কলকাতা: বেশ কয়েক মাস আগে কলকাতায় এসে দলীয় বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলা থেকে লোকসভা ভোটে ৩৫টি আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে গিয়েছিলেন। গত ২৯ নভেম্বর ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে জনসভাতেও শাহ বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদিকে তৃতীয় বারের জন্য দিল্লির মসনদে বসাতে এই রাজ্য থেকে বিজেপিকে অন্তত ৩৫টি আসন পেতেই হবে। মঞ্চে বসা বিজেপির তাবড় রাজ্য নেতৃত্ব এবং শ্রোতার আসনে বসা হাজারো দলীয় সমর্থক শাহের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে এই অমিত শাহেরই স্লোগান ছিল, আব কী বার, দোশো পার। কিন্তু দুশো তো দূরের কথা, রাজ্যের বিধানসভা ভোটে একশো আসনেরও ধারে কাছে পৌঁছতে পারেনি রাজ্য বিজেপি। সাতাত্তরেই তাদের রথ থমকে গিয়েছিল। কিন্তু কেন এই বিপর্যয়, তার কোনও ব্যাখ্যা রাজ্য বা কেন্দ্রীয় বিজেপির তরফে আজ পর্যন্ত প্রকাশ্যে আনা হয়নি। বাংলার বিধানসভা ভোটে সেবার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য নেতাদের উপর ভরসা রাখতে পারেননি। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় নেতাদের ভোট পরিচালনার দায়িত্বে বসিয়েছিলেন। বিজেপির ওয়াররুমও সামলেছেন কেন্দ্রীয় নেতারাই। নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে অমিত শাহ, জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা, তাবড় কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীরা কার্যত ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেছিলেন। কিন্তু তাতেও ২০২১ সালে বিজেপির বাংলা দখল অধরা থেকে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ফ্যাসিবাদ বিরোধী নাট্য উৎসব শান্তিনিকেতনে
এবারও লোকসভা ভোটে শাহের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য নেতাদের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না। এবার তাঁরা পেশাদার সংস্থার সাহা্য্য নিচ্ছেন বাংলার লোকসভা ভোটে ৩৫টি আসন পাওয়ার জন্য। বিজেপির অন্দরের খবর, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জার্ভিস টেকনোলজি অ্যান্ড কনসাল্টিং লিমিটেড নামে এক সংস্থার সাহায্য নিচ্ছেন বাংলার লোকসভা ভোটের জন্য। গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূল আইপ্যাক সংস্থার সাহায্য নিয়েছিল। এবার বিজেপি জার্ভিস নামে পেশাদার সংস্থার পরামর্শ নিয়ে চলতে চায়। দলীয় সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ওই সংস্থা কাজ শুরু করে দিয়েছে। তাদের লোকজন জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়েছেন।
এই আবহে আজ, সোমবার রাতেই কলকাতায় আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। মঙ্গলবার তাঁরা দফায় দফায় বৈঠক করবেন রাজ্য নেতাদের সঙ্গে। স্বাভাবিকভাবেই সেই সব বৈঠকে ৩৫ আসনের প্রসঙ্গ উঠবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বেসরকারি এজেন্সির প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলেন, সব রাজনৈতিক দলেরই কিছু রণকৌশল থাকে। সেটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের দল তো আর তৃণমূলের মতো নয়। আমাদের প্রার্থী ঠিক হয় দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মাধ্যমে। দলের রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, কে কোথায় কী রটাচ্ছে, তার খবর আমরা রাখি না। লিখে রাখুন, আমরা ২৪ দিয়ে শুরু করতে চাই। গত লোকসভা ভোটে ১৯টি আসন পেয়েছিলাম। এবার ৩৫ না কত হবে, তার জন্য অপেক্ষা করুন।