নয়াদিল্লি: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের জনক ব্রিটিশ (British) রাজশক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম, মত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Union home minister Amit Shah)। শাহ বলেন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (Bankim Chandra Chattopadhyay) বন্দে মাতরম (Vande Mataram) কবিতা দেশবাসীর মনে যে স্বাধীনতার চেতনা গড়ে তুলেছিল, তার কি কোনও মূল্য নেই? একটি গ্রন্থ প্রকাশের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যে সশস্ত্র বিপ্লব (Armed Revolutions) শুরু হয়েছিল সেখান থেকেই কংগ্রেসের অহিংস আন্দোলনের (Non-violent Movement) সাফল্যের ভিত প্রস্তুত হয়েছিল। কেননা, তার অনেক পরে কংগ্রেস তো মাত্র ১৯৩০ সাল থেকে পূর্ণ স্বরাজের দাবি তুলেছিল।
তিনি আরও বলেন, দেশপ্রেমের যে আগুন লাখো মানুষের মনে জ্বলে উঠেছিল। যে আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন দেশপ্রেমিকরা। কিন্তু, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সেই সশস্ত্র বিপ্লব এবং তার বীর সেনানিদের আত্মবলিদানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: WHO: উজবেকিস্তানে কাশির সিরাপ খেয়ে ১৮ শিশুর মৃত্যু, ভারতীয় সংস্থার ওষুধকে নিষিদ্ধ করল হু
উল্লেখ্য, ইতিহাস বলে কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদন নীতির বিরোধিতা করে লালা লাজপত রায়, বাল গঙ্গাধর তিলক এবং বিপিনচন্দ্র পালের নেতৃত্বে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার এক আন্দোলন জেগে ওঠে দেশজুড়ে। বিশেষত বাংলা, পঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের ভিক্ষার রাজনীতির বিপরীতে রাজশক্তিকে বাহুবলে কেড়ে নেওয়ার উন্মাদনা গড়ে ওঠে। বাংলার অনুশীলন সমিতি যার মধ্যে অগ্রগণ্য।
মাস্টারদা সূর্য সেন, বাঘাযতীন, অরবিন্দ ঘোষ, বিনয়-বাদল-দীনেশ, ক্ষুদিরাম বসু, ভগৎ সিং থেকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারী নেতাজি পর্যন্ত সশস্ত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। গোটা বাংলা জুড়ে তখন ব্রিটিশদের দমন-পীড়নের শাসনের হাত থেকে রক্ষা করতে অস্ত্র প্রশিক্ষণ, শারীর গঠনের আলোড়ন সৃষ্টিকারী আন্দোলন জেগে ওঠে। বিভিন্ন কাব্য-সাহিত্যেও তার প্রতিফলন দেখা দেয়। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি পরোক্ষে সশস্ত্র আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন।
আরও পড়ুন: Delhi AAP: কেজরিওয়ালের পার্টিকে ১৬৩ কোটি টাকা জরিমানা করল তাঁরই সরকার!
বাংলার পাশাপাশি মহারাষ্ট্র ও পঞ্জাবেও সশস্ত্র বিপ্লবের আগুন জ্বলে ওঠে। তারও আগে বাংলার বারাকপুর থেকেই সর্বপ্রথম সিপাহি যুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু, ইতিহাসে তাকে বিদ্রোহ বলে উল্লেখ করা হতো কিছুদিন আগে পর্যন্ত। আধুনিককালের ঐতিহাসিক সুমিত সরকার, বিপন চন্দ্রের মতো নিরপেক্ষ মানসিকতার ঐতিহাসিকরা তাকে স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এহেন গর্বের ইতিহাস কংগ্রেস মনোভাবাপন্ন এবং ইংরেজ ঐতিহাসিকদের লেখায় চাপা পড়ে গিয়েছে বিস্মৃতির আড়ালে।
বুধবার অমিত শাহর বক্তব্যে কংগ্রেসের পরোক্ষে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনকে সহিংস আন্দোলনেরই পরবর্তী প্রজন্মের ফসল বলে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যালের লেখা, ‘রেভোলিউশনারিজ-দি আদার স্টোরি অফ হাউ ইন্ডিয়া ওন ইটস ফ্রিডম’ (Revolutionaries — The Other Story of How India Won Its Freedom) নামে গ্রন্থ প্রকাশ অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন শাহ। তিনি বলেন, এটা সত্য যে, ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে অহিংস আন্দোলনের তাৎপর্য ও অবদান রয়েছে। কিন্তু, এটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের গুরুত্বকে খাটো করা হয়েছে। অহিংস আন্দোলনের মাহাত্ম্য প্রমাণ করতে গিয়ে সশস্ত্র বিপ্লবীদের কর্মকাণ্ডকে বিচ্ছিন্ন, অসংগঠিত এবং ব্যক্তিগত সংগ্রাম বলে উল্লেখ করে প্রচারের চেষ্টা হয়েছে। এটা সত্যি নয়।
অমিত শাহ এর জন্য ইতিহাসের লেখকদের দায়ী করেছেন। এইসব ঐতিহাসিকরা জানেন না, ভগৎ সিংকে যেদিন ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল, সেদিন লাহোর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত প্রতিটি বাড়িতে অরন্ধন পালিত হয়েছিল প্রতিবাদে। অমিত শাহ না-জানলেও একইভাবে ক্ষুদিরামের ফাঁসির দিনও অবিভক্ত বাংলার প্রতিটি বাড়িতে হাঁড়ি চড়াননি মহিলারা।
অমিত শাহ বলেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য গদর পার্টির কি কোনও ভূমিকা নেই! মূলত কংগ্রেসকে নিশানা করলেও বিরোধী দলের নাম না করে অমিত শাহ বলেন, আমি একজন রাজনীতিক। তাই এর বেশি বললে সেগুলি রাজনৈতিক বিতর্কের কারণ হবে। তবে একটা সত্যি কথা হল, এইসব অজস্র বিপ্লবী দেশের ইতিহাসে তেমন একটা স্থান পাননি বা দেওয়া হয়নি।