শেষ ওভারে ৭ রান চাই। জাদেজা প্রথম বলেই চালিয়ে দিতেই স্পিনার নওয়াজের বলে বোল্ড হলেন ( ২৯ বলে ৩৫ রান )। ৫ বল ৭ রান। দীনেশ কার্তিকের পালা। কিন্তু শেষ করলেন হার্দিক। ছয় হাঁকিয়ে। দুই বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটে জিতল ভারত। হার্দিক অপরাজিত থাকলেন ১৭ বলে ৪ টি বাউন্ডারি আর একটি উইনিং সিক্স দিয়ে ৩৮ রান করে।
https://twitter.com/kartikpatel5797/status/1563955762346397696?t=Ia6c6wySakl0z_MAUEn-ZQ&s=19
রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ভারত। প্রথম বলে কে এল রাহুল ব্যাটের কোনায় বল লাগিয়ে উইকেট ভেঙে পাকিস্তানের জোশ বাড়িয়ে দেন। এরপর রোহিত। টি টোয়েন্টিতে বিশ্বে তিনি সবচেয়ে অভিজ্ঞ। ১৩২ টি ম্যাচ খেলা হয়ে গেল। তিনিও পারলেন না , ম্যাচের নায়ক হতে। ১৮ টি বল নিয়ে নিলেন ১৪টি রান করতে। আর কোহলি?
এমন হাই ভোল্টেজ ম্যাচের ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে মনের জানলা – দরজা খুলে গুমোট ভাবটা কাটিয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন তিনি। সকলেই টের পায়, গত এক মাস কতো মানসিক যন্ত্রণার রাত দিন কাটিয়েছিলেন তিনি। তা না হলে, তাঁর মতো কেউ এক মাস ব্যাট না ছুঁয়ে থাকতে পারেন! জিম্বাবোয়ে সফরে না গিয়ে স্ত্রী – ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে ছুটিতে গিয়েছিলেন। ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন। ক্রিকেট তাঁকে ভুলে থাকতে পারেনি। দুবাইয়ে প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। প্রবল প্রতিপক্ষ। তাতে কি! তিনি বিরাট ব্যাটার কোহলি। চার – ছক্কা হাঁকিয়ে ৩৪ বলে ৩৫ করলেন ঠিকই, কিন্তু মন ভরে নি।
হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় ঠিক কাজটি করেছিলেন। লেফট হ্যান্ড ব্যাটার রবীন্দ্র জাদেজাকে চার নম্বরে পাঠিয়ে। ক্রিজে এরপর রাইট – লেফট হ্যান্ড কম্বিনেশন চালু ছিল। এটা বোলার আর ক্যাপ্টেনের কাছে চ্যালেঞ্জ। প্রতি বলে ফিল্ডিং চেঞ্জ করে যেতে হয়। স্কাইও ( সূর্য কুমার যাদব) পারেননি হাল ধরতে ( ১৮ বলে ১৮)। বোল্ড আউট হয়ে ফেরাটা পরের ব্যাটারদের চেপে ফেলে। হার্দিক এলেন। ১৪.২ ওভারে ভারত ৪ উইকেটে ৮৪। বাকি তখনও ষাট রানের বেশি।
মাঝে মোক্ষম সময় নাকচ হলে জাদেজার বিপক্ষে এল বি ডব্লিউ আউটের আবেদন। ১৩ বলে ২১ রান দরকার ভারতের। জাদেজা এই ম্যাচ অভিষেক হওয়া নাসিম শাহের বল লং অন দিয়ে মাঠের বাইরে ফেলেছেন। ১৯ তম ওভারে হার্দিকের পরপর দুই বলে দুটি চার। আর এক বল বাদে আবার চার। নিমেষে চাপ সরিয়ে নিয়ে গেল।
এর আগে ভারতকে ম্যাচ জিতে নিতে ১৪৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল পাকিস্তান। বিশ্ব ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচে মুখোমুখি ভারত ও পাকিস্তান। গ্রুপ ‘এ’-র এই ম্যাচে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ভারতীয় পেস বোলারদের আঁটোসাঁটো বোলিংয়ে রান তুলতেই বেসামাল হয়ে পরেছিল পাকিস্তানি ব্যাটাররা। ভারতের সামনে ছিল শেষ বার টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারের প্রতিশোধ নেওয়ার মোক্ষম সুযোগ।
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো করেনি পাকিস্তান। শুরুর পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৪৩রান তুলতেই দুই উইকেট খুইয়ে বসেছিল বাবর আজম ব্রিগেড।
দলের তারকা, ফর্মে থাকা , দলের নেতা বাবার আজমকে ১৫ রানে হারায়। প্রথম উইকেট যায় পাকিস্তানের। তৃতীয় ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারের বলে আর্শদ্বীপ সিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। বেশি সময় টিকতে পারেননি ফখর জামানও। ব্যক্তিগত ১০ রান করে আবেশ খানের শিকার হন তিনি।
টপ অর্ডারে নিজের দুই সঙ্গীকে দ্রুত হারিয়েও খেই হারাননি অন্যতম ওপেনার মহম্মদ রিজওয়ান। এক প্রান্ত আগলে রেখে দলের রানের গতি সচল রাখেন। বেশিক্ষণ থিতু থাকতে পারেননি, ব্যক্তিগত ৪৩ রানে ফেরেন তিনি।
হার্দিক পান্ডিয়ার দেওয়া বাউন্সারে ডিপ থার্ড ম্যান অঞ্চলে আবেশ খানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। এর আগে প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন ইফতিখার আহমেদ। তিনিও ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়ার শিকার।রিজওয়ানের পর হার্দিক পান্ডিয়ার শিকার হয়ে ফেরেন খুশদিল শাহ। এমনকি পাকিস্তানের লেট মিডল অর্ডারে অন্যতম ভরসা হয়ে থাকা আসিফ আলিও ব্যর্থ হন( ৯ রান)।
পাক দলে মহম্মদ রিজওয়ান-ইফতিখার আহমেদ ছাড়া আর কেউ নজরে পড়ার মতো কিছু করতে না পারায় ১৪৭ রানে থামে পাকিস্তানের ইনিংস। রিজওয়ানের ৪৩ ছাড়া ইফতিখারের ব্যাট থেকে এসেছে ২৮ রান। শেষ দিকে শাহনাজ দাহানি কিংবা নাসিম শাহরা চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ১৪৭ রানে বেশি এগুতে পারেনি পাকিস্তান।
ভারতের হয়ে ২৫ রানে তিন উইকেট শিকার করেন হার্দিক পান্ডিয়া। মূলত তার বোলিংয়ে ভেঙে পড়েছিল পাকিস্তানের মিডল অর্ডার।
বিগ ম্যাচ বোলার সেই ভুবি। ভুবনেশ্বর কুমার হ্যাটট্রিকের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ৪ উইকেট নিলেন ২৬ রানের বিনিময়ে। যোগ্য সঙ্গত দিলেন হার্দিক পান্ডিয়া ( ৪-০-২৫-৩)। আর বাঁ হাতি পেসার আর্শদ্বীপ ফিরিয়ে দেন মহম্মদ নাহওয়াজ আর শাহনাজ দাহানিকে।
https://twitter.com/HaseebkhanHk7/status/1563956381564248070?t=6G79iiDCF1Qwr3ZsurOr1w&s=19
ছবি: সৌ টুইটার।