লিতে। আর বাংলারটা আমরা দেখব। পাটনা বৈঠকের সাফল্যের পর প্রত্যাশাই ছিল যে, এদিন পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে বিজেপি এবং মোদি বিরোধী সুর চড়া করবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, তা করতে গিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেসকে একাসনে বসানোয় কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তার প্রভাব পড়বে কিনা তা সময়ই বলবে।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee | Panchayat Election | ভোটে সীমান্তে বিএসএফ ভয় দেখাতে পারে, অভিযোগ মমতার
কারণ, কংগ্রেস এবং আপের মধ্যে মূলত ঝামেলা এ নিয়েই। কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন গতকালও বলেছেন, আম আদমি পার্টি দিল্লি অর্ডিন্যান্স নিয়ে আমাদের সমর্থন চাইবে, আর রাজস্থানে গিয়ে কংগ্রেসেরই বাপবাপান্ত করবে তা একসঙ্গে হয় না। আপ মুখপাত্র প্রিয়াঙ্কা কক্কর এক টুইটে দাবি করেন, কংগ্রেস যেন জোটের মুখ হিসেবে রাহুল গান্ধীকে আর তুলে না ধরে। তা নিয়েও কংগ্রেসের মধ্যে আপকে নিয়ে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। কেন্দ্রীয় স্তরে জোট রাজনীতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে সিপিএম এবং প্রদেশ কংগ্রেসও দোলাচলে রয়েছে। এই অবস্থায় মমতার আজকের মন্তব্য জোট জলকে কোনদিকে নিয়ে যায় সে প্রশ্ন উঠে আসছে।
যদিও এদিন আত্মবিশ্বাসের সুরেই লোকসভা ভোটে বিজেপিকে হটানোর কথা জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ডাবল ইঞ্জিনের একটা ইঞ্জিন এর আগের ভোটে অর্থাৎ বিধানসভা ভোটে ফুটো হয়ে গিয়েছে। আর একটা ইঞ্জিন যাবে পরের বছর। ওরা গুন্ডামি করলে তার জবাব দিতে হবে মা-বোনদের। চান্দামারি প্রাণনাথ হাইস্কুল মাঠে মমতা বলেন, রাজনৈতিকভাবে বিজেপিকে পরাজিত করে বাংলার পাইপয়সা আমরা দিল্লি থেকে আদায় করে আনব। ওরা কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ যাচ্ছে। মোদিবাবু নেতা হবেন। তাই আমেরিকাকে তুষ্ট করতে সেখানে যাচ্ছেন। আবার কখনও ফ্রান্সে যাচ্ছেন, ওখানে গিয়ে প্লেন কিনছেন। আর ১০০ দিনের কাজের টাকাটা দিতে পারছে না। এই হচ্ছে বিজেপি সরকার। এই হচ্ছে বিজেপির ডাবল ইঞ্জিন সরকার।
মমতা সিপিএম এবং কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন, এক-দুই-তিন বিজেপিকে বিদায় দিন। এক-দুই-তিন বিজেপির দুই জোট রাম আর শ্যাম তাদের বিদায় দিন। মনে রাখবেন এই সিপিএম কোচবিহারে গুলি চালিয়েছিল। বিজেপি আমাদের হিংসা করে। পঞ্চায়েত ভোটের পরেও আমাদের সরকারই থাকবে। ওদের ডাবল ইঞ্জিন সরকার বিদায় নেবে। সব মিলিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের মঞ্চেই লোকসভা ভোটে বিজেপি বিরোধিতার সুর ধরিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু, মহাজোট গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই সিপিএম এবং কংগ্রেসকে তির বেঁধায় জুলাই মাসে বসতে চলা সিমলা বৈঠকের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার মেঘ থেকেই গেল।