বিষ্ণুপুর: পৌরাণিক গল্পে কৃষ্ণকে না পেয়ে রাধা অন্তরে ব্যথা অনুভব করেছিলেন ৷ কার্যত, শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন ৷ আর বাঁকুড়ার অজ গ্রামের কৃষ্ণ চন্দনাকে না পেয়ে চৈতন্য হারিছিলেন। ঘুমের ঘোরেও চন্দনা চন্দনা করে ডেকে যেত কৃষ্ণ। কিন্তু, ‘ঘোর’ ভাঙতে বেশি দিন সময় লাগল না। শুক্রবার কৃষ্ণ কুণ্ডু জানান, তিনি রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার। মানুষের স্বার্থে কাজ করতে চেয়ে ছিলেন। ভোট মিটতেই তাঁকে কোণঠাসা করতে শুরু করে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁকে কার্যত ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ কৃষ্ণর।
তিনি বলেন, ‘ভোট ফুরিয়েছে বিজেপির কেউ খোঁজ রাখে না। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে চন্দনা গোটা শালতোড়া চষে ফেললেও আমাকে ডাকেনি। আমি আবার মানুষের স্বার্থে কাজ করতে চাই। প্রয়োজনে তৃণমূলে যোগ দেব।”
দিন কয়েক আগে কৃষ্ণ ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ চন্দনা বাউরির জন্য ব্যাকুল হয়েছিলেন। ৪.৫৩ মিনিটের ফেসবুক লাইভে কৃষ্ণ বলেন, আমার বা চন্দনার সিদ্ধান্ত আপনাদের ভুল মনে হতে পারে৷ কিন্তু, ভুল নয়৷’
চন্দনা বাউরী ভোটে জেতার পর থেকেই দলে কৃষ্ণর গুরুত্ব কমছিল বলে অভিযোগ৷ তাই, দলে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে তাঁরা বিয়ে করেছেন৷ সব মিলিয়ে বিয়ে নিয়ে কৃষ্ণর বক্তব্য, “আমাকে আর চন্দনাকে নিয়ে অনেক কিছুই বলছে সবাই। হয়তো আপনারা ভাবছেন যে, আমরা ভুল করেছি। কিন্তু কোনও অন্যায় আমরা করিনি। দলকে শিক্ষা দেওয়া দরকার ছিল। ওদের বোঝা প্রয়োজন।”
আরও পড়ুন-দলকে শিক্ষা দিতেই চন্দনার সঙ্গে সম্পর্ক, সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না, ফেসবুক লাইভে অকপট কৃষ্ণ কুণ্ডু
তবে, ফেসবুক লাইভের শুরু থেকে অধিকাংশ সময়ই বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকারকে আক্রমণ করেছেন৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষবাবু কাউকে সাহায্য করেন না বলে পরপর উদাহরণ দিয়েছেন কৃষ্ণ৷ তাঁর কথায়, “কারও জন্য কিছু করেনি সাংসদ। শালতোড়া বিধানসভার সমস্ত কাজ একা হাতে করেছি। কাজ শেষ হওয়ার পরই আমাকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে।”
অন্যদিকে, কৃষ্ণর স্ত্রী রুম্পা কুণ্ডু চন্দনা বাউরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় শুক্রবার শুনানি চলাকালীন বিচারক বলেন, বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউরীর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ নয়। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে পুলিশ কোনো তদন্ত করতে পারে না। তাই তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা এফআইআরে স্থগিতাদেশ দিল হাইকোর্ট। আপাতত তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না। তবে, আদালতের নির্দেশের বিষয়ে বিধায়ক চন্দনা বাউরী কিংবা মামলাকারী কৃষ্ণ কুণ্ডুর স্ত্রীর রুম্পা কুণ্ডু কিছুই জানেন না বলে জানান। দু’জনকেই ফোন করা হলে তাঁরা বলেন, আদালতের শুনানির বিষয়ে কিছুই জানি না। পরে খোঁজ নিয়ে দেখবো।”
আরও পড়ুন- হুমকি দিচ্ছে বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউরি, রুম্পা কুণ্ডুর নিরাপত্তায় পুলিশ
গত ১৯ অগস্ট বিজেপি বিধায়কের গাড়ি চালকের কৃষ্ণ কুণ্ডুর স্ত্রী রূম্পা কুণ্ডু অভিযোগ করেন বাঁকুড়ার গঙ্গাজল ঘাঁটি থানায়। অভিযোগেতিনিজানান, চন্দনা বাউরির সঙ্গে তাঁর স্বামীর অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। এবং কৃষ্ণ কুণ্ডুর বিয়ে হয়েছে চন্দনার সঙ্গে। আপাতত কৃষ্ণ নিখোঁজ এবং তাঁর আলমারি থেকে অনেক কিছু খোয়া গিয়েছে।
গত ২৩ অগস্ট নোটিশ পৌঁছয় বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউরির কাছে। ২ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন চন্দনা। পরে তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষীকে হুমকির অভিযোগ আনে পুলিশ। এরপর আদালতে মামলা করেন বিধায়ক। বিচারপতি কৌশিক চন্দ তাঁর বিরুদ্ধে চলা একাধিক মামলায় আট সপ্তাহ স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।