নয়াদিল্লি: মহার্ঘভাতা (DA) কর্মীদের অধিকার না কি অধিকার নয়? সরকার দিতে বাধ্য না কি বাধ্য নয়? বকেয়া ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন – ধর্মঘটে যখন তোলপাড় রাজ্য, তখন এর আগে ডিএ মামলায় কী রায় দিয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত (Supreme Court) তা দেখে নেওয়া যাক-
বকেয়া ডিএর দাবিতে সোচ্চার সরকারি কর্মীদের (Government Employee) একাংশ। বিক্ষোভ (Agitation), ধর্মঘট সবই চলছে রাজ্যজুড়ে। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Mamata Banerjee) পাল্টা জানিয়ে দিয়েছেন ১২৫ শতাংশ ডিএ (125% DA) ইতিমধ্যেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে কর্মীদের। একইসঙ্গে অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনও দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমানুপাতিক হারে ডিএ কীভাবে দেওয়া সম্ভব রাজ্যের পক্ষে সেই প্রশ্নও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই পরিপ্রেক্ষিতে একটি প্রশ্ন রাজনৈতিক পরিসরে খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে সত্যিই কি ডিএ পাওয়া সরকারি কর্মীদের অধিকার? অধিকারের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে তার নৈতিকতা নির্ভর করে রয়েছে এই প্রশ্নের উত্তরের উপরেই। বিতর্ক চলছে। মামলা গড়িয়েছে আদালতে। তাই ডিএ পাওয়া এবং কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সমহারে পাওয়া রাজ্য সরকারি কর্মীদের মৌলিক অধিকার কি না তার উত্তরও মিলবে আদালতেই। তবে এই প্রসঙ্গে ফিরে দেখা যেতে পারে সুপ্রিম কোর্টে পুরনো দুটি মামলায় বিচারপতিদের দেওয়া রায়।
আরও পড়ুন: H3N2 Influenza Virus | অ্যাডিনো আতঙ্কের মধ্যেই নতুন উপদ্রব এইচ১এন১ এবং এইচ৩এন২
প্রথমে দেখা যাক মধ্যপ্রদেশ সরকারের (Madhyapradesh Government) বিরুদ্ধে করা মহার্ঘভাতা সংক্রান্ত একটি মামলার কী রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট-
সুপ্রিম কোর্টে মহার্ঘভাতা মামলা-১
১৩ মে ১৯৫৪। মধ্যপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মহার্ঘভাতা নিয়ে মামলা কর্মীর।
বিচারপতি নির্দেশনামায় জানিয়েছেন, মৌলিক অধিকারের ৪৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, স্থানীয় প্রশাসন এই ধরনের ভাতা কোনও কর্মীকে দিতেও পারেন, নাও দিতে পারেন। ভাতা দিলে সেক্ষেত্রে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে। সাংবিধানিক নিয়ম মেনে তাই প্রশাসনই ঠিক করেব কর্মীদের ভাতা দেওয়া হবে কি না। ভাতা দিলে তার শর্তও পরিমাণও ঠিক করে দেবে প্রশাসন। ভাতা পাওয়ার অধিকার কর্মীদের নেই, প্রশাসন দিতেও বাধ্য নয়। এই মামলায় অবশেষে মধ্যপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ করে দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। এবার দেখে নেওয়া যাক সুপ্রিম কোর্টের মহার্ঘভাতা সংক্রান্ত আরও একটি উল্লেখযোগ্য রায়।
সুপ্রিম কোর্টে মহার্ঘভাতা মামলা-২
৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৭। কর্নাটক সরকারের (Karnataka Government) বিরুদ্ধে মামলা।
এই মামলায় ১৯৫৪ সালে মধ্যপ্রদেশের মামলাটির রায়ের উল্লেখ করেন রাজ্যের পক্ষে আইনজীবী। আইনজীবী আবেদন জানান, ১৯৫৪ সালের মামলার রায় অনুযায়ী রাজ্য মহার্ঘভাতা দিতে বাধ্য নয়। তাই মহার্ঘভাতাকে বাধ্যতামূলক না করা হোক। বিচারপতি নির্দেশনামায় জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে মহার্ঘভাতাকে বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দেওয়া যাবে না। মহার্ঘভাতা দেওয়ার ক্ষমতা স্থানীয় প্রশাসনের হাতে। সেই ক্ষমতাকে নির্দেশিকা জারি করে খর্ব করা যাবে না।
এই মামলায় অবেশেষে কর্ণাটক সরকারের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ করে দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। ১৯৫৪ ও ২০০৭ সালের এই মামলা দুটির উল্লেখ করেই তাই অনেকে দাবি করেছেন মহার্ঘভাতা কর্মীদের অধিকার নয়। তাই অধিকারের নামে অন্যায় ও অনৈতিক আন্দোলন চলছে। যদিও এই বক্তব্যকে সমর্থন করতে নারাজ আন্দোলনকারীরা। আইনজীবী ধীরেন্দ্র নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, ডিএ রাজ্য সরকার দিতে বাধ্য নয়। আন্দোলনকারীদের আইনি কোনও অধিকার নেই ডিএ চাওয়ার। অন্যদিকে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য পাল্টা মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় পরিপ্রেক্ষিত পাল্টে গিয়েছে, দেশ অনেকে এগিয়ে গিয়েছে। আইন-কানুন অনেক পাল্টে গিয়েছে। এই সমস্ত বিবেচনা করে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ডিএ পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্য অধিকার বলে রায় দিয়েছে।
দেখুন ডিএ নিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ ভিডিয়ো –