নয়াদিল্লি: তুমুল হট্টগোলে বৃহস্পতিবারও ভেস্তে গেল সংসদের (Parliament) কাজ। বিদেশের মাটিতে রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) ‘ভারত-বিরোধী’ মন্তব্যকে কেন্দ্র করে শাসকদল বিজেপি (BJP) এদিনও মুখিয়ে ওঠে। অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলি আদানি ইস্যুতে (Adani Row) আলোচনা, যৌথ সংসদীয় কমিটি (JPC) গঠন ও সংসদে তাদের কণ্ঠরোধের চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। প্রথমবার মুলতুবির পর দুপুর ২টোয় অধিবেশন বসার ১ মিনিটের মধ্যে সভা ভণ্ডুল হয়ে যায়। উল্লেখ্য, বিদেশ থেকে ফেরার পর এদিনই লোকসভায় আসেন রাহুল গান্ধী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে বলার সুযোগ দিলে আমি বলব।
এদিকে, সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়ে তেলেঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রী কেসিআর-কন্যা বিআরএস নেত্রী কে কবিতা বুধবার জানিয়ে দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী আন্দোলনে আছেন। এদিন তাঁর ইডি দফতরে হাজিরার কথা থাকলেও তিনি যাননি। ইডি যেসব তথ্য চেয়েছিল, তা দলের এক প্রতিনিধি মারফত পাঠিয়ে দেন তিনি। দিল্লির আবগারি মামলায় কে কবিতাকে আগামী ২০ মার্চ ফের তলব করেছে ইডি।
আরও পড়ুন: CBI FIR Against Manish Sisodia | মণীশ সিসোদিয়ার বিরুদ্ধে এফআইআর করল সিবিআই
এদিন বিরোধীরা আদানি ইস্যুতে দুপুরে সংসদের বাইরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। তাতে ১৫টি দল অংশ নিলেও তৃণমূল কংগ্রেস ছিল না। কংগ্রেস ছাড়াও ডিএমকে, এনসিপি, এসপি, আরজেডি, বিআরএস, সিপিএম, সিপিআই, এসএস, জেডিইউ, জেএমএম, এমডিএমকে, আপ, ভিসিকে, মুসলিম লিগ হাজির ছিল।
প্রসঙ্গত, সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিরোধী জোটের যৌথ আন্দোলন থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেও বৃহস্পতিবার অভিনব প্রতিবাদের(Protest) রাস্তা নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। এদিন সভা শুরুর আগেই তৃণমূল সাংসদরা (MP) সভার দুই কক্ষেই মুখে কালো কাপড় বেঁধে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
উল্লেখ্য, সোমবার বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বের সূচনাপর্বেই শাসক-বিরোধীদের তুমুল হট্টগোল বাধে। প্রায় প্রতিদিনই সভার কাজ পণ্ড হয়ে যায়। রাজ্যসভায় (Rajya Sabha) কংগ্রেস দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গের ডাকা কৌশল রূপায়ণের বৈঠকে কোনওদিনই হাজির থাকেনি তৃণমূল। বুধবার কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইডি-র সদর দফতর অভিযানে কংগ্রেসের (CONG) সঙ্গে ১৬-১৭টি বিরোধী দল একযোগে যোগ দিলেও সেখানেও তৃণমূল ছিল না।
এই অবস্থায় কংগ্রেস নেতারা তৃণমূলের উপর অভিযোগের খাঁড়া নামিয়ে বলেছেন যে, তৃণমূল বিজেপি-র বি টিম হয়ে কাজ করছে। অবশেষে বুধবারই তৃণমূলের লোকসভা সদস্য তথা তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, বিজেপি-বিরোধী আন্দোলনে বিরোধীদের সঙ্গে হাত মেলাবে না ঘাসফুল শিবির। তারা একলা চলোর নীতি নিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে যেখানে কংগ্রেস দল বিজেপি এবং সিপিএমের সঙ্গে লুকানো আঁতাঁত করে চলছে, সেখানে তারা কোনওভাবেই কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে থাকবে না। তৃণমূল ভিন্ন পথে, নিজস্ব আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করবে। তার পরদিনই সংসদে (Parliament) মুখে কালো কাপড় বেঁধে পৃথক প্রতিবাদ দেখাল তৃণমূল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এতে জাতীয় রাজনীতিতে মমতার দল পৃথক অস্তিত্বের জানান দিল। কারণ, কংগ্রেসের নৌকায় ভিড়লে নিজস্ব অস্তিত্ব টিকে থাকত না। বিশেষত রাজ্যের রাজনীতিতেও কংগ্রেস বিরোধিতার প্রশ্নে বিড়ম্বনায় পরতে হতো দলকে।
গত কয়েকদিন ধরে মূল্যবৃদ্ধি, রাহুল গান্ধীর বিতর্কিত মন্তব্য, আদানি ইস্যুতে শাসক-বিরোধী তরজায় উত্তপ্ত ছিল সংসদ (Parliament)। বিরোধীদের সংসদে কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে এদিন তৃণমূল সাংসদরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ দেখান। তাঁরা ট্রেজারি বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
অন্যদিকে, আজ সংসদে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে পশ্চিমবঙ্গের নিয়োগ দুর্নীতির ইস্যুতে বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ(Dilip Ghosh), সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumder), লকেট চট্টোপাধ্যায় (Loket Chatterjee) সহ অন্য সতীর্থরা হাতে পোস্টার নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল হন। রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নীরব কেন, এই স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি (BJP) সাংসদরা।