কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ( Recruitment Scam) অন্যতম অভিযুক্ত শান্তনু (Shantanu Banerjee) ঘনিষ্ঠ অয়ন শীলের (Ayan Shil) বাড়ি থেকে উদ্ধার প্রায় ২০০টির বেশি ওএমআর শিট। শনিবার রাত থেকেই অয়নের সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালানো শুরু করেন ইডি (ED) আধিকারিকরা। রাতভর তল্লাশির পর রবিবার সকালে ইডির তরফে জানানো হয়, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা সম্বলিত কয়েকটি তালিকাও ছিল বলে জানা যায়। ছিল সম্পত্তি সংক্রান্ত বেশ কিছু নথিও। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কোনও সরকারি কর্তাব্যক্তি না হয়েও এক জন প্রোমোটারের অফিসে এই নথি এল কী ভাবে, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। এসএসসি দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পর সল্টলেকে প্রোমোটারের অফিসে লুকিয়ে রাখা হয় নথি, অনুমান গোয়েন্দাদের।
ইডি সূত্রে খবর, বিভিন্ন বছরের একাধিক চাকরিপ্রার্থীর ওএমআর শিট মিলেছে অয়নের অফিসে। অফিসের আলমারি, এমনকি জামাকাপড় রাখার জায়গা থেকেও একাধিক ডিজিটাল নথি মিলেছে বলে ইডি সূত্রে খবর। অয়ন শীলের সঙ্গে দুর্নীতির যোগাযোগ অত্যন্ত স্পষ্ট। তাঁর সল্টলেকের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নথিই তার প্রমাণ। সম্পত্তি সংক্রান্ত নথি খতিয়ে দেখেও শান্তনুর সঙ্গে যৌথভাবে কেনা বেশ কিছু সম্পত্তি মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। অয়ন শীলের সঙ্গে এখনও কোনও প্রভাবশালী নেতার যোগাযোগের প্রমাণ মেলেনি। তবে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ স্পষ্ট বলে দাবি ইডি আধিকারিকদের।
আরও পড়ুন:Rain Kolkata South North Bengal | কলকাতা সহ দুই বঙ্গে শুরু বৃষ্টি, বইছে ঝড়ে হাওয়া
নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) মামলায় শনিবার চুঁচুড়া থেকে আটক করা হয় অয়ন শীলকে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হাতে গ্রেফতার হওয়া শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই অয়ন শীলের হদিশ মেলে। প্রোমোটার থেকে প্রোডাকশন হাউস এবং পেট্রোল পাম্পের মালিক অয়ন। চুঁচুড়ার জগুদাস পাড়ায় শান্তনুর ফ্ল্যাটের প্রোমোটিং করেন তিনি। সল্টলেকের যে বাড়িতে হানা দিয়েছে ইডি সেখানেই রয়েছে তাঁর ছোটখাটো অফিস। সেখান থেকেই প্রোমোটিংয়ের কাজ-কারবার চালাতেন অয়ন । একইসঙ্গে তাঁর ফিল্ম প্রোডাকশন হাউস রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। সেটিও পরিচালনা করতেন এই অফিস থেকেই। এক বিখ্যাত পরিচালকের সঙ্গেও একটি সিনেমা করেন অয়ন শীল।
দীর্ঘ তিন বছর ধরে এই অয়ন শীল (Ayan Shil) এই বাড়িতে ভাড়া থাকেন। শনিবারই তাঁকে ইডির (ED) তরফ থেকে তলব করা হয়। কিন্তু তিনি ইডির কাছে হাজিরা দেননি। বাড়ির মালিক জানান, শনিবার সকালেই অয়ন বলেন ইডি নোটিশ দিয়ে তলব করেছে শনিবার। কিন্তু অয়ন বাড়ি ছেড়ে চলে যান হুগলির চুঁচুড়ায়। অয়নের স্ত্রী এবং ছেলে দিল্লিতে থাকেন। এই ভাড়া বাড়িতে অফিসের কিছু কর্মী থাকেন। বাড়ির পাশাপাশি অফিস হিসাবে এই ফ্ল্যাটটিকে ব্যবহার করেন অয়ন শীল। ইডির ছয় আধিকারিক-সহ শনিবার কেন্দ্রীয় বাহিনীও তল্লাশি করে।
ইডি সূত্রে খবর, ২০১৭ সালে চুঁচুড়া পিপুলপাতিতে একটা প্রজেক্ট করেন প্রোমোটার অয়ন শীল। ওই প্রজেক্টে চল্লিশটি ফ্ল্যাট ছিল। সেখানে অয়নের থেকে একটি ফ্ল্যাট কেনেন শান্তনু বন্দোপাধ্যায়। কিন্তু ফ্ল্যাট বিক্রি না হওয়াতে ওই প্রজেক্ট বন্ধ করে দেন অয়ন শীল। এই প্রজেক্ট লস হওয়াতে অয়ন প্রোমোটিং ছেড়ে দেন। এরপর সল্টলেকে এসে থাকতে শুরু করেন। শান্তনুর একাধিক হোটেল, রিসর্ট, প্রমোটিং এর মূল দায়িত্ব ছিল অয়ন শীলের কাঁধে। এদিন ব্যাঙ্কিং আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য নথি দেখতে চায় ইডি।