কলকাতা: রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) জনস্বার্থ মামলা দায়ের করল বিজেপি। নবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক আইনজীবী হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিভগননমের (Calcutta High Court Justice TS Sivagnanam) ডিভিশন বেঞ্চের মামলা দায়েরের আবেদন করেন সোমবার। মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। সব পক্ষকে নোটিস দিতে বলা হয়েছে। আগামী শুক্রবার শুনানির সম্ভাবনা।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ বেআইনি। যে আইন মাফিক নিয়োগ হয়েছে, সেইমতো গেজেট নোটিফিকেশন করা হয়নি। তাই কমিশনারের নেওয়া যাবতীয় সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হোক বলে এদিন হাইকোর্টে দাবি করা হয় মামলাকারী আইনজীবীর তরফে। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছে। বেঞ্চকে জানানে হয়, ২০১০ সালের যে আইন অনুসরণে বর্তমান নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ করা হয়, সেইমতো সরকারি গেজেটে নির্দেশিকা প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু, তা করা হয়নি। শুধুমাত্র এই কারণেই তাঁর নিয়োগ বাতিল হওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে এই পঞ্চায়েত ভোট সম্পর্কে তাঁর নেওয়া সব নির্দেশই বাতিলযোগ্য।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নবান্ন পরবর্তী নির্বাচন কমিশনার (State Election Commissioner) হিসেবে রাজীব সিনহার নাম পাঠায় রাজ্যপালের কাছে। কিন্তু রাজ্যপাল রাজীব সিনহা সম্পর্কে আরও কিছু রিপোর্ট চায় নবান্নের কাছে। পাশাপাশি তিনি নবান্নকে দ্বিতীয় নামও পাঠাতে বলেন। নবান্ন প্রাক্তন পূর্তসচিব অজিত বর্ধনের নাম পাঠায়। এরপরও রাজভবন তৃতীয় নাম চাইলে নবান্ন তা দিতে আপত্তি করে। শেষে অবশ্য রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (C. V. Ananda Bose Governor of West Bengal) পরবর্তী রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রাজীব সিনহার নামেই শিলমোহর দেন।
আরও পড়ুন: Moloy Ghatak | কয়লাকাণ্ডে নির্ধারিত সময়ে অনুপস্থিত আইনমন্ত্রী মলয়
রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হিসাবে রাজীবের নিয়োগ নিয়ে প্রথম থেকেই সরব বিরোধীরা। তারা তাঁকে নবান্নের হাতের পুতুল বলেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি সহ তাবড় বিরোধী দলগুলি কমিশনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগে সরব হয়। কমিশনার পদে যোগ দিয়ে রাজীব সিনহা পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Election 2023) দিন ঘোষণা করে দেন। পরের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় মনোনয়ন পর্ব। সেদিন থেকেই মনোনয়ন ঘিরে অশান্তি ছড়ায়। ক্যানিং, দিনহাটা, চোপড়া, মুর্শিদাবাদ, মালদায় দুর্বৃর্ত্তদের মুক্তাঞ্চালে পরিণত হয়েছিল। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক হিংসায় মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। রাজ্যের মনোনয়ন পর্বে হিংসা নিয়ে ক্ষুব্ধ হন খোদ রাজ্যপালও। ভাঙড় ক্যানিংয়ের মতো একাধিক হিংসদীর্ণ এলাকায় পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। তিনি বারবার বলছেন, পঞ্চায়েত ভোটে কোনও মতে হিংসাকে বরদাস্ত করা হবে না। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রাজ্য জুড়ে অশান্তির দায় রাজীব সিনহার ঘাড়ে চাপিয়ে রাজ্যপালকে বলতে শোনা গিয়েছিল, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু তাঁর কাজে মানুষ হতাশ।
এই আবহে গত বুধবার রাজীবের জয়েনিং রিপোর্ট ফেরত পাঠান রাজ্যপাল। যা ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। যা নিয়ে রাজ্যপাল ও কমিশেনর সংঘাত তুঙ্গে উঠেছিল। জয়েনিং রিপোর্ট নিয়ে মমতাকেও রাজীব সিনহার পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছিল। সংঘাতের আবহে রবিবার রাজভবনে কমিশনারর রাজীব সিনহাকে (State Election Commissioner Rajiva Sinha) রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের (Governor CV Snanda Bose ) সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলে। রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন রাজীব। রাজভবন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে রবিবার আলোচনা হয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের।