নয়াদিল্লি: বিরোধী দলের নেতা বলেই ইডি (ED) দিল্লিতে ডেকে হেনস্থা করছে। প্রায় ৯ ঘণ্টা জেরার পর এভাবেই সুর চড়ালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তৃণমুলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের স্পষ্ট মন্তব্য, ‘আমি অন্য ধাঁচের মানুষ। শক্ত মনের মানুষ। আমার চোখে জল আসে না। আমি মাথা উঁচু করে বাঁচতে জানি।’ এর পরই সাংবাদিকদের উদ্দেশে অভিষেকের মন্তব্য, আপনারা অনেক্ষণ অপেক্ষা করছেন। ঘেমে গিয়েছেন। কিন্তু এতক্ষণ জেরার পরও আমার চোখে জল আসেনি।
সোমবার দু-দফায় সাড়ে ৮ ঘণ্টা জেরা করা হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কলকাতার ইডির পূর্ণাঙ্গ দফতর রয়েছে। তাও কেন বারবার দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হচ্ছে? এই প্রশ্ন তুলে অভিষেকের মন্তব্য, ভোট-সংসদ চলার সময় বিরোধী নেতাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতে এটা বিজেপির চক্রান্ত। রাজনৈতিকভাবে বিজেপি কিছু করতে পারছে না। তাই ইডি-সিবিআইয়ের মত এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী নেতাদের কণ্ঠস্বর বন্ধ করার চক্রান্ত চলছে।
আজ ইডি দফতর থেকে জেরার পর বেরিয়ে সরাসরি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধেও সুর চড়ান অভিষেক। তাঁর কটাক্ষ, ‘যাদের প্রকাশ্যে ভিডিয়ো ফুটেজে প্লাস্টিকে মুড়ে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের কিছু করা হচ্ছে না। গ্রেফতার তো দূরের কথা, একটিবার ডেকে জেরাও পর্যন্ত করা হয়নি। আসলে বিরোধী দলনেতা বিজেপির সদস্য। যারা বিজেপি করছেন, তাঁদের ইডি-সিবিআই ডাকছে না।’ এর পরই অভিষেকের প্রশ্ন, বিজেপি কি ওয়াশিং মেশিন? আজ যে নেতাদের ইডি-সিবিআই দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে, কাল তাঁরা বিজেপিতে যোগ দিলে আর কোনও রকম জেরার মুখে পড়ছেন না। শুভেন্দু সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে অভিষেকের আরও কটাক্ষ, সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন চিঠি লিখে শুভেন্দু সম্পর্কে অভিযোগের প্রমাণ দিয়েছেন। তাও কেন শুভেন্দুকে ডাকা হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: Coal Scam: কয়লা-গরু কেলেঙ্কারি আসলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কেলেঙ্কারি, সুর চড়ালেন অভিষেক
অভিষেকের দাবি, তিনি বিরোধী দলের নেতা। বাংলায় বিজেপি মানুষের রায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। গণতান্ত্রিকভাবে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইয়ে পেরে উঠছে না বিজেপি। সেকারণেই ইডি-সিবিআইকে কাজে লাগানোর চক্রান্ত করছে তারা। এদিন দু-দফার ম্যারাথন জেরার পর বেরিয়ে এসে অভিষেক জানিয়েছেন, আগেও ডাকা হয়েছিল। গিয়েছিলাম। ৯ ঘণ্টা জেরা করা হয়েছে। আজও জেরা করা হয়। সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আগামিদিন ডাকলে আবারও যাব। সব প্রশ্নের উত্তর দেব। এর পরই তিনি বলেন, বেশ কিছু কাগজপত্র ইডি আমার কাছে চেয়েছে। সেগুলি পাঠিয়ে দেব। কিছু প্রশ্ন করেছে। তার সঠিক উত্তর দিয়েছি।
নিজ লক্ষ্যে অবিচল থাকার দাবি জানিয়ে তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের মন্তব্য, ইডি-সিবিআই দিয়ে ভয় দেখানো যাবে না। মাথা নোয়াবো না। সবাই মেরুদণ্ডহীন নয়। আমি লক্ষ্যে অবিচল। আগেও বলেছি, আজও বলছি। দোষ করলে ইডি-সিবিআই, কোনও সংস্থা লাগবে না। হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে উঠে যাব।
আগামিদিনে ইডি ডাকলে আবার আসবেন। এ মন্তব্য করে অভিষেকের প্রশ্ন, কলকাতায় ইডির দফতর থাকার পরও এভাবে কেন ১৫০০ কিলোমিটার ডেকে আনা হচ্ছে। এটা হেনস্থা ছাড়া আর কী? আসলে তৃণমূল কংগ্রেস প্রসারে-প্রচারে দ্রুত গতিতে উঠে আসছে। ২১-এর ভোটে বিজেপি হেরেছে। ২৪-এও হারবে। গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের মত আরও কিছু রাজ্যে দ্রুত গতিতে শক্তিশালী হচ্ছে তৃণমূল। আর তাতেই ভয় পেয়েছে বিজেপি।
এই মুহূর্তে রাজনৈতিকভাবে বিজেপি কোণঠাসা। তৃণমূল প্রধান বিরোধী শক্তি। দেশের মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান কতছে। এই দাবি জানিয়ে অভিষেকের চ্যালেঞ্জ, গণতান্ত্রিকভাবে লড়াই করুন। আমি মাথা উঁচু করে লড়ব। কিন্তু বিজেপি বুঝে গিয়েছে, পারবে না। আমি তৃণমূল করি বলেই ডেকে পাঠাচ্ছে। কিন্তু মনে রাখবেন, আমি অন্য ধাঁচের মানুষ।