কলকাতা: ১৮ সেপ্টেম্বর তৃণমূলে যোগ দিয়েই জানিয়েছিলেন সাংসদ পদ ছাড়তে চলেছেন। আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় সাংবাদিক স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, বিজেপির টিকিটে জেতা সাংসদ পদ ধরে রাখার ব্যাপারে তাঁর বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। স্পিকার সময় দিলেই পদত্যাগ করবেন। দলবদলের কয়েকদিনের মধ্যে দিল্লি উড়েও গেলেও স্পিকার সময় না দেওয়ায় কলকাতা ফিরে আসেন বাবুল।
স্পিকারকে চিঠি দিয়ে সময় চাইলেও সময় দেননি তিনি, এমনটাই দাবি আসানসোলের সাংসদের। একটি সাক্ষাৎকারে বাবুল জানিয়েছিলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর লোকসভার অধ্যক্ষের কাছে সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি। কবে সময় দেবেন, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ৭ দিন অপেক্ষা করলাম। সময় না পাওয়ায় কলকাতায় ফিরতে হচ্ছে। আবার সময় পেলে কলকাতা থেকে আসতে হবে।
আরও পড়ুন: চব্বিশের লোকসভা ভোটে মোদি বিরোধিতার অন্যতম মুখ মমতা: বাবুল
বাবুলের এই দাবির প্রেক্ষিতে সেই সময় স্পিকারের অফিস থেকে কিছু জানানো হয়নি। তবে গোটা বিষয়টি নতুন মাত্রা পায় শুক্রবার। লোকসভার সচিবালয়ের সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানায়, ‘পদত্যাগ ঘোষণার পর স্পিকারের সঙ্গে যোগাযোগই করেননি বাবুল সুপ্রিয়। ২ থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত দিল্লিতে থাকবেন স্পিকার। বাবুল সুপ্রিয় চাইলে সাক্ষাৎ করতে পারেন।’
এর পর আসানসোলের সাংসদ বাবুল পাল্টা টুইট করে জানান, তিনি সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও উত্তর পাননি। একটি সরকারি চিঠি টুইট করে বাবুল লেখেন, মাননীয় স্পিকারের কার্যালয়ে আমি সাক্ষাতের সময় চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। সেই চিঠির একটি প্রাপ্তিস্বীকারও করা হয়েছে। সাংসদ সৌগত রায়ও এই মর্মে একটি চিঠি দিয়েছেন বলে দাবি করেন বাবুল।
আরও পড়ুন: সময় দিলেন না অধ্যক্ষ, বুধের বদলে বৃহস্পতিতে ইস্তফা বাবুলের
প্রশ্ন উঠছে, বাবুল সাংসদ পদ ছাড়তে চাইলেও বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করার কারণ কী? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, দলত্যাগ করেই বাবুল লোকসভার সাংসদ পদ ছাড়ার বার্তা দেওয়ায় চাপে পড়ে গিয়েছেন কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী এবং তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। বাবুলের ইস্তফা গৃহীত হলেই এই দু’জনের সাংসদ পদ খারিয়ে চাপ বাড়াবে তৃণমূল। বিষয়টা আঁচ করতে পেরেই ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছেন স্পিকার।
With due respect to the High Office of Hon’ble Speaker Shri @ombirlakota I very humble present the official letter I sent on the 20th of Sept which also bears a ‘Received’ acknowledgment from Hon’ble Sir’s office•A separate request for the same ws made by Shri @SaugataRoyMP too https://t.co/8I88pSkV9U pic.twitter.com/4R6zQ962SI
— Babul Supriyo (@SuPriyoBabul) October 1, 2021
কাঁথি এবং তমলুকের দুই সাংসদ এ বার লোকসভার বাদল অধিবেশনে যোগ দেননি। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই তাঁদের গতিবিধি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে বিজেপি সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছিলেন তাঁরা। কাঁথিতে অমিত শাহের সভামঞ্চে শিশিরকে দেখা গিয়েছিল। আবার হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর একটি সরকারি কর্মসূচির মঞ্চে হাজির ছিলেন দিব্যেন্দু।
আরও পড়ুন: আসানসোলে বাবুলের ইস্তফার অপেক্ষা, শিশির-দিব্যেন্দুকে বিঁধতে চলেছে তৃণমূল
অমিতের সভায় যোগদানের ছবি দেখিয়ে শিশিরের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই লোকসভার স্পিকারকে চিঠি লিখেছে তৃণমূল। দিব্যেন্দুর বিরুদ্ধে তেমনটা করতে পারেনি রাজ্যের শাসকদল। দিব্যেন্দু অবশ্য বিজেপি ঘনিষ্ঠতার কথা মানতে চাননি। তিনি একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘আমি এবং বাবা (শিশির)— দু’জনেই তৃণমূলে আছেন। অন্য কোনও দলে যাননি। যাওয়ার প্রশ্নও নেই।’