কলকাতা: প্রাথমিক শিক্ষা (Primary Education) সংক্রান্ত সমস্ত মামলার বিচার প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)-এর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Ganguly)-কে। এবার থেকে তিনি শ্রম এবং শিল্প সংক্রান্ত মামলা শুনবেন। মঙ্গলবারই হাইকোর্ট মামলার বিষয় পরিবর্তন করে।
প্রাথমিক নিয়োগ সংক্রান্ত যে সব মামলার শুনানি হত বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে, সেগুলি সরিয়ে নেওয়া হল। মঙ্গলবারই বেঞ্চ নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। মামলাগুলি শুনবেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।
আইনজীবী মহল মনে করছে, বিচারপতি সৌমেন সেনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণেই প্রাথমিকের মামলা থেকে সরানো হল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একাধিক রায়ের প্রেক্ষিতেই শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির জাল উন্মোচন হয়। তাঁর একাধিক রায়ের উপর বিভিন্ন সময়ে ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিতাদেশ দিয়েছে। আবার তাঁর নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার বিভিন্ন সময়ে সুপ্রিম কোর্টে গেছে। নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসার পর শিক্ষা সংক্রান্ত একাধিক মামলা শুনানি হয়েছে বিচারপচি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। স্কুল সার্ভিস কমিশন, প্রাথমিক নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক মামলা শুনেছেন তিনি। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পর তাঁর বেঞ্চ থেকে বেশ কয়েকটি মামলা সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: দুয়ারে সরকারে ডেড লাইন নবান্নের!
এদিকে, বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায়কে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তুলল আইনজীবীদের একাংশ। কলকাতা হাইকোর্টের ২৫৩ জন আইনজীবী প্রধান বিচারপতি টি এস শিভগননমকে চিঠি দিয়ে এই ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেছেন। তাঁদের মতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় গত ২৫ জানুয়ারি এজলাসে বসে অ্যাডভোকেট জেনারেলকে (এজি) যে সব কথা বলেছেন, তা মানহানিকর, অপমানজনক। এতে হাইকোর্টেরও অবমাননা হয়েছে। তাই বিচারপতিকে ক্ষমা চাইতে হবে এজির কাছে।
গত ২৫ জানুয়ারি মেডিক্যাল দুর্নীতির এক মামলার শুনানিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ডিভিশন বেঞ্চের এক বিচারপতি সৌমেন সেনের নাম করে বলেন, উনি রাজনৈতিক স্বার্থে রায় দিচ্ছেন। তিনি কিছু রাজনৈতিক নেতাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। কেন ওই বিচারপতিকে ইম্পিচ করা হবে না, সেই প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি। সেই সময় এজির সঙ্গেও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। তিনি এজিকে বলেন, কার পদলেহন করে আপনি দ্বিতীয়বারের জন্য এজি হয়েছেন, তা আমার জানা আছে। এজি বলেন, আপনাকে তো বিজেপি ভোটে টিকিট দিতে চেয়েছে। বিচারপতি অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় অবৈধ বলে ঘোষণা করে তাঁর পুরনো রায় বহাল রাখেন। রায়ে গোটা ঘটনা উল্লেখ করেন তিনি। সেই রায় হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২৭ জানুয়ারি ছুটির দিনেও পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে দুই বিচারপতির দ্বন্দ্ব নিয়ে শুনানি হয়। তার আগেই রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের বিরুদ্ধে আবেদন করে। ওই বেঞ্চ দুই বিচারপতিরই সমস্ত বিচার প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ দেয়। মঙ্গলবার হাইকোর্ট বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে প্রাথমিক শিক্ষার সমস্ত মামলা সরিয়ে দেয়। তাঁকে শ্রম এবং শিল্প সংক্রান্ত মামলা শুনতে বলা হয়েছে।
আরও খবর দেখুন