বিজেপির তিনি কে? আমি অনুপম হাজরার কথা বলছি, কেউ কি জানে? বড় কথা হল, উনি নিজেই কি জানেন? ওঁর সম্প্রতি কিছু কথা নিয়ে একজন বিজেপির সিনিয়র মুখপাত্রকে প্রশ্ন করার পরে তিনি বলেছিলেন, আপনারাও পারেন, অনুপম কী বলছে তারও ব্যাখ্যা আমাকে করতে হবে? ওধারেও যোগাযোগ রাখছে আর মাঝেমধ্যে উল্টোপাল্টা বকছে, এসব নিয়ে কী বলব? তো সেই অনুপম হাজরা আবার বোমা ফাটিয়েছেন, বলেছেন পিছনে সিবিআই বা ইডি লাগলে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করুন, আমরা সামলে নেব। কথাটা বিরোধী তৃণমূল নেতা সমর্থকদের কানে গিয়েছে, তাঁরা হই হই করছেন, দেখেছ দেখেছ সেই ওয়াশিং মেশিনের তত্ত্ব যা আমরা বলেছিলাম ইত্যাদি ইত্যাদি। কথাটা মিডিয়ার কানে গিয়েছে, যাওয়া ইস্তক খিল্লি হচ্ছে। অবশ্য চোখে চোখ রাখা বাদাম ভাজাওয়ালাদের কানে গিয়েছে কিন্তু মর্মস্থলে প্রবেশ করেনি, ওঁরা নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হল যে কথাটা শুভেন্দু অধিকারীরও কানে গিয়েছে, যাওয়া ইস্তক খোকাবাবুর মুখ লাল, মেজাজ গরম। ভাবছেন এটাকে নিয়ে কী করবেন? আর এসব বলে সেই অনুপম হাজরা চুপ করে সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে বল গুনছেন, কারণ এসব বলার মানেই যে সবসময় সেটাই বলা নয়, এগুলোর পিছনে অন্য ইকুয়েশন আছে। ওই যে সিনিয়র লিডারের কথা মনে পড়ে গেল, উনি তো ওধারেও যোগাযোগ রাখছেন, খবর আছে। কেবল কি তাই, অনুপমের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে অনেকেই বলেন দাদা হতাশ, সামনের নির্বাচনে ৪-৫টা আসন পেলে হয়। অর্থাৎ এই ফিসফিসানি অনুপম শিবির থেকে ভাসছে। ওদিকে সৌমিত্র খান এদিকে অনুপম হাজরা, দুটো উইকেট পড়তে কত সময় নেবে তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই, সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, অনুপম হাজরা সম্ভবত আর দলে থাকতে চান না।
মমতা এবং কেষ্ট মোড়লের হাত মাথায় থাকায় এই ওয়ান্ডার বয়, প্রথমেই যখন এমপি হলেন, সেদিন দু’জনের সম্বন্ধে মমতাকে দলের বহু সিনিয়র, সাংবাদিকেরাও সাবধান করেছিলেন। অন্যজনের নাম এখানে আজ বলব না, আরেকজন হলেন এই অনুপম হাজরা, দু’জনকে নিয়েই অনেকেরই বক্তব্য ছিল এঁরা আনপ্রেডিক্টেবল, কখন যে কী করবেন, কী বলবেন, কোন খাতে বইবেন তা বুঝে ওঠা দেবতা, মানুষ বা অসুরের অসাধ্য। তো কিছুদিনের মধ্যেই এই দু’জনের ব্যাপারে যা যা বলা হয়েছিল সবটাই কেবল মমতাই নয়, বাংলার মানুষও বুঝেছে। অন্যজনের দলবদল সম্ভব ছিল না এবং তিনি জাতে মাতাল কিন্তু তালে সেয়ানা বলেই আছেন কিন্তু নেই গোছের হয়ে আছেন। অন্যজন মানে শ্রীমান অনুপম হাজরা দলবদল করলেন, হারলেন, আবার দাঁড়ালে আবার হারবেন, তারপরের বার দাঁড়ালে আবারও, যদি না তৃণমূলের টিকিট জোটে। কিন্তু সে পথ তিনিই বন্ধ করেছেন, এখন সে পথ খোলার চেষ্টাই চলছে, তাই মিশন বিব্রত করো হে।
আরও পড়ুন: Aajke | কমরেড সেলিমের যুক্তি তক্কো আর গল্প
এই মিশন বিব্রত করো হে-তে কেবল উনিই আছেন তাও নয়, আরও বেশ কিছু আছেন। নির্বাচন কাছে আসলে এই বিব্রত করো হে-র দলকে আরও চিহ্নিত করতে পারবেন, আপনারাই পারবেন, আমাকে বলে দিতে হবে না। ইলামবাজারে ভাষণ দিতে গিয়েছিলেন, বললেন কী, ইডি সিবিআই-এর ভয়ে যে তৃণমূল নেতাদের ঘুম হচ্ছে না আমাদের দলে আসুন, ঠিক করে দেব, সব ঠিক হয়ে যাবে। আরে বাবা এটাই তো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, বিজেপির এই ইডি সিবিআই অভিযান আসলে এক রাজনৈতিক পদক্ষেপ, আমাদের বিরোধিতা থামানোর জন্যই এসব চলছে, আমাদেরকে বলা হচ্ছে বিরোধিতা থামাতে, থামালে ইডি সিবিআইও আর নোটিস পাঠাবে না। বুঝুন সেই কথাটা আরও স্পষ্ট করে বললেন কে? বিজেপির নাকি জাতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা। মানুষের বুঝতে তো আর কষ্ট হবে না। এমনিতেই শুভেন্দু অধিকারী, হিমন্ত বিশ্বশর্মা, একনাথ শিন্ডে, অজিত পাওয়ার, প্রফুল্ল প্যাটেল থেকে ছগন ভুজবলদের নাম মানুষজন জেনে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চ থেকে যাদের ঘোটালাবাজ বললেন পরদিনেই তারা দলে চলে এল, ইডি সিবিআই তাদের হুমকি থামিয়ে দিল। এই কথাটা মমতা বলছেন, অভিষেক বলছেন, তৃণমূল দল বলছে, সারা দেশের বিরোধী নেতারা বলছেন, অনুপম হাজরা জনসভায় বলে দিলেন। আমরা আমদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, বিজেপির জাতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা বলেছেন যাদেরকে ইডি সিবিআই ডাকছে তাঁরা যদি ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাহলে উনি মানে ওঁর দল সবটা সামলে নেবে। এই একই কথাই তো মমতা অভিষেকও বলছেন যে ইডি সিবিআই দিয়ে বিরোধীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। অনুপম কি দলবদলের তালে আছেন? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।
অনুপম তৃণমূলে গেলেন না বিজেপিতে রইলেন তা নিয়ে একটা ফয়সলা হয়ে যাক, এটা বিজেপি অন্তত চায়, কারণ দলে থেকে দলের এমন ক্ষতি করতে থাকলে তো বিপদ। সামনের লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে বিজেপির সবথেকে বড় ইস্যু কী? তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতি। এবার তাদের দলের জাতীয় সম্পাদক যদি সাফ জানিয়ে দেন যে এটা রাজনৈতিক চাপ মাত্র, এধারে এলেই আর দুর্নীতি নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলা হবে না যেমনটা নাকি শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তোলা হয়নি বা হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে তোলা হয়নি, তাহলে তো তাদের দুর্নীতির ইস্যু গঙ্গার জলে ভেসে যাবে। এবং দলের অনেকের মত হল অনুপম এগুলো তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই করছে। আমরা জানি না তবে আর কিছুদিনের মধ্যেই নিশ্চয়ই সত্যিটা বের হবে।