হ্যাঁ, আবার আমাদের কাছে মানে কলকাতা টিভির কাছে নেমন্তন্ন এসে হাজির। বিজেপি এইভাবেই নেমন্তন্ন পাঠায়। মাঝরাতে গ্রেফতার কলকাতা টিভির সম্পাদক কৌস্তুভ রায়। হয় সামান্য মাথাটা নিচু করে সরকারের বিরোধিতা বন্ধ করুন, সামান্য কম্প্রোমাইজ করে মানুষের চোখে চোখ রেখে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে দিন, হোয়াটস অ্যাপ ইউনিভার্সিটিতে যে খবর পাচ্ছেন তাই ছেপে যান, তাই দেখান। দর্শকদের বলুন জওহরলাল থেকে এ তাবৎ যে প্রধানমন্ত্রীরা দেশ শাসন করেছেন তাঁরা হলেন চোর, অকর্মণ্য এবং তাদের নেতৃত্বেই দেশ গাড্ডায় গেছে, এবার এক যুগপুরুষ মোদিজির নেতৃত্বে দেশ বিশ্বগুরু হয়ে উঠছে। এসব সাতবাসি মিথ্যে বলে যান, আপনার বাড়ির দরজায় রাজ্যসভার আসন, মন্ত্রিত্ব, কমিটির মাথায় বসার সুযোগ এবং আরও কত কী। অন্তত আপনার দরজায় কড়া নাড়বে না ইডি, সিবিআই, বা অন্য কোনও ভিজিলেন্স অর্গানাইজেশন। সেই নেমন্তন্নের চিঠি আমাদের দফতরে আগেই এসেছে, সেই নেমন্তন্নের চিঠি আমাদের এডিটর কৌস্তুভ রায়কে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এত কিছু করার পরেও চতুর্থ স্তম্ভ বন্ধ হয়নি, উল্টে আরও নতুন অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। আমরা প্রতিটা জায়গায় ক্ষমতাকে প্রশ্ন করে চলেছি, রাজ্যে রাজ্য সরকারকে, দিল্লিতে মোদি সরকারকে। এই প্রশ্ন করাটা আমাদের কাজ, বদলে রক্তচক্ষু দেখাবেন? কোনও লাভ হবে না। বদলে রাজরোষে পড়তে হবে মানুষটিকে। কিন্তু সমস্যা হ্যাজ, সমস্যা আছে, ইডি সিবিআই জানে না যে আমাদের শিরদাঁড়া টিকাউ এবং তার একটাও বিকাউ নয়। ঠিক তাই আজ বিষয় আজকে হল, বিজেপি সরকারের একটাই দাওয়াই, বিরোধিতা করলেই ইডি আর সিবিআই।
দেশের হয়ে যাঁরা আন্তর্জাতিক খেলার আসর থেকে সোনা, রুপো, ব্রোঞ্জ নিয়ে এসেছেন, সেই মহিলা কুস্তিগিরেরা এক বিজেপি এমপি, ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে খুব নির্দিষ্টভাবে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন, আজ তাঁকে ইন্টেরিম বেল দেওয়া হল। বিলকিস বানোর ধর্ষণ আর দাঙ্গা লাগানোর ষড়যন্ত্রে শাস্তিপ্রাপ্তদের সাজা কমিয়ে জেল থেকে ছাড়া হল, তাদের ফুল মালা পরালেন বিজেপি বিধায়ক, মিষ্টি খাওয়ালেন। হাথরসে ধর্ষণ খুনে অভিযুক্তকে মালা পরিয়ে মিছিল করল বিজেপি। দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্য সভায় বললেন, এনসিপি ৭০ হাজার কোটি টাকার স্ক্যামের সঙ্গে যুক্ত, বললেন সেচ দফতরের স্ক্যামের কথা, বললেন সমবায় দফতরের ঘোটালার কথা। তারপরের দিনে সেই সব এনসিপি নেতারা যোগ দিলেন মহারাষ্টের সরকারে, তাঁদের ওই সেচ, ওই সমবায় শুধু নয় অর্থ দফতরের মন্ত্রী করা হল। ক’দিন আগেই বিজেপি নেতা মহারাষ্ট্র সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারের নাম করেই বলেছিলেন চাক্কি পিসিং পিসিং পিসিং। চাক্কির বদলে উনি হলেন আরেকজন উপমুখ্যমন্ত্রী, পেলেন অর্থ দফতরের ভার।
আরও পড়ুন: Aajke | পাঁচ মাসে এ বাংলার সরকার পড়ে যাবে?
হিমন্ত বিশ্বশর্মা, ছিলেন কংগ্রেসে, মন্ত্রী ছিলেন, বিজেপি এক বুকলেট ছেপে লিখেছিল এই হিমন্ত বিশ্বশর্মার যাবতীয় ঘোটালার কথা, কোটি কোটি টাকার ঘোটালা, আজ তিনি বিজেপি দলের অ্যাসেট, অসমের মুখ্যমন্ত্রী। উলটো ছবিটা হল এক সাংবাদিক, যিনি সংবাদ জোগাড়ের কাজে যাচ্ছিলেন উত্তরপ্রদেশের হাথরসে, তাঁকে জেলে পোরা হল। এক ছাত্রনেতা যিনি সংবিধান হাতে নিয়ে বিজেপির বিরোধিতায় রাস্তায় নেমেছিলেন, তিনি জেলে, জেলে উমর খালিদ, জেলে অধ্যাপিকা সোমা সেন, বিরোধিতা করলেই জেলে পোরা হবে, হ্যারাস করা হবে এটাই মোদি সরকারের মোডাস অপারেন্ডি, এইভাবেই মোদি-শাহের রাজত্বে গণতান্ত্রিক যাবতীয় অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের চ্যানেলের অফিসে ৪৮ ঘণ্টা রেইড চালিয়েছে এই ভিজেলেন্স, এডিটরের ঘরে, আমাদের অ্যাঙ্করদের ঘরে ৭২ ঘণ্টার রেইড চলেছে। কেন? কারণ আমরা বিরোধিতা করছি। গতকাল রাতে তারই পুনরাবৃত্তি, আমাদের এডিটরকে এক হাস্যকর অজুহাতে গ্রেফতার করেছে ইডি। না, একটা টাকাও সিজ হয়নি, একটা দলিলও না, কেবল অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার। এবং উদ্দেশ্য পরিষ্কার, বিরোধিতা থামাও। আমরা ক্ষমতাকে প্রশ্ন করবো, রাজ্যে মমতা সরকারকে, কেন্দ্রে মোদি সরকারকে প্রশ্ন করব। দেখাইনি আমরা তৃণমূলের গুন্ডার ব্যালট বক্স নিয়ে ছুটোছুটি? দেখাইনি ছাপ্পা ভোট দেওয়ার ছবি, হিংসা আর খুনের ছবি, লাশের ছবি? তার সঙ্গেই দেখিয়েছি সারা দেশের ছবি, মণিপুরের ছবি, দেশকে বিক্রি করে দেওয়ার বিরুদ্ধে বলেছি, কৃষকদের আন্দোলনের কথা দেখিয়েছি, দেখিয়েছি সিএএ এনআরসি-র বিরুদ্ধে আন্দোলনের ছবি। দিল্লির ক্ষমতাকেও প্রশ্ন করেছি, বেশি করে করেছি, কারণ আজ যারা দিল্লির সরকারে তারা দেশকে টুকরো টুকরো করতে চায়। এবং বলব, দেখাব। ভয় দেখাবেন না, ভয় আমরা পাচ্ছি না। আমরা মানুষকে জানিয়েছিলাম, আমাদের এডিটরকে হাস্যকর কারণ দেখিয়ে গ্রেফতার করে কলকাতা টিভিকে ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছে? আমাদের কী করা উচিত? মাথা নিচু করে মেনে নেওয়া, নাকি ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া উচিত? মানুষ কী বলেছেন শুনুন।
আজ বেঙ্গালুরুর মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একই কথা বললেন। বললেন, বিরোধিতা করলেই ইডি পাঠাচ্ছে, সিবিআই পাঠাচ্ছে, দেশের যাবতীয় প্রতিষ্ঠানকে কালিমালিপ্ত করছে এই সরকার। আজ বেঙ্গালুরুতে ২৬টা দল মিলে যে সংকল্পপত্র জারি করল, তাতেও একই কথা লেখা আছে। দেশের মানুষের পয়সায় চলা ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্সকে এইভাবে বিরোধীদের শায়েস্তা করার কাজে এর আগে কখনও নামতে দেখা যায়নি, এই অগণতান্ত্রিক কাজের বিরুদ্ধে দেশের ২৬টা রাজনৈতিক দল সোচ্চার হয়েছে, এটা আশার কথা। ইন্ডিয়া লড়ে যাবে এনডিএর বিরুদ্ধে।