শ্রীহরিকোটা: শুক্রবার শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান ৩-এর সফল উৎক্ষেপণ হল। এটা ভারতের তৃতীয় চন্দ্রাভিযান। এবারের অভিযান সফল হলে চাঁদের মাটিতে তেরঙ্গা ওড়াতে সক্ষম হবে ভারত। এর আগে আমেরিকা, সাবেক সোভিয়েত এবং চীন এই গরিমার অধিকারী ছিল। চন্দ্রযান ৩ চাঁদের মাটিতে নামলে চতুর্থ দেশ হিসেবে এই তালিকায় নাম উঠবে ভারতেরও। কিন্তু, তার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও বেশ কিছুদিন। প্রায় মাস দেড়েক পর চাঁদের মাটিতে নামবে চন্দ্রযান।
চন্দ্রযান ২-এর ভেঙে পড়ার পর এই অভিযান ছিল ভারতের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। আজ সেই চ্যালেঞ্জের প্রথম ধাপ পেরোল দেশ। চন্দ্রযানের মূল চ্যালেঞ্জই হল চন্দ্রপৃষ্ঠে নিরাপদে অবতরণ করা। আর তারপরই আমেরিকা, সোভিয়েত ও চীনের খাতায় নাম উঠবে ভারতের। উৎক্ষেপণের পর এই মহাকাশযান পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত হবে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৭৯ কিমি দূরে পৃথিবীর চারধারে পাক খেতে থাকবে। এরপর ধীরে ধীরে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাটিয়ে তা চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে যাবে। তখন চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবর্তে চরকিপাক খেতে থাকবে চন্দ্রযান। সেটা হওয়ার পর ল্যান্ডার থেকে রোভার অংশটি বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ শুরু করবে।
আরও পড়ুন: Chandrayaan-3 Mission | চন্দ্রযান ৩-এর সফল উৎক্ষেপণ, আনন্দে আত্মহারা ইসরোর বিজ্ঞানীরা
চন্দ্রযানের সফল উৎক্ষেপণের পর ফ্রান্স থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইটে এই অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ভারতের মহাকাশ অভিযানের এক নয়া অধ্যায় রচনা করল চন্দ্রযান ৩। প্রতিটি দেশবাসীর স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষাকে সুউচ্চে তুলে ধরল। আমাদের দেশের বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত নিষ্ঠার ফল হল এই অভিযান। আমি তাঁদের প্রণাম জানাই। দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং উৎক্ষেপণের পর ইসরো চেয়ারম্যান এস সোমনাথ এবং তাঁর টিমকে অভিনন্দন জানান।
অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রাক্তন কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন তেণ্ডুলকরও। টুইটে তিনি লিখেছেন, ইসরোর মহাকাশযান ১৪০ কোটি ভারতীয়র স্বপ্ন, গর্ব এবং বিশ্বাসকে তুলে ধরল। চন্দ্রযান ৩-এর উৎক্ষেপণে আমাদের সকলের বুক গর্বে ভরে গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত শ্রমকে অভিনন্দন জানিয়ে শচীন লিখেছেন, দেশবাসীর কাছে এটা স্মরণীয় দিন। জয় হিন্দ। এছাড়াও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে, দলের নেতা কে সি বেণুগোপাল, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ দেশের তাবড় নেতানেত্রী চন্দ্রযানের সাফল্য কামনা করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সফল উৎক্ষেপণের রুদ্ধশ্বাস কিছু মুহূর্ত কেটে যাওয়ার ঘোর ভাঙতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বিজ্ঞানীরা। কেউ হাততালি দিয়ে চিৎকার করে ওঠেন, কারও বা আবেগে চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসে। পরস্পর পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন। উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের বাইরে দর্শকাসনেও তখন কয়েকশো মানুষ আনন্দ-উচ্ছ্বাসে হর্ষধ্বনি করে ওঠেন।
ভারতের চন্দ্রাভিযান
ভারতের প্রথম চন্দ্রাভিযান শুরু হয় ২০০৮ সালে। চন্দ্রযান ১ সাফল্যের সঙ্গে চাঁদের কক্ষপথে স্থাপিত হয়েছিল ওই অভিযানে। চন্দ্রযান ৩ সাফল্যের সঙ্গে উতরে গেলে চন্দ্রপৃষ্ঠে মহাকাশযান নামানোর কাজে ভারত চতুর্থ দেশের মর্যাদা পাবে। চাঁদের মাটিতে ধীরে ধীরে নিরাপদে মহাকাশযান অবতরণের কাজটি খুবই দুরূহ। ২০১৯ সালের ব্যর্থতার কারণগুলি খুব খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করে এবার সেগুলি নিখুঁত করার কাজ হয়েছে বলে দাবি ইসরোর। চন্দ্রযান ২ অভিযানের ব্যর্থতার কারণই ছিল অবতরণের সময় ঝাঁকুনি লেগে কাত হয়ে যায় বিক্রম। যার ফলে চাঁদের বুকেই ভেঙে পড়ে বিক্রম। চন্দ্রযান ৩ উৎক্ষেপণের ১৬ মিনিট পর রকেট থেকে উৎক্ষেপক অংশটি খসে যাবে। এরপর চন্দ্রযান ৩ পৃথিবীর কক্ষপথে ৫-৬ বার উপবৃত্তাকার চক্রে প্রদক্ষিণ করবে। এভাবে নিকটতম ১৭০ কিমি এবং দূরতম ৩৬ হাজার ৫০০ কিমি দূরত্বে পাক দিয়ে চন্দ্র কক্ষপথে প্রবেশ করবে। ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ বলেন, চন্দ্রযান ৩ যাত্রা শুরু করল। আমরা আশা করি সব কিছু ঠিকঠাকভাবে হবে। এবং এই যান চাঁদে নামবে ২৩ অগাস্ট।