কলকাতা: দীর্ঘ ৩৬ বছরের আইনি যুদ্ধ শেষ ৮৬ বছর বয়সি প্রাক্তন শিক্ষিকা শ্যামলী ঘোষের। তাঁর শিক্ষিকা জীবনের ২৫ বছরের বেতন বকেয়া ছিল। তা নিয়ে মামলা করেন হাওড়ার শ্যামপুর হাইস্কুলের শিক্ষিকা শ্যামলী। কিছুদিন আগে অশক্ত শরীর নিয়েই ওই বৃদ্ধা হাইকোর্টে এসেছিলেন। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে কাঁদতে কাঁদতে বিষয়টি তুলেছিলেন শ্যামলী। বিচারপতি তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, নিশ্চিন্তে ঘরে ফিরে যান। আদালত যখন আছে, তখন নিশ্চয়ই একটা না একটা সুরাহা হবে।
অবশেষে সেই মামলারই নিষ্পত্তি হল। বৃহস্পতিবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেয়, দশ শতাংশ সুদ সমেত ২৫ বছরের বকেয়া বেতন স্কুল শিক্ষা দফতরকে আট সপ্তাহের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অবিলম্বে শিক্ষা দফতরের কাছে পাঠাতে হবে। আদালতের আরও বক্তব্য, নির্দেশ ঠিকঠাক মানা হল কি না, তা ২১ জুনের মধ্যে হাইকোর্টকে জানাতে হবে। আদালতের নির্দেশ শুনে আনন্দে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি ওই প্রাক্তন শিক্ষিকা। চোখ মুছতে মুছতে তিনি আদালত ছাড়েন।
১৯৭৬ সালে শ্যামপুরের ওই স্কুলে চাকরি পান শ্যামলী ঘোষ। কিন্তু চার বছরের মধ্যেই ১৯৮০ সালে তাঁর চাকরি চলে যায়। কিন্তু কী কারণে চাকরি চলে গেল, তা স্কুল তাঁকে জানায়নি। তাঁর অভিযোগ, আচমকাই একদিন তাঁকে বলা হয়, আর স্কুলে আসতে হবে না। অথচ সমস্ত নিয়মকানুন মেনেই ইন্টারভিউ দিয়ে তিনি চাকরি পেয়েছিলেন। তাঁর কার্যকালের মেয়াদ ছিল ২০০৫ সাল পর্যন্ত। এই দীর্ঘ ২৫ বছরের বেতন তাঁর বকেয়া থেকে যায়। ১৯৮৬ সালে শ্যামলী মামলা করেন কলকাতা হাইকোর্টে।
তারপর বিভিন্ন সময় আদালত বকেয়া মেটানোর নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু তিনি বকেয়া বেতন পাননি। ইতিমধ্যে কেটে গিয়েছে ৩৬ বছর। সম্প্রতি ওই বৃদ্ধা নিজেই হাইকোর্টে এসে হাজির হন। বিষয়টি উথ্থাপন করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। সেদিনই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সুরাহার আশ্বাস দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সেই সুরাহাই মিলল। এখন দেখার, আদালতের নির্দেশমতো এক সপ্তাহের মধ্যে শ্যামলী ঘোষ বকেয়া বেতন পান কি না।